সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও ভোজ্যতেলের বাজারে সংকট কাটেনি। পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামের বেশির ভাগ বাজারে মিলছে না চাহিদা মতো তেল। দোকানে সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে ভোক্তার লিটারে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ১০-১৫ টাকা। তারা বলছেন, এবারের মতো কোনো রমজানে এত ভুগতে হয়নি ভোজ্যতেল নিয়ে।
রমজানের শুরু থেকে চট্টগ্রামের বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট। ভুক্তভোগীরা একের পর এক অভিযোগ তোলায় বাজার নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হন মেয়র ডা.
বহদ্দারহাট বাজারে স্বাভাবিক সময়ে খুচরা দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত এক ও দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল সারি সারি সাজিয়ে রাখলেও এখন নেই সেই দৃশ্য। বাজারে গিয়ে কিছু দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা গেছে। বোতলের গায়ে ৮৫২ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে ৯০০ টাকার ওপরে। সরকার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করলেও তা কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। এই বাজারের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে চকবাজারেও দেখা গেছে একই রকম চিত্র।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৭ দিনে ১ লাখ টনের বেশি অপরিশোধিত তেল খালাস করা হয়েছে। একই সময়ে খালাস হয়েছে ২ লাখ টন সয়াবিন বীজও। সাতটি শিল্প গ্রুপ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত এসব খালাস করে। এ ছাড়া গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় ৩ লাখ টন। সরকার আমদানি বাড়াতে ও দাম কমাতে আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করলেও সুফল পাচ্ছে না ভোক্তা।
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সয়াবিন তেলের সংকটের পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত আছে। বাজার তদারকি করতে গিয়ে মনে হয়েছে কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী তেল সরিয়ে রেখেছে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তেল নিয়ে কারসাজি করছে। তারা চাহিদা মতো তেল সরবরাহ না করে নিজেদের গুদামে মজুত করছে।’
বহদ্দারহাটের আরএন ট্রেডিংয়ের মালিক মো. নওশাদ বলেন, ‘এখনও চাহিদা মতো তেল পাচ্ছি না। কয়েক সপ্তাহ আগে বুকিং দেওয়া তেল এখনও দোকানে আসেনি। তেল দিতে গড়িমসি করছে বেশির ভাগ কোম্পানি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ জ যত ল ব যবস রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীর ৯১৩ চালকলের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ
রাজশাহী বিভাগের ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তর। গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) এই সুপারিশ খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। চালকলগুলোর বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করবে মন্ত্রণালয়।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর জানিয়েছে, সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের চুক্তি না করা এবং চুক্তি করেও চাল না দেওয়ার কারণে এসব মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ৭৫১টি মিল চুক্তিযোগ্য হলেও তারা চাল সরবরাহের জন্য সরকারের সঙ্গে কোনো চুক্তি করেনি। এই মিলগুলোর মধ্যে ৪৫টি অটো রাইস মিল, বাকিগুলো হাসকিং মিল। এ ছাড়া ১৬২টি মিল সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও পর্যাপ্ত চাল সরবরাহ করেনি। এর মধ্যে ৩০টি মিল লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ চাল দিয়েছে, ৭১টি মিল ৫০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে।
আরো পড়ুন:
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ রাবি শিক্ষার্থীদের
রাবির গবেষণা: মাটি ছাড়াই উৎপাদন হবে সবুজ পশুখাদ্য
খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, বিভাগের আট জেলায় শুধু কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার ৩৫৯ টন, কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৯৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭ শতাংশ। কৃষকরা প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৩২০ টাকা দরে সরকারি গুদামে বিক্রি না করে খোলা বাজারে ১ হাজার ৪৫০ টাকা কিংবা তার কিছু কম-বেশি দরে বাজারে বিক্রি করেছেন।
মিলারদের কাছ থেকে সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন, তবে সংগ্রহ হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন। আতপ চালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন, যেখানে সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৯ টন। চলতি মৌসুমে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানো হলেও কাঙ্খিত পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহ সম্ভব হয়নি।
খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, সরকারি গুদামে চালের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় মিলাররা পুরোনো চাল সরবরাহ করেছেন। আবার বাজারে দাম বেশি হওয়ায় অনেকে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেননি। এ জন্য শাস্তি এড়াতে কিছু মিল মালিক ভারত থেকে আমদানি করা পুরোনো চাল সরবরাহ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, “যেসব মিল চুক্তি করেনি বা চুক্তি করেও চাল সরবরাহ করেনি, তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমরা ৯১৩টি মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। এখন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি আরো বলেন, “যেসব মিল ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে, তাদের জামানত থেকে টাকা কেটে জরিমানা করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর যারা কোনো চাল সরবরাহ করেনি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় এগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ