খুলনায় সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়া, ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ
Published: 21st, March 2025 GMT
খুলনা মহানগরীতে আবারও সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ৮-১০টি মোটরসাইকেলে একদল সন্ত্রাসী নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে এসে ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করে। পরে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলে পিস্তলের তিনটি গুলির খোসা পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে সন্ত্রাসীরা গুলির খোসাগুলো তুলে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নগরীতে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার প্রায় আধা ঘণ্টা পর সোয়া ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম সমকালকে বলেন, নগরীর প্রতিটি মোড়ে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সশস ত র দ র ব ত ত
এছাড়াও পড়ুন:
সামাজিক অপরাধ বন্ধে আরও তৎপরতা চাই
সামাজিক অপরাধ মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা পদক্ষেপ নিলেও তাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ। ঘরে–বাইরে নানা ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে তারা, বিশেষ করে নারী ও শিশু। কিছুদিন আগে মাগুরায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়ে গেল। বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়ি পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। এটা ছিল নৃশংসতার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। যদিও আমরা মনে করি, কোনো অবস্থায় আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
মাগুরার শিশু ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখ আদালতে ১৪৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে নিজের দোষও স্বীকার করেছেন। কেবল মাগুরার ঘটনা নয়, বিভিন্ন স্থানে যেভাবে নারী ও শিশু নির্যাতন বাড়ছে, তাতে যেকোনো নাগরিকেরই উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২৯৪ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৯৬ জন, যার মধ্যে ৪৪ জনই শিশু। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বেশি।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ২টি দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ১৪টি ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুক্রবার প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, এক দিনে ধর্ষণের শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাত নারী ও শিশু। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এসব ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক গ্রুপ ইউএনএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক, যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন।
আমাদের ধারণা ছিল, মাগুরার শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে সারা দেশে যে জাগরণ তৈরি হয়েছে, তাতে শিশু ও নারী ধর্ষণের ঘটনা কমবে। কিন্তু ওপরের পরিসংখ্যান ভিন্ন চিত্রই তুলে ধরে। জুলাই অভ্যুত্থানের এক শহীদের কবর জিয়ারত করে বাড়িতে ফেরার পথে তাঁর মেয়ে ধর্ষণের শিকার হন। ঘটনাটি ঘটে ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার একটি গ্রামে। যে ব্যক্তি জুলাই অভ্যুত্থানে জীবন দিলেন, তাঁর কন্যাকে এই রাষ্ট্র ও সমাজ নিরাপত্তা দিতে পারল না! সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আসামিদের বিচার করার কথা বলেছেন। কিন্তু শহীদকন্যার মর্যাদা কি আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব?
সরকার বলছে, ধর্ষণের সব ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দ্রুত বিচার করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা থামানোর জন্য সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। সব ধরনের সম্প্রচারমাধ্যম, পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনমূলক প্রচার চালাতে হবে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছে, যাতে প্রস্তাবিত আইনে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময়সীমা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার আলাদাভাবে করার কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু এসব আইন তো প্রয়োগ করা হবে অপরাধ সংঘটনের পর। অপরাধটি যাতে সংঘটিত না হয়, সে বিষয়ে সরকারের কি কিছুই করণীয় নেই? আর অপরাধী ধরা পড়লেই যে শাস্তি হবে, তার নিশ্চয়তা কী? প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছিল যে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার ৩ শতাংশ অভিযুক্ত ব্যক্তি শাস্তি পান। বাকিরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যান। এসব ফাঁকফোকর বন্ধ করা প্রয়োজন।