শালিসের কথা বলে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
Published: 22nd, March 2025 GMT
ঝিনাইদহের মহেশপুরের জীবননগর পাড়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আবু জাফর (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শালিসের কথা বলে ডেকে নিয়ে তাকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।
নিহত আবু জাফর কাজীরবেড় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী ও জীবননগর পাড়ার জাবেদ আলীর ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আলমগীর হোসেন ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার দুপুরে মহেশপুর থানায় একটি মামলা করেছেন।
নিহতের ছেলে আলমগীর হোসেন বলেন, গ্রামের মাঠে আমাদের এক বিঘা জমি ছিল। পাশেই আব্বাস আলীর মেহগনি বাগান ছিল। সেই জমি ১৬ বছর আগে মাপামাপি হলে একটি গাছ আমাদের ভাগে পড়ে। এই গাছ ওদের কেটে নিতে বলেছিল আমার বাবা। তারা সেই গাছ না কাটলে ফসলের ক্ষতির শঙ্কায় তখন আমার বাবা সেই গাছটি কেটে ফেলে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন পরিস্থিতি অশান্ত ছিল। আমার বাবা টাকা দিতেও চেয়েছিল অনেকবার। পরে গতরাতে গ্রামের একটি বিষয়ে শালিস হবে বলে দুইজন ব্যক্তি বাবাকে ডেকে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী আমিরের বাড়িতে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে একপর্যায়ে আব্বাস আলীর লোকজন মারপিট করলে আমার বাবা ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
ঘটনার বিষয়ে মহেশপুরের ভৈরবা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক আনিসুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক কোনো বিরোধ ছিল না এটা। মূলত জমি নিয়ে ও গাছ কাটা নিয়ে বিরোধের জেরেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। আমরা আসামি ধরতে অভিযান চালাচ্ছি।
এ ঘটনায় আবু জাফরের মরদেহ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা.
এদিকে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে সামন্তা বাজারে মহেশপুর উপজেলা বিএনপি পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল। তারা দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ প ট য় হত য ন হত আম র ব ব
এছাড়াও পড়ুন:
৬১৮ নম্বর কেবিনের নূহা-নাবার জন্মদিন আজ
নাফিসা আলিয়া নূহা আর নাফিয়া আলিয়া নাবা বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ৬১৮ নম্বর ভিআইপি কেবিনে বেড়ে উঠেছিল। জন্মের ১৪ দিন বয়স থেকে তারা হাসপাতালটির ওয়ার্ডে এবং পরে এ কেবিনে থেকেই হাঁটতে শেখে, কথা বলতে শেখে। হাসপাতালে ভর্তির ৩২ মাস পর গত বছরের ২৫ নভেম্বর দুই বোন মা–বাবার হাত ধরে বাড়ি ফিরেছিল। আজ ২১ মার্চ, শুক্রবার তাদের জন্মদিন। তিন বছর শেষ হয়ে চার বছরে পা দেবে। প্রথমবারের মতো বাড়িতে মা–বাবা মেয়েদের জন্মদিন পালন করবেন।
নূহা ও নাবার জন্ম হয়েছিল মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো অবস্থায়। শরীরের পেছন ও নিচের দিকে থেকে যুক্ত ছিল তারা। দুজনের মলত্যাগের পথও এক ছিল। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এদের বলা হয় ‘কনজয়েন্ট টুইন পিগোপেগাস’। এ ধরনের জোড়া শিশু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা দেশে এই প্রথম বলেই বলছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। আলাদা হয়ে ২ বছর ৭ মাস ২২ দিন বয়সে নূহা–নাবা হাসপাতাল ছেড়ে কুড়িগ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফিরেছিল। মো. আলমগীর হোসেন ও নাসরিন আক্তার দম্পতির কাছে এটি ছিল স্বপ্নের মতো।
বুধবার নূহা ও নাবার বাবা মো. আলমগীর হোসেন মোবাইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিন্তা করিনি মেয়েরা কখনো আলাদা হবে। আর এখন বাড়িতে বসে মেয়েদের জন্মদিন পালন করব। মেয়েরা আলাদা আলাদা হেঁটে বেড়ায়। অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনসহ চিকিৎসকদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।’
এ পর্যন্ত নূহা ও নাবার ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় আটটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। নূহা ও নাবা শুরু থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিল বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগের স্পাইনাল নিউরোসার্জারি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনের অধীন।
গত বছর হাসপাতাল ছাড়ার আগপর্যন্ত নূহা ও নাবার চিকিৎসায় খরচ হয়েছিল ৫১ লাখ টাকা। ১৫ লাখ টাকা অনুদান ছাড়া বাকি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করেছিল। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রোপচারের পর থেকে নূহা ও নাবা আলাদা দুই শিশু। নূহা ও নাবার পেটের মধ্যে পায়খানার রাস্তা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ব্যাগ ব্যবহার ও তা পাল্টানো, বানিয়ে দেওয়া মলদ্বার পরিষ্কারের জন্য স্যালাইন ব্যবহারসহ দুই মেয়ের পেছনে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান মো. আলমগীর হোসেন। মেয়েদের প্রতিদিন মাংসসহ অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হয়।
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনো তেমন কোনো কাজ শুরু করতে পারিনি। একটি দোকান চালু করতে চাচ্ছি। ঢাকা থেকে আসার পর মেয়েদের নিয়ে দুইবার হাসপাতালে ফলোআপে যেতে হয়েছে। রমজান মাসে আবার চিকিৎসক যেতে বলেছিলেন, টাকাপয়সার জন্য যেতে পারিনি। ঈদের পর যাব।’
পরিবহনশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন আলমগীর হোসেন। হাসপাতালে মেয়েদের সঙ্গে থাকতে হয়েছে বলে চাকরিটা চলে গিয়েছিল। জমি বন্ধক, ঋণ এবং ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে কিছু টাকা অনুদান পেয়েছিলেন, তা–ই দিয়ে চলছেন আলমগীর হোসেন। বাড়ি ফেরার পর ছেলে নাফিউ হোসাইনকে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করে দিয়েছেন।
কুড়িগ্রামে নিজেদের বাড়ির উঠানে আলাদা হওয়া যমজ বোন নূহা ও নাবা