আলমাদার গোলে উগুরুয়ের মাঠে আর্জেন্টিনার জয়
Published: 22nd, March 2025 GMT
লিওনেল মেসি ও লওতারো মার্টিনেজের অনুপস্থিতিতে আর্জেন্টিনার শুরুর একাদশ নিয়েই ধোঁয়াশা ছিল। ফ্রন্ট লাইনে হুলিয়ান আলভারেজের নাম নিশ্চিত ছিল। তবে থিয়াগো আলমাদা ও জিওভান্নি সিমিওনে শুরুর একাদশে অবধারিত ছিলেন না। উরুগুয়ের মাঠে তাদের দিয়ে ম্যাচ শুরু করিয়েই বাজিমাত করেছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি।
শনিবার সকালে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উরুগুয়ের সেন্তেনারিওতে ১-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা। গোল করেন ধারে ফ্রান্সের ক্লাব লিঁওতে খেলা ২৩ বছর বয়সী তরুণ থিয়াগো আলমাদা। ১১ নম্বর জার্সি পরিহিত এই তরুণ ম্যাচের ৬৮ মিনিটে একমাত্র গোলটি করেন।
ম্যাচে আর্জেন্টিনা একটি দুঃসংবাদও পেয়েছে। ম্যাচের যোগ করা সময়ে বদলি নামা উইঙ্গার নিকোলাস গঞ্জালেস লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ব্রাজিলের বিপক্ষে ২৬ মার্চ সকালের ম্যাচে তিনি খেলতে পারবেন না।
উরুগুয়ের ডাগআউটে অভিজ্ঞ আর্জেন্টাইন কোচ মার্সেলোনা বিয়েলসা থাকায় আলবিসেলেস্তেদের জন্য একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল। তিনি উরুগুয়ের ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে প্রথাগত পজিশন প্লেয়িং পছন্দ করেন। বল ধরে রাখার ওই লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল বিয়েলসার উরুগুয়ে। সঠিক পাস দেওয়ার ক্ষেত্রেও।
তবে ঘরের মাঠে খেলা উরুগুয়ের ৬ শটের বিপরীতে গোলে ১২ শট নিয়েছে আর্জেন্টিনা। উরুগুয়ে যেখানে মাত্র ২টি শট পোস্টে রাখতে পেরেছিল আর্জেন্টিনা রেখেছিল ৪টা। খুব বেশি বিপদ ছাড়াই তাই উরুগুয়ে জয় করেছেন আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনি। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১৩ রাউন্ড শেষে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে। দুইয়ে থাকা ইকুয়েডর ২২ ও তিনে থাকা ব্রাজিল ২১ পয়েন্ট তুলেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ বক প ব ছ ই আর জ ন ট ন ফ টবল আর জ ন ট ন
এছাড়াও পড়ুন:
সবাই ভয়ে পালিয়েছে, ভারতের নন্দনগরে এক মুসলিম পরিবারের টিকে থাকার লড়াই
নন্দাকিনী নদীর তীরে রোজ সকাল আটটায় নিজের ড্রাই ক্লিনিংয়ের দোকানের বাদামি শাটার খুলে কাজ শুরু করেন আহমেদ হাসান। উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখন্ড রাজ্যের নন্দনগরে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
সকালে দোকান খুলে নিত্যদিনের কাজ শুরু করেন হাসান। শুকনো পদ্ধতিতে পরিষ্কার (ড্রাই ক্লিনড) করা কাপড় নিজের দোকানের গোলাপি দেয়ালের প্লাস্টিক কভারে সুচারুভাবে ঝুলিয়ে রাখেন। এরপর ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন গ্রাহক হাসানের কাছে আসতেন। শেরওয়ানি, স্যুট, কোট, প্যান্ট এবং শীতকালীন পোশাক তাঁর কাছে পরিষ্কার করতে দিতেন। কোনো কোনো গ্রাহক তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতেন। চা খেতে খেতে রাজনীতি নিয়ে আলাপ ও মজা করতেন, হাসি–আনন্দ ও সুখ-দুঃখ বিনিময় করতেন। গ্রাহকদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু, অল্প কিছু ছিলেন মুসলিম।
কিন্তু ১২ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনেরও কম হিন্দু গ্রাহক হাসানের দোকানে এসেছেন। তিনি জানান, কোনো মুসলিম গ্রাহকের আশায় থাকা বৃথা। এ সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।
নন্দনগরে এখন হাসানই একমাত্র মুসলিম পুরুষ। অথচ এই শহরে কয়েক মাস আগেও ১৫টি মুসলিম পরিবার ছিল, যারা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছিল। হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। প্রতিবেশী হিন্দুদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পূজা-পার্বণে হিন্দুরা তাঁদের নিমন্ত্রণ করতেন। আর ঈদের সময় হিন্দু প্রতিবেশীদের তাঁরা দাওয়াত দিতেন। প্রতিবেশী হিন্দু মারা গেলে শবদাহের জন্য তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন, হিন্দু বন্ধুদের মরদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশানে নিয়ে গেছেন।
কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে এই এলাকায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতা শুরুর পর এ সবকিছু রাতারাতি বদলে গেছে। এক হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এ সহিংসতা শুরু হয়েছিল। তবে নন্দনগরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন–মানসিকতায় আরও আগে থেকেই বড় পরিবর্তন সূচনা হয়েছিল, যা করোনাকাল থেকে খেয়াল করে আসছিলেন হাসান।
গত সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারীরিক হামলার আগে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ঘৃণামূলক স্লোগান দেওয়া হতো। মুসলিমবিরোধী কিছু বিক্ষোভও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা রাতের আঁধারে নন্দনগর ছেড়ে পালিয়ে যান।
হাসানও পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ছোট্ট শহর আবার মুসলিমদের বসবাসের উপযোগী করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ, এটাই তাঁদের জন্মভূমি। কিন্তু হাসানের পরিবারকে সেখানে এখনো ভয়ে ভয়েই থাকতে হচ্ছে।
হিন্দু প্রতিবেশীরা এখন হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন না। আগে তিনি সন্ধ্যায় নিয়মিত নন্দাকিনী নদীর তীরে হাঁটতে গেলেও এখন যান না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেন না। তাঁর আশঙ্কা, আবারও সহিংসতা দেখা দিতে পারে।
হাসান বলেন, ‘আমি সোজা দোকানে যাই, দোকান থেকে বাসায় আসি। সারাটি জীবন এই শহরে কাটালেও নিজেকে আমার এখন ভূত বলে মনে হয়। আমি যেন সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এমনকি কেউ আমার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলছেন না।’
‘মুসলিমদের জুতা দিয়ে পেটাও’
রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গাড়িতে করে নন্দনগর যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি স্থানের এই শহরটি নন্দাকিনীর কয়েকটি উপনদীর সংগমস্থলে অবস্থিত। গঙ্গার ছয়টি উপনদীর একটি হলো নন্দাকিনী, যাকে হিন্দুরা পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
হাসানের দাদা পার্শ্ববর্তী উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজনৌর জেলার নাজিবাবাদ শহর থেকে ১৯৭৫ সালে নন্দনগরে এসেছিলেন। তাঁদের পরিবার সেখানেই বসতি গড়ে। পরের বছর হাসানের জন্ম হয়।
এক মুসলমান নরসুন্দরের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলে হাসান ও নন্দনগরের অন্য মুসলমানরাও অংশ নিয়েছিলেন