উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনজ্ঞ, সমাজসংস্কারক ও ইসলামি চিন্তাবিদ স্যার সৈয়দ আমীর আলী মাত্র ২৪ বছর বয়সে আ ক্রিটিক্যাল এক্সামিনেশন অব দ্য লাইফ অ্যান্ড টিচিংস অব মুহাম্মদ নামে ছোট্ট একটি বই রচনা করেন। বইটি ১৮৭৩ সালে প্রকাশিত হয়। পরে তিনি এর এতটাই পরিমার্জনা ও পরিবর্ধন করেন যে তা অনিবার্যভাবে নতুন বই হয়ে ওঠে। সেটির নাম হয় দ্য স্পিরিট অব ইসলাম। ১৮৯১ সালে বইটি বিলেত থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়ে ব্যাপক সাড়া জাগায়। এরপর ১৯২২ সালে সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। বইটির উপশিরোনাম দেওয়া হয়: ‘মহানবীর জীবনীসহ ইসলামের বিবর্তন ও আদর্শসমূহের ইতিহাস।’ তারপর থেকে বহুবার বইটির পুনর্মুদ্রণ হয়েছে।
প্রথম প্রকাশের পরই পাশ্চাত্য জগতে তথা ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে বইটি কতখানি আলোড়ন তুলেছিল তার একটি প্রতিফলন ঘটে জ্যুইশ কোয়ার্টারলি রিভিউতে। ১৮৯৩ সালে ১৯ পৃষ্ঠব্যাপী সেখানে একটি দীর্ঘ আলোচনা প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, ‘আমরা মুহাম্মদ ও ইসলাম সম্পর্কে চমৎকার অনেক কাজ দেখতে পাই। কিন্তু এগুলো সবই ইউরোপীয় পণ্ডিতদের রচনা। সে কারণেই একই ধরনের আরেকটি বই যখন একজন মুসলমানের কলম থেকে বেড়িয়ে আসে তখন তা বিশেষভাবে নজরে না এনে উপায় নেই। এই লেখক একাধারে আধুনিক ইউরোপীয় সংস্কৃতির সকল দিক সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত এবং অনুসন্ধানী প্রশ্নগুলো কীভাবে গুরুত্বসহকারে দেখতে হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সর্বোপরি নিজ দেশে তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের আইন কর্মকর্তা।’ এতে আরও বলা হয়েছে যে, একজন বিশ্বাসীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি মুহাম্মদ (সা.
বইটি শুরু হয়েছে প্রাক-ইসলাম যুগে ধর্মীয় বিকাশের নিরবচ্ছিন্নতার বিবরণ ও বিশ্লেষণ এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব ও ধর্মীয় বিকাশের আবশ্যকতা তুলে ধরার মাধ্যমে। এরপর প্রথম পর্বে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও কর্মসহ তাঁর ইন্তেকালের পর খিলাফত ও ইমামত নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ইসলামের আদর্শ ও ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্মবাণী; ইসলামে পরকালের ধারণা; ইসলামে অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম; ইসলামে নারীর মর্যাদা ও দাসপ্রথা; ইসলামের রাজনৈতিক দল ও উপদলসমূহ; ইসলামের সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক মর্মবাণী; ইসলামের দার্শনিক মর্মবাণী; ইসলামের ভাববাদী ও মরমিবাদী ধারণা আলোচনা করা হয়েছে।
১৯২২ সালের সংশোধিত সংস্করণের মুখবন্ধে লেখক বলেছেন: “একটি বৈশ্বিক ধর্ম হিসেবে আমি ইসলামের বিবর্তনের একটি ইতিহাস এখানে তুলে ধরতে চেয়েছি, বিবৃত করতে চেয়েছি অল্প সময়ের পরিসরে এর দ্রুত বিস্তার লাভ ও লাখ লাখ মানুষের মননে ও চৈতন্যের ওপর এর উল্লেখযোগ্য প্রভাবকে। মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে ইসলাম যে স্পন্দন জাগিয়েছে, তা সাধারণভাবে স্বীকৃত হলেও মানবতার উৎকর্ষ সাধনে এর মহৎ অবদান হয় উপেক্ষিত, না হয় অসামদৃত। একইভাবে এর যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা, আদর্শ এবং আকাঙ্ক্ষাকে সম্যকভাবে উপলব্ধি করা যায়নি। আমি তাই চেষ্টা করেছি ধর্মের ইতিহাসে ইসলামের সত্যিকারের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করতে।”
বাংলায় বইটির একাধিক অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে।
দ্য স্পিরিট অব ইসলাম; স্যার সৈয়দ আমীর আলী; ক্রিস্টোফারস, লন্ডন, ১৯২২
আরও পড়ুনহজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনা–জীবন০২ ডিসেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস য়োসা আর নেই
নোবেলজয়ী কালজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস য়োসা আর নেই। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাজধানী লিমায় ৮৯ বছর বয়সে মারা যান পেরুর এই লেখক। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিকের প্রয়াণের মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের সোনালি যুগের প্রজন্মের অবসান হলো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে য়োসার বড় ছেলে আলভারো বার্গাস য়োসা লেখেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের বাবা মারিও বার্গাস য়োসা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন। পরিবারের সদস্যরা এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন।’ এক্সে পোস্ট করা এ ঘোষণায় সই করেছেন আলভারোর দুই সহোদর গোনসালো ও মরগানা বার্গাস য়োসা।
১৯৩৬ সালে দক্ষিণ পেরুর অ্যারিকুইপায় মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মারিও বার্গাস য়োসার জন্ম। ২০১০ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত য়োসা লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন। স্প্যানিশ ভাষার এই ঔপন্যাসিক স্পেনেরও নাগরিক।
১৯৬০ ও ’৭০–এর দশকে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের বিস্ময়কর উত্থানের সময়কার কালজয়ী লেখকদের একজন য়োসা। ওই সময়ের কালজয়ী সাহিত্যিকদের মধ্যে রয়েছেন কলম্বিয়ার গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ও আর্জেন্টিনার হুলিও কোর্তাসার।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে য়োসার স্বাস্থ্যের অবনতির খবর ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। গত অক্টোবরে তাঁর ছেলে আলভারো বলেন, তাঁর বয়স ৯০ বছর ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে এসে সবারই কাজের মাত্রা কিছুটা কমাতে হবে।
নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিকের মৃত্যুতে সোমবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে পেরু। এ সময় সরকারি ভবন ও স্থাপনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
য়োসার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য টাইম অব দ্য হিরো’, ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার’, ‘দ্য গ্রিন হাউস’, ‘ডেথ ইন দ্য আন্দিজ’, ‘দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘দ্য ফিস্ট অব দ্য গোট’। প্রায় ৩০টি ভাষায় তাঁর লেখা অনূদিত হয়েছে।
লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের সোনালি যুগের লেখক মারিও বার্গাস য়োসা