ভারতের পোশাকের আমদানি কমেছে, বেড়েছে পাকিস্তানের
Published: 22nd, March 2025 GMT
ঈদের বাজারে পোশাক বেচাকেনা এখন তুঙ্গে। বাজারে দেশীয় পোশাকের প্রাধান্যই বেশি। গত এক দশকে দেশের বড় উদ্যোক্তারাও পোশাকের নিজস্ব ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছেন। তবু ক্রেতাদের চাহিদার কারণে ঈদের আগে প্রতিবছর ভারত ও পাকিস্তান থেকে তৈরি পোশাকের আমদানি বাড়ে।
ঈদের বাজারে যেভাবে দোকানে দোকানে ভারত–পাকিস্তানের পোশাক বেচাকেনা হয়, সে তুলনায় বৈধপথে আমদানি খুবই কম। মূলত ভারত থেকে অবৈধপথে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক আমদানি হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে লাগেজে করে তৈরি পোশাক আসছে।
অবৈধপথে পোশাক আমদানির সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও বৈধপথে পোশাক আমদানির সঠিক হিসাব পাওয়া যায়। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশ দুটি থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করে থাকে। আবার রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্যাম্পল বা নমুনা হিসেবেও পোশাক আমদানি করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, গত তিন মাসে (ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি) ভারত ও পাকিস্তান থেকে ২২ লাখ ৩৫ হাজার পিস পোশাক আমদানি হয়েছে। গত রোজার আগে একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২৬ লাখ পিস পোশাক।
ভারত থেকে কী আসছে
ভারত থেকে গত তিন মাসে ১৩ লাখ ২৯ হাজার পিস পোশাক আমদানি হয়েছে। এসব পোশাকের শুল্কায়িত মূল্য ৪৫ কোটি টাকা। গত রোজার আগে একই সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ পিস কম।
আমদানি হওয়া এসব পোশাকের মধ্যে থ্রি–পিস আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার পিস। গত রোজার আগে একই সময়ে থ্রি–পিস আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার পিস। এবার প্রতি পিসের গড় আমদানি মূল্য ৩ দশমিক ০৮ ডলার বা ৩৭৭ টাকা। গড়ে প্রতি পিসের শুল্ক–কর ৭২৮ টাকা। এ হিসাবে প্রতি পিসের দাম পড়ছে ১ হাজার ১০৫ টাকা।
সবচেয়ে ভালো মানের থ্রি–পিস আমদানি হয়েছে ১২ ডলার বা ১ হাজার ৪৬৪ টাকায়। শুল্ক–কর ১ হাজার ৯২৫ টাকা। সব মিলিয়ে উন্নত মানের থ্রি–পিসের আমদানি মূল্য ৩ হাজার ৩৮৯ টাকা। সবচেয়ে সাধারণ মানের থ্রি–পিসের আমদানি মূল্য পড়েছে শুল্ক–করসহ ৭৩১ টাকা।
ভারত থেকে লেহেঙ্গা আমদানিও কমেছে এবার। এবার ৫ হাজার ২৯৭ পিস লেহেঙ্গা আমদানি হয়েছে। আমদানি মূল্য গড়ে ১৭ ডলার। প্রতি পিসের গড় শুল্ক–কর ৪ হাজার ৩৩২ টাকা। তাতে প্রতি পিসের আমদানি খরচ পড়েছে ৬ হাজার ৪০৬ টাকা।
ভারত থেকে এবার শাড়ি আমদানি বেড়েছে। গত ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারিতে শাড়ি আমদানি হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার পিস। গতবার আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ১৮ হাজার পিস। ভারত থেকে পাঞ্জাবি আমদানি গতবারের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে। মেয়েদের পোশাক আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার পিস, শিশুদের ৪ লাখ ৬১ হাজার পিস।
পাকিস্তানি থ্রি–পিস বেশি
পাকিস্তান থেকে এবার তিন মাসে প্রায় ৯ লাখ পিস পোশাক আমদানি হয়েছে। শুল্কায়ন মূল্য হিসাবে তা ৫২ কোটি টাকা। গতবারের তুলনায় পাকিস্তান থেকে পোশাক আমদানি বেড়েছে প্রায় ৯২ হাজার পিস।
পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া পোশাকের ৯৭ শতাংশই মেয়েদের পোশাক থ্রি–পিস, টু–পিস ও ওয়ান–পিস। গত তিন মাসে (ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি) দেশটি থেকে থ্রি–পিস আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৩৫ হাজার পিস। টু–পিস ও ওয়ান–পিস আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার পিস।
থ্রি–পিস আমদানিতে ব্যবসায়ীরা ১ থেকে ১০ ডলার মূল্য ঘোষণা করেছেন। তবে কাস্টমস বলছে, এই দর অবিশ্বাস্য। এ জন্য তিন–চার গুণ বেশি দর ধরে শুল্কায়ন করেছে কাস্টমস। যেমন এক ডলারে আনা পোশাকের শুল্কায়ন করা হয়েছে চার ডলারে। তাতে প্রতি পিস থ্রি–পিসের শুল্ক–কর নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩১ টাকা।
পাকিস্তান থেকে ছেলেদের পোশাক হিসাবে আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ১৩৯ পিস পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবি আমদানি হয়েছে ৩ থেকে ১০ ডলারে।
তৈরি পোশাকের বাইরেও পাকিস্তান থেকে কাপড় আমদানি হচ্ছে। তবে বেশির ভাগই আমদানি করছে পোশাক রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠানগুলো। বাণিজ্যিকভাবেও কাপড় আমদানি হচ্ছে। তবে পরিমাণে কম। ব্যবসায়ীরা জানান, বৈধপথের বাইরে পাকিস্তান থেকেও অবৈধভাবে পোশাক আসছে।
অবৈধ পথে আমদানি
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। এ দেশের তৈরি পোশাক বিক্রি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার নামীদামি ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রে। দেশেও পোশাকের বড় বড় ব্র্যান্ড গড়ে উঠেছে। দেশীয় এই খাতকে সুরক্ষা দিতে পোশাক আমদানিতে উচ্চ শুল্ক–কর রয়েছে। তবে অবৈধপথে আনা পোশাকে রাজস্ব দিতে হয় না।
দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা এবং রাজস্ব বাড়াতে ট্যারিফ কমিশন ১০ মার্চ এক প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। তারা বলেছে, ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের মাধ্যমে শাড়ি, টু–পিস, থ্রি–পিস ইত্যাদি পোশাক দেশে আসছে। কারণ, স্থানীয় বাজারে যে পরিমাণ ভারতীয় টু–পিস, থ্রি–পিস, লেহেঙ্গা, জামদানি ও তাঁত শাড়ি বিক্রি হয়, তার তুলনায় বৈধ আমদানি অনেক কম। সংস্থাটি চোরাচালান রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো এবং তৈরি পোশাকের আমদানি চালান শতভাগ পরীক্ষার সুপারিশ করেছে।
রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরবির্তনের পর পার্শ্ববর্তী দেশ ভিসা দেওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, এবারের ঈদে দেশীয় পোশাকের ব্যবসা ভালো হবে। তবে দুঃখজনকভাবে দেখলাম, ভারত ও পাকিস্তানের পোশাকের অভাব নেই বাজারে। পাকিস্তানি পোশাক আসা অনেক বেড়ে গেছে। দেশ দুটি থেকে অবৈধভাবে তৈরি পোশাক আসায় দেশীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
সৌমিক দাশ আরও বলেন, দিন দিন ব্যবসার খরচ বেড়ে গেছে। চলতি বছর নতুন করে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে আড়াই শতাংশীয় পয়েন্ট। এমন প্রেক্ষাপটে দেশীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে ভারত–পাকিস্তান থেকে অবৈধভাবে তৈরি পোশাক আসা বন্ধ করতে হবে। সেটি হলে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প শ ক আমদ ন প স আমদ ন শ ল ক কর ব যবস য় র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বকেয়া বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে জেএমএস গার্মেন্টস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছেন।
শনিবার (২২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকশ শ্রমিক ইপিজেড সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, জেএমএস গার্মেন্টস লিমিটেডে কাজ না থাকায় এবং ব্যাংকিং জটিলতার কারণে লে-অফ ঘোষণা করা হয়। লে-অফ চলাকালীন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ইপিজেড শ্রম আইনে বেতন-ভাতা গত ২০ মার্চ (ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন) ব্যাংকের স্ব-স্ব হিসাব মাধ্যমে এবং যাদের ব্যাংক একাউন্ট নাই তাদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করার কথা থাকলেও কেউ নির্দিষ্ট তারিখে বেতন পাননি। পরে এক নোটিশের মাধ্যমে আগামী ২৫ মার্চ বেতন পরিশোধ করা হবে বলে মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয়। কিন্তু, শ্রমিকরা সেই সিদ্ধান্ত না মেনে কারখানার সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ইপিজেড থানা পুলিশ, আনসার ও বেপজা সিকিউরিটি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। বর্তমানে ইপিজেড সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
ঢাকা/রেজাউল/রাজীব