রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে ঘোষিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নাম নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তিন দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাঁদের শঙ্কা, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় ভবিষ্যতে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।

শুক্রবার বিকেলে উপাচার্য  অধ্যাপক ড.

নিয়াজ আহমদ খানের কাছে শিক্ষার্থীরা এই স্মারকলিপি জমা দেন। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, নামকরণ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো—নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে ‘ঢাকা’ শব্দটি বাদ দিতে হবে। বিভ্রান্তি এড়াতে সম্পূর্ণ ভিন্ন, স্বতন্ত্র মৌলিক একটি নাম নির্ধারণ করতে হবে; যেমন ‘বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ (Central University of Bangladesh) বা ‘মহানগর বিশ্ববিদ্যালয়’ (Metropoliton University। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিকট আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়ে নাম পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করতে হবে।

‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে আপত্তি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপিতে ৫টি বিষয় উল্লেখ করেন।

নামজনিত বিভ্রান্তি: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’- দুটি নামের মধ্যে মাত্র একটি শব্দের পার্থক্য রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।

স্থানীয় পর্যায়ে জটিলতা: বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে পার্থক্য করা কঠিন হবে, যা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতারণার ঝুঁকি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে মিল থাকায় টিউশন জালিয়াতি বা প্রতারণার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

চাকরির বাজারে প্রতিকূলতা: চাকরির আবেদন প্রক্রিয়ায় দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে, যা তাঁদের চাকরিজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমস্যা: বিদেশি শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সুনাম ক্ষুণ্ন করতে পারে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটির সংক্ষিপ্ত রূপ ‘DU’, যা দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাদৃশ্য বেশ কাছাকাছি। অন্যদিকে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘DCU’, যা ‘DU’ এর সঙ্গে উচ্চরণেও প্রায় কাছাকাছি। এতে করে শিক্ষার্থীদের পরিচয়, টিউশন, চাকরির ক্ষেত্র এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম রকল প আপত ত

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানকে পেয়ে আনন্দাশ্রু বাধ মানছে না তুষার-শান্তা দম্পতির

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে তখন ব্যস্ত সারাদেশ। চলছে শোভাযাত্রা, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। কিন্তু এ দিনে একটি নবজাত শিশুকে ঘিরে আরও আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে কুমিল্লায় আহসান হাবিব তুষার ও শামীমা আক্তার শান্তা দম্পতির ঘরে, তার কাছে যেন বাইরের সব আয়োজন ফিকে। পহেলা বৈশাখের সকালেই তাদের কোলজুড়ে এসেছে দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। শিশুটিকে ঘিরে আনন্দাশ্রু যেন বাঁধ মানছে না বাবা-মার। দাদার দেওয়া নামে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে সুফিয়া আহসান রোয়া। তুষার ও শান্তার চাওয়া, তাদের দুই মেয়ে প্রথমে হোক ভালো মানুষ, পরে একজন চিকিৎসক।

গত সোমবার ভোর সাড়ে ৬টায় দেবিদ্বার উপজেলা সদরের সেন্ট্রাল হসপিটালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শান্তা। এ হাসপাতালটি তুষারের পারিবারিক যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। এ দম্পতির ৯ বছর বয়সী আরেকটি কন্যাসন্তান আছে। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স শেষ করা তুষার পেশায় একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় পরিবেশক। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা তাঁর স্ত্রী শান্তা প্যাথলজি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। তুষার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী মো. সেলিমের ছেলে। শান্তা একই উপজেলার বাঙ্গুরী এলাকার বাসিন্দা। তাদের তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে পরিণতি পায় ২০১৪ সালে। বিয়ের পর ২০১৬ সালে দেবিদ্বার সেন্ট্রাল হসপিটালেই তাদের প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম। এবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে ঘর আলো করে এসেছে দ্বিতীয় সন্তান রোয়া।
 
তুষার বলেন, নববর্ষের কাছাকাছি সময়ে আমার স্ত্রীর প্রসবের সময় ছিল। কিন্তু পহেলা বৈশাখের বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিনেই সিজার করতে আমরা চিকিৎসকের মতামত নিয়েছিলাম। চিকিৎসকও সিজারিয়ানের জন্য নববর্ষকেই বেছে নেন। এ দিনে সন্তানের জন্ম হওয়ায় আমরা খুব খুশি। ওর জন্মদিন উদযাপনে কাউকে আর তারিখ মনে করিয়ে দিতে হবে না। 

তুষার আরও বলেন, আমাদের প্রথম বাচ্চা হয়েছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে। তাই দ্বিতীয় বাচ্চার ক্ষেত্রেও চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসবের ঝুঁকি নেননি। শান্তার গাইনি সার্জন ছিলেন আমার চাচি ডা. হনুফা আক্তার। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে আমাদের বাসা হওয়ায় নিয়মিত ডা. হনুফার তত্ত্বাবধানে আমার স্ত্রী চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতেন। তবু মনে শঙ্কা তো ছিলই। অপারেশন থিয়েটারের সামনে মা-বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনে মনে আল্লাহকে ডেকেছি, যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। আমার মা যখন বাচ্চা কোলে নিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হন, তখন সব দুশ্চিন্তা দূর হয়। বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়, তোয়ালে উপহার দিয়েছে আমার বোনসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। 

শান্তা বলেন, স্থানীয় রীতি অনুসারে আমি সন্তান সম্ভবা হওয়ার ৯ মাসের মাথায় আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে বিশেষ খাবার ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এখন বাচ্চার জন্য দোয়া কামনায় সাত দিন বয়সের সময় আবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। 

হাসপাতালের আবাসিক গাইনি সার্জন হনুফা আক্তার বলেন, প্রসূতি শান্তা আমার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। যেন কোনো ঝুঁকিতে না পড়তে হয় এবং গর্ভের সন্তান যেন ভালো থাকে এ বিষয়ে শান্তা ও তুষার আগে থেকেই চেম্বারে এসে নিয়মিত ফলোআপ করতেন। এ ক্ষেত্রে স্বামীদের যতটুকু সচেতন থাকা দরকার, তুষার তার শতভাগ ছিলেন। নবজাতকের ওজন সাধারণত আড়াই কেজি হলেও সমস্যা নেই। শান্তা ও তুষারের মেয়ের ওজন হয়েছে ২ কেজি ৯০০ গ্রাম; যা একজন সুস্থ নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে মা ও সন্তান সুস্থ আছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ