সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে বিকাশে ‘ডোনেশন’ সেবা
Published: 21st, March 2025 GMT
বাবা নেই তিন বছর হলো। বাবা বেঁচে থাকতে তাদের দিনাজপুরের বাড়িতে রমজান মাসজুড়ে প্রতিদিন কয়েকজন মানুষকে ইফতার করাতেন। ঢাকার কর্মজীবনের ব্যস্ততার কারণে রান্না করে কাউকে খাবার দেওয়া সম্ভব হয় না তৌহিদের। তবে বাবার মতো রমজানজুড়ে কিছু মানুষকে ইফতার করানোর কাজটা ছাড়েননি তিনি। মাস্তুল ফাউন্ডেশনের মেহমানখানার মাধ্যমে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনজন মানুষের ইফতারের ব্যবস্থা করেন তৌহিদ। প্রতিজন ৪০ টাকা হিসাবে ১২০ টাকা বিকাশ অ্যাপ থেকে অনুদান পাঠান তিনি। বাবা বলতেন, অসহায় মানুষকে খাওয়ানোর মতো শান্তি আর কিছুতে নেই। তৌহিদ বলেন, ‘বাবা যে শান্তির কথা বলতেন, আমি কিছুটা হলেও এখন তা অনুভব করতে পারি, অফিসের কাজের ফাঁকেই বিকাশ থেকে টাকা পাঠাই। সেই টাকায় ইফতার করেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ।’
শুধু মাস্তুল ফাউন্ডেশনের মেহমানখানাই নয়, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন, মজার স্কুল, জাগো ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিদিন লাখো মানুষের সাহ্রি-ইফতারের ব্যবস্থা করে। সারাদেশে তৌহিদের মতো অসংখ্য মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুদানে আয়োজন করা হয় লাখো মানুষের খাবার। অসংখ্য মানুষের ক্ষুদ্র অনুদানকে একত্র করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর কাজ গতিশীল রাখে বিকাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবা প্ল্যাটফর্ম।
যাঁর সাহায্য প্রয়োজন আর যিনি সাহায্য দিতে চান তাদের মাঝে দূরত্ব এখন আর বাধা নয়। গ্রহীতা-দাতার মাঝে এই দূরত্ব দূর করে বিকাশের মতো প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে মানবিক ও সামাজিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার বিশ্বস্ত মাধ্যম। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা দূরত্বের দেয়াল ভেঙে মানুষের ভালোবাসা পৌঁছে যাচ্ছে সঠিক ঠিকানায়। উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে দানের প্রচলিত পদ্ধতিতে বিকাশ এনেছে আমূল পরিবর্তন; নিশ্চিত করছে প্রতিটি সাহায্য যেন দ্রুত আর নিরাপদে পৌঁছে যায় সঠিক মানুষের কাছে।
যাঁর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাঁর কাছে দানের টাকা পৌঁছানোটাও একসময় কঠিন ছিল। তবে এখন বিকাশের গ্রাহকবান্ধব ডোনেশন ইন্টারফেস বাধা দূর করেছে। স্মার্টফোনের কয়েকটি ট্যাপেই ৪০টি সংস্থার মাধ্যমে অসহায় মানুষের জন্য সাহায্য পাঠানো যাচ্ছে। যিনি দান করছেন তার জন্য দানের প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় মানবিকতার প্রকাশ এখন আরও সাবলীল হয়েছে এবং আরও বেশি মানুষ তার সাধ্যমতো দান করছেন।
বিকাশের ডোনেশনের বদৌলতে যাদের জীবনে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে, তাদের একজন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের শাহিদা। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুই সন্তানের মা, স্বামী পরিত্যক্ত শাহিদার জীবনের গল্পটি কঠিন বাস্তবতার এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। দুই সন্তানকে নিয়ে চলছে তাঁর জীবনসংগ্রাম। ‘গ্রামেই থাকি। ২০ বছর হইছে একদিনও শ্বশুরবাড়ি যাওনের ভাগ্য হয় নাই। সংসার করা আমার কপালেই নাই’– বলতে বলতে নিজের ছাপড়া ঘরটার দিকে শূন্যদৃষ্টিতে তাকান শাহিদা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মেয়ের দায়িত্ব নিলেও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসার খরচ জোগানো তার সাধ্যের বাইরে ছিল। নিজে দিনভিত্তিক কাজ করলেও সেই আয়ে চিকিৎসা সেবা চালানো প্রায় অসম্ভব। সঠিক চিকিৎসার অভাবে তার বড় ছেলে আল-আমিনের ১৫ বছর বয়সেও শারীরিক বৃদ্ধি হয়নি। সন্তানদের বাঁচাতে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি।
শাহিদার কঠিন সংগ্রামে পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ডের টাকায় এখন চিকিৎসা পাচ্ছে তার সন্তানরা। সারাদেশ থেকে বিকাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে আসা দান কাজে লাগিয়ে এই ফাউন্ডেশন শাহিদার সন্তানদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে। শাহিদার মতো এমন হাজারো অসহায় অভিভাবক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত সন্তানদের নিয়ে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আসেন একটু সহযোগিতা পাওয়ার আশায়।
থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ডাক্তার জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ‘এই ফাউন্ডেশনে সাড়ে সাত হাজার নিবন্ধিত রোগী রয়েছে, যাদের চিকিৎসা সেবা এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে যে কোনো পরিমাণের টাকা অনুদান দেওয়া যায়, যে কোনো ব্যক্তি তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী অনুদান দিতে পারেন। বিভিন্নভাবেই অনুদানের অর্থ দিতে পারেন। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে দাতা তাঁর সাধ্যমতো যতটুকু টাকা পাঠাতে চান, তার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো বিকাশ।’
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ার পাট চুকিয়ে সবে চাকরি পেয়েছেন আসমা। আসমার ভাষায়, ‘আমার মনে হয় শিক্ষা একজন মানুষেরই নয়, একটি পরিবারেরও মুক্তি আনতে পারে। আমার স্বল্প সামর্থ্যে তাই আমি প্রতিমাসে অভিযাত্রিকের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু অনুদান পাঠাই। বিকাশের মাধ্যমে এই অনুদান পাঠানোর ব্যবস্থা আমাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা সবাই যদি আমাদের সাধ্যমতো এভাবে দান করি তাহলে যাদের প্রয়োজন তারা সবাই সহায়তা পেতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস।’
বিকাশ অ্যাপ থেকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট, প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন, অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন, ডোনেশন ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, প্রথম আলো ট্রাস্ট, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, মজার ইশকুল, জাগো ফাউন্ডেশন, শক্তি ফাউন্ডেশন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সাজিদা ফাউন্ডেশন, মির্জাপুর এক্স ক্যাডেটস অ্যাসোসিয়েশন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, এসওএস চিলড্রেন ভিলেজ বাংলাদেশ, আইসিডিডিআর,বি, ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ– এ রকম প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহজেই অনুদান দিতে পারছেন মানুষ। বিকাশের মাধ্যমে ডোনেশনের বিস্তারিত জানতে পারেন এই লিঙ্কে: https://www.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিন ফিফটিতে স্কটিশদের বিপক্ষে রেকর্ড রান জ্যোতিদের
পাকিস্তানে ২০২৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে প্রথম দুই ম্যাচে থাইল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। মঙ্গলবার তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭৬ রান করেছে বাংলাদেশ।
ওয়ানডে ফরম্যাটে যা বাংলাদেশ নারী দলের সর্বোচ্চ রান। বড় এই রান করার পথে বাংলাদেশ নারী দলের তিন ব্যাটার ফিফটি করেছেন। তারা হলেন- ওপেনার ফারজানা হক, তিনে নামা ব্যাটার শারমিন আক্তার সুপ্তা ও চারে ব্যাট করা অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।
লাহোরের স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠে এদিন টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তবে ওপেনিং জুটি ঠিক জমেনি। ইসমা তানজিম ও ফারজানা ৩৫ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন। ইসমা ফিরে যান ১৪ রান করে। সেখান থেকে ফারজানা ও শারমিন ১০৩ রান যোগ করেন। শারমিন ফিরে যান ৭৯ বলে ৫৭ রান করে। সাতটি চার মারেন তিনি।
পরেই আউট হন ফারজানা। তার ব্যাট থেকে ৮৪ বলে ৫৭ রানের ইনিংস আসে। ছয়টি চারের শট মারেন এই ওপেনার। এরপর নিগার সুলতানা ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলের রান বড় করেন। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার ৫৯ বলে ৮৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। তার ব্যাট ১১টি চারের শট আসে। এছাড়া ঋতু মনি ১২ ও ফাহিমা খাতুন ২২ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলেন।
ওয়ানডে ফরম্যাটে এর আগে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সর্বোচ্চ রান ছিল ২৭১। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ওই রান করেছিল জ্যোতির দল। ওই ম্যাচে ১৭৮ রানে জিতেছিল নারী ক্রিকেট দল। তার আগে গত বছর মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করা ২৫২ রান ছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সর্বোচ্চ রান।