কুমিল্লা বিসিকে সেমাই তৈরির ধুম, চাহিদাও বাড়তি
Published: 22nd, March 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদে মানুষের অপরিহার্য অনুষঙ্গ সেমাই। প্রতিবছর রমজান এলেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় সেমাই তৈরির কারিগরদের। চার দশকের বেশি সময় ধরে কুমিল্লার আশোকতলার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরীর কয়েকটি কারখানায় সেমাই উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এবারও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সেমাই তৈরির ধুম লেগেছে কুমিল্লা বিসিকের ছয় কারখানায়। এসব কারখানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদ সামনে রেখে সেমাইয়ের চাহিদা বেড়েছে। তাই উৎপাদনও বাড়ানো হয়েছে।
কুমিল্লা বিসিক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সেমাইয়ের কারখানাগুলোতে রাসায়নিক ও কৃত্রিম রং ছাড়া সেমাই উৎপাদন করা হচ্ছে। এ ছাড়া দামে কম ও মানে ভালো হওয়ায় বাজারে এই সেমাইয়ের চাহিদা বেশি। কুমিল্লা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে এই সেমাই।
সরেজমিনে বিসিকের সেমাই কারখানায় গিয়ে জানা যায়, এসব কারখানায় বাংলা ও লাচ্ছা দুই ধরনের সেমাই তৈরি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি তৈরি হচ্ছে বাংলা চিকন সেমাই। বিসিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেমাই তৈরি করছে কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলস ও খন্দকার ফুড কারখানা। এ ছাড়া রিয়াজ ফ্লাওয়ার মিলস, মক্কা কনজ্যুমার অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টসসহ আরও কয়েকটি কারখানায়ও সেমাই উৎপাদিত হচ্ছে।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার বিসিক শিল্পনগরীর ৪ নম্বর প্লটে থাকা কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল সেমাই তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা। প্রথমে মেশিনে নানা উপকরণ মিশিয়ে ময়দা দিয়ে সেমাই তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়। পরে উৎপাদিত কাঁচা সেমাই শুকানো হয় কারখানা ছাদে। ভালোভাবে শুকানোর পর এই সেমাই লাকড়ির চুলায় ভাজা হয়। এরপর নারী শ্রমিকেরা এসব সেমাই হাতে প্যাকেট করছেন। এরপর ২৪টি প্যাকেট একেকটি কার্টনে ঢোকানো হয়। ২০০ গ্রাম করে ২৪ প্যাকেটের প্রতি কার্টন সেমাই কারখানা থেকে বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসের নারী শ্রমিক সুমাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে উৎপাদিত সেমাই আমরা দ্রুত প্যাকেটজাত করছি। ঘণ্টায় তিনজন শ্রমিক ২০০ থেকে ৩০০ সেমাইয়ের প্যাকেট প্রস্তুত করতে পারেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই কাজ করার চেষ্টা করি আমরা।’
তিন বছরের বেশি সময় ধরে ওই কারখানায় লাকড়ির চুলায় সেমাই ভাজার কাজ করছেন শ্রমিক ফজলে রাব্বী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লাকড়ির আগুনে সেমাই ভাজা হলে তার স্বাদ ভালো থাকে। তাই আমরা সব সময় লাকড়ির আগুনে সেমাই ভাজি। ঈদের অল্প কয়েক দিন বাকি, এ জন্য এখন ব্যস্ততা বেশি। রোজার শুরুর আগে থেকেই এই ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা মো.
কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসের পরিচালক সৈয়দ ইবনুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সারা বছর সেমাই উৎপাদন করি না। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ সামনে রেখে চিকন বাংলা সেমাই উৎপাদন করছি। মূলত রমজানের এক থেকে দেড় মাস আগে থেকে সেমাই তৈরির কাজ শুরু হয়। সেমাই তৈরিতে কোনো রাসায়নিক বা রং ব্যবহার করা হয় না। প্রায় চার দশক ধরে গুণগত মান বজায় রেখে সেমাইয়ের ব্যবসা করছি। সীমিত লাভে এই সেমাই বিক্রি করা হয়। যাতে নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।’
সৈয়দ ইবনুল কাদের জানান, তাঁদের কারখানায় উৎপাদিত বাংলা সেমাই আল-নুর, কুলসুম নামে এবং লাচ্ছা সেমাই তানিন নামে বাজারজাত করা হয়।
বিসিকের একটি কারখানা থেকে সেমাই কিনতে আসা লাকসামের পাইকারি ব্যবসায়ী আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর ধরে তিনি বিসিকের কারখানা থেকে সরাসরি সেমাই কিনছেন। দাম কমের পাশাপাশি মানও ভালো। এ কারণে চাহিদাও রয়েছে বাজারে।
কুমিল্লা বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক মো.মুনতাসীর মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিসিকের কারখানায় উৎপাদিত সেমাইয়ের সুনাম কুমিল্লা ও আশপাশের এলাকায়। এখানকার কারখানায় সেমাই তৈরিতে রাসায়নিক ও রং ব্যবহার করা হয় না। আমরা প্রতিনিয়ত তদারকির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করছি। এ কারণে এখানকার উৎপাদিত সেমাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। আশা করছি একদিন রপ্তানিও হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উৎপ দ ত স ম ই স ম ই উৎপ দ প রথম আল ক এই স ম ই
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদ সামনে রেখে সেমাইয়ের কারখানায় ব্যস্ততা
সারা বছরই দেশে সেমাই উৎপাদন ও বিক্রি হয়। ঈদুল ফিতরের সময় উৎপাদন আর বিক্রি বছরের বাকি ১১ মাসকে ছাপিয়ে যায়। দেশের অনেক জেলাতেই সেমাই উৎপাদন হয়। কিশোরগঞ্জে বিসিক শিল্পনগরীর কারখানায় সেমাই উৎপাদন করছে ‘এমএম খান ফুড প্রডাক্টস’ নামে একটি ফাস্টফুড প্রতিষ্ঠান। ঈদে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে তিন টন সেমাই উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল বুধবার সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের বিসিক শিল্পনগরীতে গিয়ে দেখা গেছে, এমএম খান ফুড প্রডাক্টসের কারখানায় সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। একদল কর্মী মেশিনে সেমাইয়ের ‘খামির’ তৈরি করছেন। কিছু কর্মী খামির দিয়ে কাঁচা সেমাই তৈরি করছেন। একদল কর্মী তেলে সেমাই ভাজছেন। কয়েকজন সেই ভাজা সেমাই প্যাকেটজাত করছেন। ম্যাকের কারখানায় সেমাই ছাড়াও বিস্কুট, পাউরুটি, স্যান্ডউইচ, কেক, চানাচুরসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হয়। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত কারখানার শ্রমিকরা।
কারখানার কর্মীদের কাজের তদারক করেন আব্দুল আউয়াল। তিনি জানালেন, ময়দা, ডালডা আর তেল দিয়েই মূলত সেমাই তৈরি করা হয়। ম্যাকের কারখানায় লাচ্ছা সেমাই আর বাংলা লাচ্ছা সেমাই তৈরি করা হয়। কারখানার শ্রমিকরা যেন পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন সেদিকে তিনি কঠোরভাবে নজর রাখেন। প্রত্যেক কর্মী মাথা ঢেকে, মাস্ক আর হ্যান্ড গ্লোভস পরে কাজ করেন। আব্দুল আউয়াল বলেন, তাদের কারখানায় লাচ্ছা সেমাই আর বাংলা লাচ্ছা সেমাই তৈরি করা হয়। ২০০ গ্রাম বাংলা লাচ্ছার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা, আর ২০০ গ্রাম লাচ্ছা সেমাইয়ের খুচরা মূল্য ৪০ টাকা।
শহরের স্টেশন রোডের নিয়ামত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক মিজানুর রহমান শাহীন জানান, তারা এতদিন পাকিস্তানের কুলসন সেমাই বিক্রি করতেন। এখন কুলসনের পাশাপাশি স্থানীয় এমএম খান ফুড প্রডাক্টসের সেমাই বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের কাছে এর বেশ চাহিদাও রয়েছে।
এমএম খান ফুড প্রডাক্টস কারখানার ব্যবস্থাপক সুদীপ বিশ্বাস জানালেন, তারা সারাবছরই সেমাই উৎপাদন করেন। তবে দুই ঈদে বাজারে চাহিদা থাকায় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের সময় সর্বোচ্চ পরিমাণ সেমাই উৎপাদন হয়। তাদের কারখানা থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার চাহিদা মিটিয়ে ময়মনসিংহেও সেমাই সরবরাহ করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে সেমাই বিক্রিতে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয় তাদের। এ কারণে ম্যাকের কারখানায় উৎপাদিত সেমাইয়ে স্বাদ ও গুণগত মানের দিকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।