ঈদুল ফিতর সামনে রেখে কুমিল্লা নগরীর রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। যত্রতত্র গাড়ির পার্কিং এবং সড়কের পাশে অ্যাম্বুলেন্স ও মোড়ে মোড়ে অঘোষিত স্ট্যান্ডের কারণে যানজট লেগে থাকছে।
যানজট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক), জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বিষয়টি ঝুলে আছে। সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুসারে নগরীতে চলাচলকারী এসব অবৈধ যানবাহনের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি কুমিল্লা সার্কিট হাউসে সভা করা হয়। এই সভায় নগর কর্তৃপক্ষ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সমন্বয়ে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে ৮টি কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হলেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যানজটে জনভোগান্তির বিষয়ে সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের নির্লিপ্ততাকে দুষছেন নগরবাসী। 
নগরীর সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীর কেন্দ্রস্থল কান্দিরপাড় থেকে দক্ষিণে টমছমব্রিজ হয়ে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড যেতে হয়। এক লেনের এই সড়কে বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছাড়াও স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-স্টাফ ও শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস, মিনিবাস, সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স, অটোরিকশা, ইজিবাইক, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। রমজানেও কমেনি অবৈধ যানবাহনের দাপট।
অপরদিকে নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ, বাদুরতলা, ঝাউতলা, রানীর বাজার, শাসনগাছা, কান্দিরপাড়, রামঘাট, মনোহরপুর, টমছমব্রিজ চৌরাস্তার মোড়, রাজগঞ্জ ও চকবাজার এলাকায় যানজটের ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। ঈদ ঘিরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কান্দিরপাড় মনোহরপুর এলাকার সড়কগুলোর দুই পাশের ফুটপাত দখল করায় যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে। এসব এলাকায় সড়কের যত্রতত্র অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিকশা থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার কারণে যানজটের 
সৃষ্টি হয়।
নগরীর সাত্তার খান কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘অবৈধ অটোরিকশা, ইজিবাইকগুলো বেআইনিভাবে শহরে চলাচল করলেও এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। শহরে অবৈধ যানবাহনের দাপট বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে নগর কর্তৃপক্ষেরও কোনো তদারকি চোখে পড়ে না। টমছমব্রিজ থেকে কান্দিরপাড় সড়কে ১০ মিনিটের পরিবর্তে কখনও ৩০ মিনিট লাগে।’ 
কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল জানান, বৈধ-অবৈধ যানবাহনের চাপে শহরে যানজট অনেকটা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এতে জনগণকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে কুমিল্লা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সারোয়ার মো.

পারভেজের ভাষ্য, সামনে ঈদুল ফিতর। শহরে ক্রেতা সমাগম ক্রমেই বাড়ছে। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচলও বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৮০ জন জনবল দিয়ে যানজট নিরসনে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের অবৈধ এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ 
করার কথা।’
কুসিকের লাইসেন্স পরিদর্শক কাজী আতিকুর রহমান সমকালকে জানান, ২০২৩ সালে প্রয়াত মেয়র আরফানুল হক রিফাত পায়ে চালিত রিকশা ও মিশুক নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর বাস্তবায়ন হয়নি। যানবাহনের সব ধরনের লাইসেন্সই এখন বন্ধ। কখন চালু হবে তাও জানা নেই।
কুসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলমের ভাষ্য, নগরীর সড়ক যানজটমুক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। কিন্তু হঠাৎ করেই এক দিনে অবৈধ রিকশা-ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ 
সম্মিলিত উপায়ে এ বিষয়ে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট য নজট নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে বাসাবাড়িসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নগরবাসীকে ডিএমপির নির্দেশনা

ঈদুল ফিতরে ঢাকা মহানগরীতে বাসাবাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের নিরাপত্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে নগরবাসীকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার ডিএমপির গণমাধ্যম এবং জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে এবং ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ডিএমপি সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ইতিমধ্যে ‘অক্সিলারি পুলিশ’ নিয়োগ করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ডিএমপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে পুলিশের গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে নিরাপত্তা সচেতনতাবোধ তৈরি করা গেলে, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ও অপরাধ দমনে অধিকতর সফল হওয়া সম্ভব।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিএমপির পক্ষ থেকে নেওয়া নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনাসমূহ মেনে চলার জন্য সম্মানিত নগরবাসীকে অনুরোধ করা হলো:

১. বাসাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তারক্ষীদের ডিউটি জোরদার করতে হবে এবং যেকোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা তদারক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসঙ্গে ছুটি প্রদান না করে একটি অংশকে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রাখা যেতে পারে, যাতে তারা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাব্যবস্থা সার্বিক তদারক করতে পারে।

২. বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ত্যাগের আগে দরজা-জানালা সঠিকভাবে তালাবদ্ধ করে যেতে হবে। প্রয়োজনে একাধিক তালা ব্যবহার করা যেতে পারে। দরজা-জানালা দুর্বল অবস্থায় থাকলে তা মেরামত করে যথাসম্ভব সুরক্ষিত করতে হবে।

৩. বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে এবং স্থাপিত সিসি ক্যামেরাসমূহ সচল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. বাসাবাড়ির মূল দরজায় অটোলক ও নিরাপত্তা অ্যালার্মযুক্ত তালা ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. রাতে বাসা ও প্রতিষ্ঠানের চারপাশ পর্যাপ্ত আলোকিত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. অর্থ, মূল্যবান সামগ্রী ও দলিল নিরাপদ স্থানে বা নিকটাত্মীয়র হেফাজতে রেখে যেতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাংক লকারের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

৭. বাসাবাড়ি ত্যাগের আগে যেসব প্রতিবেশী/পাশের ফ্ল্যাটের অধিবাসী ঢাকায় অবস্থান করবেন, তাঁদের বাসার প্রতি লক্ষ রাখতে অনুরোধ করতে হবে এবং ফোনে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।

৮. ভাড়াটেদের আগেই বাসার মালিককে ঈদ উপলক্ষে বাসা ত্যাগের বিষয়টি জানাতে হবে।

৯. অনুমতি ছাড়া কেউ যেন বাসা বা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে বাসা বা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীকে সতর্ক করতে হবে ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে।

১০. বাসাবাড়ি বা প্রতিষ্ঠান ত্যাগের আগে লাইট, ফ্যানসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক লাইনের সুইচ, পানির ট্যাপ, গ্যাসের চুলা ইত্যাদি বন্ধ করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. বাসা বা প্রতিষ্ঠানের গাড়ির গ্যারেজ সুরক্ষিত রাখতে হবে।

১২. বাসার জানালা/দরজার পাশে কোনো গাছ থাকলে অবাঞ্ছিত শাখা-প্রশাখা কেটে ফেলতে হবে, যাতে অপরাধীরা গাছের শাখা-প্রশাখা ব্যবহার করে বাসায় প্রবেশ করতে না পারে।

১৩. মহল্লা/বাড়ির সামনে সন্দেহজনক কাউকে/দুষ্কৃতকারীকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও থানাকে অবহিত করতে হবে।

১৪. ঈদে মহল্লা/বাসায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে বা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও থানাকে অবহিত করতে হবে।

জরুরি প্রয়োজনে পুলিশি সহায়তার জন্য যোগাযোগের কয়েকটি নম্বর দিয়েছে ডিএমপি।

ডিএমপি কন্ট্রোল রুমের নম্বর: ০১৩২০-০৩৭৮৪৫; ০১৩২০-০৩৭৮৪৬; ২২৩৩৮১১৮৮; ০২৪৭১১৯৯৮৮; ০২৯৬১৯৯৯৯।

জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর: ৯৯৯।

ঢাকা মহানগরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও জান-মাল রক্ষা ডিএমপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রে মহানগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে ডিএমপি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কঠোর অবস্থানে : সিএমপি কমিশনার 
  • ঈদে ঢাকাবাসীর জন্য ডিএমপির ১৪ নির্দেশনা
  • ঈদে বাসাবাড়িসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নগরবাসীকে ডিএমপির নির্দেশনা