Samakal:
2025-04-14@03:49:36 GMT

৯৯ কিলোমিটারে চাঁদার ১২ ঘাট

Published: 22nd, March 2025 GMT

৯৯ কিলোমিটারে চাঁদার ১২ ঘাট

আওয়ামী লীগ আমলে প্রতি গাড়ির মাসিক টোকেন মূল্য ছিল ৭০০ টাকা। এখন তা বেড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে। ভাড়া নিয়ে এলে আগে স্ট্যান্ডপ্রতি নেওয়া হতো ১০ টাকা; এখন নিচ্ছে ২০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন চাঁদা দিতে হচ্ছে ১২ পয়েন্টে। এ ছাড়া চালক সমিতি ও মালিক সমিতির নামে নেওয়া হচ্ছে আরও ১০ টাকা করে। এর বাইরে চাঁদা দিতে হয় হাইওয়ে ও কমিউনিটি পুলিশকেও; বকশিশ তো আছেই। সারাদিন পরিশ্রম করলেও পথে পথে চাঁদা দিয়ে দিন শেষে ঘরে নিতে পারি না আয়ের অর্ধেক। অটোরিকশাচালক খায়রুল আমিন এভাবেই তাঁর অসহায়ত্বের কথা বলেন সমকালের কাছে। তিনি গত ১০ বছর ধরে গাড়ি চালান চট্টগ্রামের অক্সিজেন-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়ক ও চান্দগাঁও-কাপ্তাই সড়কে। নগরীর সঙ্গে উত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকাকে সংযুক্ত করা এই দুটি সড়কের মোট দৈর্ঘ্য মাত্র ৯৯ কিলোমিটার। কিন্তু দুটি সড়কেই অন্তত ১২টি পয়েন্টে যানবাহন থেকে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে খবর পাওয়া গেছে। 

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই দুই সড়কে অটোরিকশা শ্রমিক লীগের ব্যানারে চাঁদাবাজি ও টোকেন বাণিজ্য চলত। চাঁদার ভাগ পেত হাইওয়ে ও কমিউনিটি পুলিশ। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মাস তিনেক বন্ধ ছিল চাঁদার অত্যাচার। কিন্তু এখন আবার শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। উল্টো বেড়েছে চাঁদার অঙ্ক। বর্তমানে নগর অটোরিকশাচালক সমিতি, রাউজান অটোরিকশাচালক সমিতি, রাঙ্গুনিয়া অটোরিকশাচালক সমিতি, লিচু বাগান অটোরিকশাচালক সমিতি, শাহ লতিফ অটোরিকশাচালক সমিতির নামে চাঁদার টোকেন বাণিজ্য হচ্ছে আন্তঃজেলা সড়কে। আলাদাভাবে চাঁদা দিতে হয় হাইওয়ে ও কমিউনিটি পুলিশকেও। ধরন ভিন্ন হলেও অটোরিকশার মতো চাঁদা গুনতে হয় বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনকেও। তাদেরও মালিক এবং  চালকদের নামে রয়েছে পৃথক সমিতি।
চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ অটোরিকশাচালকরা গত ৭ মার্চ কাপ্তাই সড়ক পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। চাঁদাবাজদের টোকেন বাণিজ্য স্থায়ীভাবে বন্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। পরে চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসন ও  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে চালকরা অবরোধ তুলে নেন। কিন্তু পরদিনই ৮ মার্চ চালকদের কাছে আবার চাঁদা দাবি করে সমিতির নেতারা। তখন ফের চালকরা সড়ক অবরোধ করেন। এবারও পুলিশ এসে চাঁদাবাজদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তার পরও পরিস্থিতি পাল্টায়নি।  

চাঁদাবাজি বন্ধে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে অবরোধ  
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কটির দৈর্ঘ্য ৬৬ কিলোমিটার। এ সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে গত ১১ জানুয়ারি অবরোধ করেন অটোরিকশাচালকরা। তাদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর আগের চাঁদাবাজরা পালিয়ে গেলে সড়কে মাস তিনেক চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। এখন আবার কমিউনিটি পুলিশ পরিচয়ে এবং অটোরিকশাচালক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে চালকদের সঙ্গে চাঁদা আদায়কারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। 

আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে কাপ্তাই সড়কের চাঁদা
চান্দগাঁও থেকে কাপ্তাই চন্দ্রঘোনা পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে ছয়টি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয় বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে। চান্দগাঁও, হাটহাজারীর নজুমিয়া হাট, রাউজানের নোয়াপাড়া, চুয়েট গেট, রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজার হাট, লিচু বাগান স্ট্যান্ডে চাঁদা তোলা হয় মালিক ও চালক সমিতির নামে। আগে এই সমিতির নেতারা ছিলেন আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের ছায়ায়। এখন তারা শ্রমিক দল ও বিএনপির নাম ভাঙিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। এই রুটে বাস সার্ভিস কম থাকায় অটোরিকশায় চড়ে প্রতিদিন গন্তব্যে যেতে হয় মানুষকে। ব্যবহার করতে হয় চান্দগাঁওয়ের কাপ্তাই রাস্তার মাথা। কারণ চট্টগ্রাম জেলার নম্বরে নিবন্ধিত গাড়ি নগরীতে ঢোকায় বিধিনিষেধ আছে। মূলত একে অজুহাত হিসেবে সমানে এনে পুলিশ ও সমিতির নেতারা চাঁদাবাজি করছে। 

রাঙামাটি সড়কে চাঁদা দিতে হয় ছয় পয়েন্টে
চট্টগ্রাম নগর-রাঙামাটি মহাসড়কে ছয়টি স্থানে চাঁদার টোকেন বাণিজ্য চলছে। অক্সিজেন মোড়, নতুনপাড়া ট্যাক্সি স্ট্যান্ড (বিআরটিসি), হাটহাজারী ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, জলিলনগর, রাউজান ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ও রাঙামাটি বনরুপা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে চলছে এই চাঁদাবাজি। অটোরিকশাচালক জানে আলম জানান, অতীতে চট্টগ্রাম জেলার নম্বরে নিবন্ধিত গাড়ি অক্সিজেন ও রাঙামাটির বনরুপা আসতে হলে মাসিক টোকেন মূল্য ছিল ৫০০ টাকা। প্রতি ভাড়ায় ১০ টাকা চাঁদা দিতে হতো আলাদাভাবে। বর্তমানে দিতে হয় মাসিক ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি ভাড়ায় আবার ২০ টাকা করে দিতে হয় ছয়টি স্ট্যান্ডে। রাউজান ও হাটহাজারী পৌরসভার টোল আদায় করে ২০ টাকা করে মোট ৪০ টাকা। পাশাপাশি এ সড়কে সমিতির নামে গাড়িপ্রতি ২০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে জলিলনগর, হাটহাজারী ও নতুন পাড়া এলাকায়।  

চাঁদাবাজিতে জড়িত কারা 
কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় চাঁদাবাজির মূল হোতা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মোহাম্মদ হাসান নামে এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে আছে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি গ্রুপ। অভিযোগ আছে, তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। সড়কের রাউজান অংশের নোয়াপাড়, চুয়েট পাহাড়তলী, হাটহাজরী অংশে নজুমিয়া হাট ও রাঙ্গুনিয়া অংশে লিচু বাগান, রোয়াজার হাট এলাকায় চাঁদা আদায় করে হাসানের সহযোগীরা। কয়েকজন করে সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোতে চাঁদা আদায় রসিদ হাতে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। চাঁদা আদায় প্রসঙ্গে হাসানের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। অপরদিকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে চাঁদা আদায় করা হয় সিএনজি চালক সমিতির নামে। এ কাজে সড়কে মাঠপর্যায়ে চাঁদা আদায় করতে দিকনির্দেশনা দিতে দেখা যায় মোহাম্মদ রফিক নামে একজনকে। তাঁর সঙ্গে আছে মেহেদী, রাজু, সালাহউদ্দিন, খোকন, বাবুল, রায়হান, রাশেদ। চাঁদা উত্তোলন প্রসঙ্গে মোহাম্মদ রফিক সমকালকে বলেন, আমারা মাসিক টোকেনে টাকা আদায় করি না। মাসিক টোকেনে চাঁদা আদায় করে হাইওয়ে পুলিশ। আমাদের সরকারি রেজিস্ট্রেশন করা চালক সমিতি রয়েছে। আমরা প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে থাকি চালকদের কল্যাণে। সেই টাকা ব্যাংকে জমা হয়। মৃত্যুকালীন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয় এই জমাকৃত অর্থ দিয়ে। যদিও এই আপৎকালীন অর্থ সহায়তা এখন পর্যন্ত কোনো চালক পাননি বলে দাবি করেন রাউজান অটোরিকশাচালক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক তাজুল ইসলাম।

যা বলছে পুলিশ
রাউজান ও হাটহাজারী অংশের দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশের এসআই ফখরুল আলম বলেন, ‘সড়কে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২টি মামলা দিয়ে থাকি। হাইওয়ে পুলিশ পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দেয়। এখন টোকেন বাণিজ্য করার কোনো সুযোগ নেই কারও।’ 
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মহাসড়ক দেখভাল করে হাইওয়ে পুলিশ। চাঁদার ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারবে। সড়কে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। 
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি আমরা। এর পথে যারা বাধা হবে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সড়ক কিংবা মহাসড়কে যারা নতুন করে চাঁদাবাজি করছে, তাদের তথ্য-উপাত্ত আমরা সংগ্রহ করেছি।’ 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ লকদ র ২০ ট ক ১০ ট ক হ ইওয় চ লকর অবর ধ ই সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ২৪ বছরেও হয়নি বিস্ফোরক মামলার রায় 

রাজধানীর রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর দুই যুগ পার হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। কবে রায় হবে, নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা হয়। এতে ১০ জন প্রাণ হারান। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে ১৩ বছর আগে। তবে, ২৪ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ।

তিন বছর আগে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে ছিল। ২০২২ সালের ২৮ জুলাই মামলাটি বদলি করে ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি পাঠানো হয় মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৫ তে।

মামলাটি এখন আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু, মামলার তিন আসামি সিলেটের এক মামলায় সেখানে থাকায় তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি। এদিকে, এক আসামির পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় জেরার আবেদন করা হয়েছে। বিচারক সাইফুর রহমান মজুমদার আগামী ২০ এপ্রিল শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর মাহফুজ হাসান বলেছেন, “গত অক্টোবরে আমরা নিয়োগ পেয়েছি। ডিসেম্বরে ছিল শীতকালীন অবকাশ। আমরা খুব বেশি সুযোগ পাইনি। রাষ্ট্রীয় দিকনির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের পিপি স্যার আছেন। তাকে সব সময় ইনফর্ম করি। পিপি স্যার যে দিকনির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী কাজ করব। আসামিরা অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় তাদের এ মামলায় হাজির করা যাচ্ছে না। এজন্য একটু সময় লাগছে।”

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ মামলা সম্পর্কে আমার জানা নাই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”

বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন—আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলাল উদ্দিন, শাহাদাতউল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই। তাদের মধ্যে মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর ও মুফতি আব্দুল হাই পলাতক এবং অপর আট আসামি কারাগারে আছেন।

আসামি আরিফ হাসানের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেছেন, আগের সরকার ইচ্ছে করে এ মামলার বিচার শেষ করেনি। আসামিদের আটকে রেখে দিয়েছে। কারণ, তারা জানত, আসামিরা রমনায় বোমা হামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেনি। উচ্চ আদালতে তারা খালাস পাবেন। এ কারণে মামলা শেষ না করে ঝুলিয়ে রেখে আসামিদের আটকে রেখেছে। আমরা চাই, মামলার বিচার শেষ হোক। রমনা বটমূলে ঘটনা ঘটেছে, মানুষও মারা গেছে। দোষীদের বিচার আমরাও চাই। মামলার বিচার শেষ হলর কেউ দোষী হলে সাজা পাবে আর দোষ না করলে খালাস পাবে।

২০০১ সালের পহেলা বৈশাখ ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি এবং এর পরপরই আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই সাত ব্যক্তি প্রাণ হারান এবং ২০-২৫ জন আহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিন জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। এতে ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ।

দুটি মামলার মধ্যে প্রায় ১৩ বছর পর হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ আট জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নান, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলালউদ্দিন, মো. তাজউদ্দিন, আলহাজ মাওলানা হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আব্দুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।

তাদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিনসহ তিন আসামি এখনো পলাতক। শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নানের অপর এক মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এজন্য বিস্ফোরক মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিলের ওপর আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। 

এর আগে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের তারিখ ঠিক করা হয়। পরে আদালত মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। এরপর মামলাটি যায় বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পরও মামলাটির শুনানি হয়নি।  

হত্যা মামলা সম্পর্কে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবি বলেছেন, ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানিতে আমরা বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি। প্রত্যাশা করছি, সর্বোচ্চ সাজা রায়ে বহাল থাকবে।

ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বোমা হামলায় নিহতরা হলেন—চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার দুবলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩৫), বরগুনা জেলার বামনা থানার বাইজোরা গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে এনায়েত হোসেনের ছেলে জসিম (২৩), কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার বিরামকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এমরান (৩২), পটুয়াখালীর সদর থানার ছোট বিমাই গ্রামের মৃত অনবী ভূষণ সরকারের ছেলে অসীম চন্দ্র সরকার (২৫), পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কাজীপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর ছেলে মামুন (২৫), একই গ্রামের সামছুল হক কাজীর ছেলে রিয়াজ (২৫), একই এলাকার আবুল হাশেম গাজীর মেয়ে শিল্পী (২০), নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার রথি রুহিত রামপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন (২৭), ঢাকার দোহার থানার চরনটসোলা গ্রামের মৃত আয়নাল খাঁর ছেলে আফসার (৩৫) ও অপর এক জন অজ্ঞাত পুরুষ।

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ