চতুর্থ দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল
Published: 22nd, March 2025 GMT
যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ইসরায়েলের জনগণ। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তির দাবি এবং অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতরপ্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। নেতানিয়াহুবিরোধী স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে রাজপথ। টানা চতুর্থ দিনের মতো জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে বিক্ষোভ হয়েছে। তেল আবিবসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। নেতানিয়াহুর পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা একত্রিত থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করছেন নেতানিয়াহু। খবর টাইমস অব ইসরায়েল ও রয়টার্সের।
যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে গাজায় গত মঙ্গলবার ফের হামলা শুরুর পর থেকেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সাধারণ ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল।
এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গাজার বাকি ৫৯ জন বন্দির ভাগ্য। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রোনেন বারকে বরখাস্ত ইস্যুতে ভোটাভুটির ঘোষণার পর রাত থেকেই দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছিলেন ইসরায়েলিরা। বরখাস্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর শুক্রবার বিক্ষোভ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আজ্জা স্ট্রিটের দিকে অগ্রসর হওয়া একদল বিক্ষোভকারীর ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ইতিহাস তৈরি করে জনগণ’। দলটি ‘বাম, ডান, বাম, ডান, বাম’; ‘সবাই একসঙ্গে, যতক্ষণ না (নেতানিয়াহুর) পতন হয়’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেও তেল আবিব ও জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও জড়ো হয়। তাদের কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আদালত তাঁর বরখাস্তের বিরুদ্ধে দাখিল করা আবেদনগুলোর শুনানি না করা পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। এতে বলা হয়েছে, তারা ৮ এপ্রিলের মধ্যে আবেদনগুলো শুনবে। এর আগে নেতানিয়াহু রোনেন বারকে বরখাস্ত করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে বারকে বরখাস্তের পক্ষে মত দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বারের দায়িত্বের শেষ দিন হবে আগামী ১০ এপ্রিল।
এদিকে গাজায় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। পবিত্র রমজানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে নতুন করে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে নেতানিয়াহুর সরকার। গাজায় ক্যান্সার চিকিৎসাসেবা দেওয়া একমাত্র হাসপাতালেও হামলা চালানো হয়েছে। মধ্য গাজার ক্যান্সার রোগীদের জন্য তুর্কি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গাজার অন্যতম বৃহত্তম খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে, তাদের কাছে আর ছয় দিনের জন্য পর্যাপ্ত আটা আছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর স্যাম রোজ জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, মানুষকে কম দিয়ে আমরা মজুত থাকা আটা আরও কয়েকদিন বিতরণ করতে পারি। তবে তা সপ্তাহ নয়, মাত্র কয়েক দিনই চলবে।
এই হামলার পেছনে ইসরায়েলের প্রকৃত লক্ষ্য হলো গাজাকে জনশূন্য করা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নেতানিয়াহুর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে শিন বেতের প্রধানের মন্তব্য থেকে বোঝা যায় নেতানিয়াহু সরকার কখনও যুদ্ধবিরতি চায়নি। শিন বেতের পরিচালক রোনেন বার অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু ‘প্রকৃত চুক্তিতে’ পৌঁছানোর ইচ্ছা না করেই গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা পরিচালনা করেছেন।
দোহা ইনস্টিটিউট অব গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মোহাম্মদ এলমাসরি বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধ ফের শুরু করার আসল কারণ স্পষ্ট। যদি তারা বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যা এবং নারকীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, তবে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে আশা রয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত তারা যা চায় তা পাবে। সেটা হলো, উপত্যকাকে জনশূন্য করা। এটাই তাদের প্রকৃত লক্ষ্য।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজায় ইউনিসেফের মুখপাত্র রোজালিয়া পলিন বলেছেন, এই সপ্তাহে ইসরায়েল ফের যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে গাজায় দুই শতাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৫৯০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় অন্তত ৪৯ হাজার ৬১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। নিহতের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র বরখ স ত র
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে: আমির খসরু
ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন। সবাই তো ধরে নিয়েছে নির্বাচন ডিসেম্বরে পরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেকের মতো ডিসেম্বর অনেক দেরি, তারপর ডিসেম্বর শেষ সময় ধরে নিয়েছে। ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে। এখন দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশে-বিদেশে একটা বিষয় নিয়ে সবার মধ্যে কাজ করছে যে, কবে নির্বাচন হবে। কবে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবে। বর্তমানে দেশে একটা সরকার আছে। কিন্তু গণতন্ত্রতো এখনও ফিরে আসেনি। জনগণ সমর্থিত সরকার ব্যতীত কোনো প্রশাসন তাকে সমর্থন দিতে চায় না, সেটা তো আমরা এখন লক্ষ্য করছি।
বৈঠকে আমির খসরু ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খসরু বলেন, জনগণের সমর্থিত একটা সরকার ও সংসদ থাকবে যেটা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা হলে দেশের অনেকগুলো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সেজন্য এই বিষয়টা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আলোচনায়।
নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, সবাই তো ধরে নিয়েছে; নির্বাচন ডিসেম্বরে পরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। অনেকের মতো ডিসেম্বর অনেক দেরি, তারপর ডিসেম্বর শেষ সময় ধরে নিয়েছে। ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে। এখন দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে সবগুলো বিষয় নিয়ে যে ঐক্যমত কমিশন হয়েছিল সেইগুলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যমত হবে সেইগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর যেসব বিষয়ে দ্বিমত তৈরি হবে সেগুলো নিয়ে আগামী নির্বাচনে সবাই জনগণের কাছে নিয়ে যাবে। এরপর সংসদে আলোচনা, তর্ক বির্তক হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের রপ্তানির বড় জায়গা বলে উল্লেখ করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানে আগামী দিনে কি হবে, বিএনপির পরিকল্পনা কি- এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।