সাংস্কৃতিক সমাবেশে নারী ও প্রকৃতি নিপীড়নের প্রতিবাদ
Published: 21st, March 2025 GMT
কুঞ্জ উজাড়। সেখানে গভীর গর্ত। আরসিসি ঢালাই করা পিলারের অংশবিশেষ। লোহালক্কড় আর ইট–পাথরে আকীর্ণ পরিবেশ। অনেক চেনা সবুজ ‘পান্থকুঞ্জ’কে এখন কুঞ্জ বলার কোনো মানেই হয় না। এটি এখন ক্ষতবিক্ষত মাঠ। এরই এক প্রান্তে হলো গাছের গান, নদীর গান; প্রাণী, পাখি ও নারীর প্রতি নির্যাতনের প্রতিবাদী গান। উচ্চারিত হলো সহিংসতা, নিপীড়নের প্রতিবাদ।
গতকাল শুক্রবার অপরাহ্ণে পান্থকুঞ্জে ‘নারী ও প্রকৃতির প্রতি নিপীড়ন রুখে দিন’ আহ্বান নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন ও নাট্যসংগঠন বটতলা।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প (ওঠানামার পথ) নির্মাণের জন্য নগরের বুকে ক্ষুদ্র সবুজ উদ্যান পান্থকুঞ্জের গাছপালা কেটে বিরান বানিয়ে ফেলা হচ্ছিল। এর প্রতিবাদে গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেখানে অবস্থান করছেন। গতকাল ছিল অবস্থানের ৯৮তম দিন।
এদিকে সারা দেশেই নারীদের প্রতি সহিংসতা, নিপীড়নের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সে কারণে নারী ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে সব নিপীড়ন বন্ধের ডাক দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় এ আয়োজনে। শুরুতেই নাট্যসংগঠন বটতলার পক্ষে ঘোষণা পাঠ করেন শেউতি শাগুফতা। এতে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে নারীকে হেনস্তা, পোশাক নিয়ে সমালোচনা ও কটূক্তি করা হচ্ছে। ধর্ষণের হুমকি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারীর নিরাপত্তাহীনতার এক দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে তাঁরা মুক্তি চান।
সংহতি জানিয়ে বক্তব্য এবং ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবাদী গান, আবৃত্তি, মূকাভিনয় ও নারী নির্যাতনবিরোধী নাটক দিয়ে সাজানো হয়েছিল এই সাংস্কৃতিক কর্মী সমাবেশের কার্যক্রম। এতে গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব বলেন, পান্থকুঞ্জের এই চিলতে পরিমাণ সবুজ ছিল এই এলাকার ফুসফুসের মতো। উন্নয়নের নামে তা ধ্বংস করা হচ্ছে।
কাব্যনাটক বৃক্ষ সম্মেলন থেকে আবৃত্তি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বটতলার নাট্যকার সামিনা লুৎফা বলেন, ‘একটা গাছের সঙ্গে পাখি, কীটপতঙ্গসহ কত ধরনের প্রাণবৈচিত্র্যের নিবিড় সংযোগ থাকে, তা আমরা অনুভব করি না। তাদের প্রাণকে আমরা মূল্যবান ভাবি না। এই মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে।’
নাট্যজন আজাদ আবুল কালাম সংহতি জানিয়ে বলেন, বহু প্রাণ ও রক্তপাতের বিনিময়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন মুক্ত সমাজের আশা জেগেছিল, তার সঙ্গে এখনকার বাস্তবতার মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
আলোচনার ফাঁকে প্রকৃতি ও মানুষ নামের মূকাভিনয় পরিবেশন করেন শহীদুল মুরাদ। গানের দল ‘বেতাল’–এর শিল্পীরা পরিবেশন করেন বৃক্ষ নিয়ে গান ‘গাছে গাছে কথা কয় পাখিরা তা জানে’। নাট্যসংগঠন বটতলার শিল্পীরা পরিবেশন করেন নারী নির্যাতনের প্রতিবাদী গান ‘যেন আমি সেই মেয়েটা’। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাট্যকার ও নির্দেশক শাহমান মৈশান।
গানের দল ‘মাভৈঃ’ পরিবেশন করে নদী নিয়ে গান ‘পুবের পাহাড়ে, বরাক নদীর দুধারে’। কবিতা আবৃত্তি করেন অনন্য লাবণি। আরও বক্তব্য দেন বটতলার নির্দেশক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে পানি খেলায় মাতলেন মারমা তরুণ-তরুণীরা
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বৈসাবিকে ঘিরে পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের রং। উৎসবের জোয়ারে ভাসছে পুরো জনপদ।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে মারমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব। এ উপলক্ষে জেলা সদরের পানখাইয়াপাড়া বটতলা থেকে সাংগ্রাই র্যালি বের করেন তারা। এতে মারমা নারী-পুরুষরা অংশ নেন। সাংগ্রাই এর প্রধানতম আকর্ষণ জলকেলি বা পানি উৎসব।
সকালে শুরু হওয়া র্যালিটি পানখাইয়াপাড়া বটতল হয়ে শহরের শাপলা চত্বরের সামনে দিয়ে কোট বিল্ডিং ঘুরে মারমা উন্নয়ন সংসদের কার্যালয়ের মাঠে গিয়ে শেষ হয়। নেচে গেয়ে খাগড়াছড়ি শহরকে এসময় উৎসবমুখর করে তোলেন মারমা তরুণ-তরুণীরা। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মোহাম্মদ আমান হাসান।
আরো পড়ুন:
ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’ উৎসব শুরু
তারুণ্যের উৎসব
রাজশাহীতে সমতল ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা লিলিপ্রু মারমা বলেন, “সাংগ্রাই আমাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব। আমরা সারা বছর এইদিনের অপেক্ষায় থাকি। এদিনে আমরা জলকেলি খেলে একে অপরকে পানি ছিটিয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নতুন বছরকে বরণ করি। জলকেলি উৎসবে সব বয়সী মারমারা অংশ নেন। মূলত তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহনই বেশি থাকে। নেচে গেয়ে আমরা উল্লাস করি।”
খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার শরীফ মোহাম্মদ আমান হাসান বলেন, “প্রতি বছর এখানে পানি খেলা হয়। এই পানি খেলা শুধু মারমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এখানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা বাঙ্গালিসহ সবাই অংশগ্রহণ করে উৎসব করেন। আমি মনে করি, এটি একটি সাম্প্রদায়িক মিল বন্ধন।”
খাগড়াছড়িতে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বর্নিল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। র্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হল প্রঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে পাহাড়ি, বাঙালিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার, পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েলসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/রূপায়ন/মাসুদ