আওয়ামী লীগ আমলে প্রতি গাড়ির মাসিক টোকেন মূল্য ছিল ৭০০ টাকা। এখন তা বেড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে। ভাড়া নিয়ে এলে আগে স্ট্যান্ডপ্রতি নেওয়া হতো ১০ টাকা; এখন নিচ্ছে ২০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন চাঁদা দিতে হচ্ছে ১২ পয়েন্টে। এ ছাড়া চালক সমিতি ও মালিক সমিতির নামে নেওয়া হচ্ছে আরও ১০ টাকা করে। এর বাইরে চাঁদা দিতে হয় হাইওয়ে ও কমিউনিটি পুলিশকেও; বকশিশ তো আছেই। সারাদিন পরিশ্রম করলেও পথে পথে চাঁদা দিয়ে দিন শেষে ঘরে নিতে পারি না আয়ের অর্ধেক। অটোরিকশাচালক খায়রুল আমিন এভাবেই তাঁর অসহায়ত্বের কথা বলেন সমকালের কাছে। তিনি গত ১০ বছর ধরে গাড়ি চালান চট্টগ্রামের অক্সিজেন-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়ক ও চান্দগাঁও-কাপ্তাই সড়কে। নগরীর সঙ্গে উত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকাকে সংযুক্ত করা এই দুটি সড়কের মোট দৈর্ঘ্য মাত্র ৯৯ কিলোমিটার। কিন্তু দুটি সড়কেই অন্তত ১২টি পয়েন্টে যানবাহন থেকে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে খবর পাওয়া গেছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই দুই সড়কে অটোরিকশা শ্রমিক লীগের ব্যানারে চাঁদাবাজি ও টোকেন বাণিজ্য চলত। চাঁদার ভাগ পেত হাইওয়ে ও কমিউনিটি পুলিশ। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মাস তিনেক বন্ধ ছিল চাঁদার অত্যাচার। কিন্তু এখন আবার শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। উল্টো বেড়েছে চাঁদার অঙ্ক। বর্তমানে নগর অটোরিকশাচালক সমিতি, রাউজান অটোরিকশাচালক সমিতি, রাঙ্গুনিয়া অটোরিকশাচালক সমিতি, লিচু বাগান অটোরিকশাচালক সমিতি, শাহ লতিফ অটোরিকশাচালক সমিতির নামে চাঁদার টোকেন বাণিজ্য হচ্ছে আন্তঃজেলা সড়কে। আলাদাভাবে চাঁদা দিতে হয় হাইওয়ে ও কমিউনিটি পুলিশকেও। ধরন ভিন্ন হলেও অটোরিকশার মতো চাঁদা গুনতে হয় বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনকেও। তাদেরও মালিক এবং চালকদের নামে রয়েছে পৃথক সমিতি।
চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ অটোরিকশাচালকরা গত ৭ মার্চ কাপ্তাই সড়ক পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। চাঁদাবাজদের টোকেন বাণিজ্য স্থায়ীভাবে বন্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। পরে চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে চালকরা অবরোধ তুলে নেন। কিন্তু পরদিনই ৮ মার্চ চালকদের কাছে আবার চাঁদা দাবি করে সমিতির নেতারা। তখন ফের চালকরা সড়ক অবরোধ করেন। এবারও পুলিশ এসে চাঁদাবাজদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তার পরও পরিস্থিতি পাল্টায়নি।
চাঁদাবাজি বন্ধে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে অবরোধ
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কটির দৈর্ঘ্য ৬৬ কিলোমিটার। এ সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে গত ১১ জানুয়ারি অবরোধ করেন অটোরিকশাচালকরা। তাদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর আগের চাঁদাবাজরা পালিয়ে গেলে সড়কে মাস তিনেক চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। এখন আবার কমিউনিটি পুলিশ পরিচয়ে এবং অটোরিকশাচালক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে চালকদের সঙ্গে চাঁদা আদায়কারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে।
আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে কাপ্তাই সড়কের চাঁদা
চান্দগাঁও থেকে কাপ্তাই চন্দ্রঘোনা পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে ছয়টি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয় বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে। চান্দগাঁও, হাটহাজারীর নজুমিয়া হাট, রাউজানের নোয়াপাড়া, চুয়েট গেট, রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজার হাট, লিচু বাগান স্ট্যান্ডে চাঁদা তোলা হয় মালিক ও চালক সমিতির নামে। আগে এই সমিতির নেতারা ছিলেন আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের ছায়ায়। এখন তারা শ্রমিক দল ও বিএনপির নাম ভাঙিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। এই রুটে বাস সার্ভিস কম থাকায় অটোরিকশায় চড়ে প্রতিদিন গন্তব্যে যেতে হয় মানুষকে। ব্যবহার করতে হয় চান্দগাঁওয়ের কাপ্তাই রাস্তার মাথা। কারণ চট্টগ্রাম জেলার নম্বরে নিবন্ধিত গাড়ি নগরীতে ঢোকায় বিধিনিষেধ আছে। মূলত একে অজুহাত হিসেবে সমানে এনে পুলিশ ও সমিতির নেতারা চাঁদাবাজি করছে।
রাঙামাটি সড়কে চাঁদা দিতে হয় ছয় পয়েন্টে
চট্টগ্রাম নগর-রাঙামাটি মহাসড়কে ছয়টি স্থানে চাঁদার টোকেন বাণিজ্য চলছে। অক্সিজেন মোড়, নতুনপাড়া ট্যাক্সি স্ট্যান্ড (বিআরটিসি), হাটহাজারী ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, জলিলনগর, রাউজান ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ও রাঙামাটি বনরুপা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে চলছে এই চাঁদাবাজি। অটোরিকশাচালক জানে আলম জানান, অতীতে চট্টগ্রাম জেলার নম্বরে নিবন্ধিত গাড়ি অক্সিজেন ও রাঙামাটির বনরুপা আসতে হলে মাসিক টোকেন মূল্য ছিল ৫০০ টাকা। প্রতি ভাড়ায় ১০ টাকা চাঁদা দিতে হতো আলাদাভাবে। বর্তমানে দিতে হয় মাসিক ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি ভাড়ায় আবার ২০ টাকা করে দিতে হয় ছয়টি স্ট্যান্ডে। রাউজান ও হাটহাজারী পৌরসভার টোল আদায় করে ২০ টাকা করে মোট ৪০ টাকা। পাশাপাশি এ সড়কে সমিতির নামে গাড়িপ্রতি ২০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে জলিলনগর, হাটহাজারী ও নতুন পাড়া এলাকায়।
চাঁদাবাজিতে জড়িত কারা
কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় চাঁদাবাজির মূল হোতা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মোহাম্মদ হাসান নামে এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে আছে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি গ্রুপ। অভিযোগ আছে, তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। সড়কের রাউজান অংশের নোয়াপাড়, চুয়েট পাহাড়তলী, হাটহাজরী অংশে নজুমিয়া হাট ও রাঙ্গুনিয়া অংশে লিচু বাগান, রোয়াজার হাট এলাকায় চাঁদা আদায় করে হাসানের সহযোগীরা। কয়েকজন করে সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোতে চাঁদা আদায় রসিদ হাতে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। চাঁদা আদায় প্রসঙ্গে হাসানের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। অপরদিকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে চাঁদা আদায় করা হয় সিএনজি চালক সমিতির নামে। এ কাজে সড়কে মাঠপর্যায়ে চাঁদা আদায় করতে দিকনির্দেশনা দিতে দেখা যায় মোহাম্মদ রফিক নামে একজনকে। তাঁর সঙ্গে আছে মেহেদী, রাজু, সালাহউদ্দিন, খোকন, বাবুল, রায়হান, রাশেদ। চাঁদা উত্তোলন প্রসঙ্গে মোহাম্মদ রফিক সমকালকে বলেন, আমারা মাসিক টোকেনে টাকা আদায় করি না। মাসিক টোকেনে চাঁদা আদায় করে হাইওয়ে পুলিশ। আমাদের সরকারি রেজিস্ট্রেশন করা চালক সমিতি রয়েছে। আমরা প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে থাকি চালকদের কল্যাণে। সেই টাকা ব্যাংকে জমা হয়। মৃত্যুকালীন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয় এই জমাকৃত অর্থ দিয়ে। যদিও এই আপৎকালীন অর্থ সহায়তা এখন পর্যন্ত কোনো চালক পাননি বলে দাবি করেন রাউজান অটোরিকশাচালক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক তাজুল ইসলাম।
যা বলছে পুলিশ
রাউজান ও হাটহাজারী অংশের দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশের এসআই ফখরুল আলম বলেন, ‘সড়কে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২টি মামলা দিয়ে থাকি। হাইওয়ে পুলিশ পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দেয়। এখন টোকেন বাণিজ্য করার কোনো সুযোগ নেই কারও।’
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মহাসড়ক দেখভাল করে হাইওয়ে পুলিশ। চাঁদার ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারবে। সড়কে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি আমরা। এর পথে যারা বাধা হবে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সড়ক কিংবা মহাসড়কে যারা নতুন করে চাঁদাবাজি করছে, তাদের তথ্য-উপাত্ত আমরা সংগ্রহ করেছি।’
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ লকদ র ২০ ট ক ১০ ট ক হ ইওয় চ লকর অবর ধ ই সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার বয়সী অভিনেতাদের অপশন কম’
অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পেয়েছে কমেডি সিরিজ ‘দুপাহিয়া’। কমেডির মোড়কে নানা সামাজিক বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন পরিচালক সোনম নায়ার। সিরিজে অন্যতম মূল চরিত্রে দেখা গেছে গজরাজ রাওকে। চিত্রনাট্য পড়েই তিনি সিরিজটি করতে আগ্রহী হয়েছিলেন বলে জানান। মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপচারিতার সময় গজরাজ রাও বলেন, ‘প্রিয়দর্শন আর সুরজ বরজাতিয়া যদি এক হন, তাহলে যে রকম অনুভূতি হবে, এই সিরিজের কাহিনি শুনে আমার এমনই অনুভূতি হয়েছিল। খুব কম ক্ষেত্রে হয়েছে যে চিত্রনাট্য পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটি করতে উৎসাহী হয়েছি। “দুপাহিয়া”র ক্ষেত্রে তা–ই হয়েছিল।’
‘দুপাহিয়া' সিরিজের পোস্টার। আইএমডিবি