নিশ্চিন্তপুর। ছোট্টমোট্ট এক গ্রাম। এই গ্রামের একমাত্র স্কুল নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রোজ সকালে স্কুল মাঠে ওড়ানো হয় আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের পতাকা। একদিন চতুর্থ শ্রেণিতে রুমা মিস বলেন, এই পতাকা কেবলই কাপড়ের টুকরো নয়; এ আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সংগ্রাম আর বিজয়ের প্রতীক। চলো, আজ তোমাদের পতাকার গল্প শোনাই। সবাই আগ্রহ নিয়ে বলে, জি মিস, আমরা শুনতে চাই।
রুমা মিস বলেন, ‘শুরুতে আমরা জানবো আমাদের পতাকা কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ। তারও আগে বলবো রঙের কথা। শোনো, আমাদের পতাকার দুটি রং। সবুজ আর লাল। এই সবুজ রং আমাদের দেশের সুন্দর প্রকৃতি, মাঠ, নদী আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক। আমরা যেখানে বাস করি, আমাদের গ্রাম, মাঠ, গাছপালা, আর নদীনালা আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তোলে। এই সবুজ রং আমাদের দেশের কৃষি, জীবনধারা আর প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের দেশের প্রতিটি গ্রামের কৃষক, মৎস্যজীবী, কামার, কুমার সবার শ্রমে এই সবুজ রঙে মিশে আছে। সবুজ আমাদের দেশের প্রাণ!’
এরপর একটু থেমে লাল রং দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই লাল রং আমাদের দেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলছে। ১৯৭১ সালে, যারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন, তাদের ত্যাগ আর রক্তের মূল্য এই লাল রঙে বোঝা যায়। আমরা তাদের ভুলতে পারি না, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। তারা মিশে আছেন এই লাল রঙে। তাই লাল রং আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ।’
ক্লাসের সবাই নীরব হয়ে মিসের কথা শুনছে। রিমি, সুমিতসহ আরও অনেকেই একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। তারা নিজেদের পতাকার জন্য গর্ব অনুভব করে। মিস চলে যাওয়ার পর ক্লাসের সবাই দেশ নিয়ে তাদের অনুভূতি শেয়ার করতে থাকে। রিমি বলে, ‘আমি আজ বুঝতে পেরেছি, আমাদের দেশের পতাকা কেন এতোটা প্রিয়। এটি শুধু কাপড় নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, আমাদের পরিচয়।’ সুমিত বলে, ‘আমরা যেখানেই থাকি না কেন, এই পতাকা সবসময় আমাদের হৃদয়ে থাকবে!’
স্কুলের ছাদে পতপত উড়ে চলা পতাকাটি যেন তাদের মনে শক্তি জোগাচ্ছিলো, তারা সবাই বলে, একদিন তারা বড় হয়ে দেশের জন্য কিছু করবে, যাতে পতাকা কখনো নিচে না নামে। রিমি বলে, ‘বড় হয়ে, দেশের জন্য এমন কিছু করতে চাই, যাতে প্রিয় লাল-সবুজের পতাকার সম্মান আরও বেড়ে যায়!’ n
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র দ শ র র স ব ধ নত আম দ র প র জন য সব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
বৈঠকে বসছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা, শিথিল ব্লকেড কর্মসূচি
ছয় দফা দাবিতে বুধবার দিনভর অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। ফলে তাদের পূর্ব ঘোষিত সারা দেশে ‘রেল ব্লকেড’ কর্মসূচি শিথিল থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরারের সঙ্গে বৈঠক করবেন শিক্ষার্থীরা।
আজ সকালে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’ এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে এবং শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বানে আজ বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’। সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিধান্তক্রমে বৈঠক চলাকালীন সময়ে রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে। বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জন্য পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এর আগে বুধবার ৬ দফা দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সরকারি, বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীরা।
ঢাকার তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন তারা। ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলোতে একযোগে তারা নামায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোগান্তিতে ছিল পুরো নগরী। পরে সন্ধ্যায় রেল ব্লকেড কর্মসূচি দিয়ে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা যে ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন সেগুলো হলো—জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে। এছাড়া, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা/রায়হান/ইভা