সোলানিন, দুর্ভিক্ষ ইতিহাস ও বাস্তবতা
Published: 21st, March 2025 GMT
বাজার থেকে আলু কেনার সময় হালকা সবুজের আভা ছিল কিন্তু রোদ পড়ায় সেগুলো অধিকতর সবুজ হয়ে উঠেছে। দেখতে অদ্ভুত লাগলেও আদতে এই রং বহন করছে বিষাক্ততার ইঙ্গিত। সবুজ আলুর ভেতর থেকে স্মৃতিপটে ভেসে উঠল জ্বরাব্যাধি দুর্ভিক্ষের ইতিহাস– ডালনার আলুগুলো ফেলে দিতে হলো।
সবুজ আলু, জখমি আলু, ব্লাইট ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত অসুস্থ আলুতে সোলানিনের পরিমাণ মাত্রাহীনভাবে বেড়ে যায়; যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ক্ষতিকর হতে পারে। এতে মাথাব্যথা, পেটব্যথা, বমি-ডায়রিয়া থেকে শুরু করে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম ড্যামেজ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। মানুষ দুঃখ-কষ্ট ভুলে যেতে চায়, কষ্টকর দিনের কথা মনে রাখতে চায় না; আমরাও ভুলে যাচ্ছি জগৎজোড়া দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর করুণ ইতিহাস। যুদ্ধ চলাকালে সাধারণ মানুষ ও সৈনিকদের খাদ্যের যে রেশন দেওয়া হয় তাতে কখনও কখনও পচা আলু থাকে, যা খাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না তাদের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে এমনটা ঘটেছিল জার্মান সৈনিকদের ভেতর। একযোগে ৫৬ জন সৈনিক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে কেউ মারা যান। ১৯৫২ সালে যুদ্ধের সময় উত্তর কোরিয়ায় আলু খেয়ে মারা গেলেন ২২ জন। রোগাক্রান্ত আলু খেয়ে অসুস্থ হওয়ার এমনি অসংখ্য ঘটনা আমাদের অজ্ঞাত রয়ে গেছে। আলুর ব্লাইট রোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারত-উপমহাদেশের এক বিপুল উৎসর্গের ইতিহাস– সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে নারীদের। আয়ারল্যান্ডে ১৮৪৫-৪৯ সাল পর্যন্ত কয়েক বছর লাগাতার প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ ছিল আলুর উৎপাদন ভয়ানকভাবে কমে যাওয়ার জন্য। এই মন্বন্তরে প্রায় ১০ লাখ লোক মারা গিয়েছিল আর ২০ লাখ লোক দেশান্তরী হয়েছিল। রোগটি প্রাথমিকভাবে বিস্তার লাভ করেছিল মেক্সিকো অঞ্চলে। আমেরিকা থেকে রোগটি গিয়েছিল ইউরোপে। গোটা ইউরোপ, আমেরিকা ও বিশ্বের বহু দেশে এর বিস্তার দেখা গেলেও আয়ারল্যান্ডে ছিল সবচেয়ে বেশি। কারণ মাত্র একটিই আলুর জাত ‘আইরিশ লাম্পার’ উৎপাদিত হতো সেখানে। অন্যান্য দেশে বিভিন্ন জাত থাকায় যেসব জাত ব্লাইটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল; সেগুলো চাষ করা হয়েছে, ক্ষতিটা তেমন ভয়াবহ হতে পারেনি। ১৮৪৫ সালে আয়ারল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ শুরু হলে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল বিশ্বের অনেক দেশ। বাঙালি নারীরা খুলে দিয়েছিলেন তাদের হাতের বালা, গলার মালা। ভারত-বাংলাদেশে সবুজ আলু সম্পর্কে কিছু অজ্ঞতা থাকলেও ব্লাইট সম্পর্কে নেই। ব্লাইট রোগ দেখা যায় নাইটশেড পরিবারের উদ্ভিদগুলোয়– যেমন আলু, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি। দুই ধরনের ব্লাইট রোগ–আর্লি ব্লাইট ও লেট ব্লাইটের মধ্যে লেট ব্লাইট বা নাবি ধসা রোগই আলুর জন্য সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। এ রোগে প্রথমে আলু গাছের পাতার কিনারে সাদা-বাদামি দাগ দেখা দেয়; যা বিস্তৃত হতে হতে গাছ নষ্ট হয়। এরপর এই ছত্রাক মাটিতে প্রবেশ করে আলুও নষ্ট করে ফেলে। আলু চাষ শেষ হয়ে গেলেও এরা বেঁচে থাকে মাটিতে ও সংরক্ষিত আলুর ভেতরে।
লেট ব্লাইট রোগটি কমপক্ষে ১৫০ বছরের পুরোনো। এর চিকিৎসা করা হয় ৬৪ শতাংশ ম্যানকোজেব এবং ৮ শতাংশ মেটালেক্সিল মিশিয়ে। সুস্থ আলুগাছের পাতা-কাণ্ড-শিকড়ে প্রচুর সোলানিন থাকলেও আলুতে থাকে হালকা পরিমাণ; যা সহনীয় মাত্রার, মাত্রা বেড়ে গেলেই বিপদ। গাছ আত্মরক্ষার জন্য যে ‘সোলানিন টক্সিন’ তৈরি করছে তা ক্ষতিকর হয়ে পড়ছে মানুষের জন্য। অতএব কাটা আলু, সবুজ আলু, ব্লাইট ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত আলুকে কিছুতেই খাদ্যের উপযোগী বলে মেনে নেওয়া যায় না। একেবারে গার্ডেন-ফ্রেশ না হলে আলুর ছালে যতই ভিটামিন থাকুক, বর্তমান দিনকালে ছাল না খুলে আর আলু না কেটে কখনও তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল ইট র গ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভিসা জটিলতা নিরসনে ব্যবস্থা নিতে ইতালির প্রতি আহ্বান
বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা আবেদন নিষ্পত্তির যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এবং বিদ্যমান ভিসা জটিলতা দ্রুত সমাধানে ইতালির দূতাবাসকে অনুরোধ করেছে ঢাকা।
বুধবার (১৯ মার্চ) পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো। ওই সময় এ বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে সচিব এ আহ্বান জানান।
পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
আলোচনাকালে পররাষ্ট্র সচিব ভিসা আবেদনের বিশেষ করে অভিবাসী কর্মীদের আটকে থাকা ভিসার বিষয়টি উত্থাপন করেন।
তিনি আরো বলেন, “ভিসা প্রদানে এই ধরনের বিলম্বের ফলে ওয়ার্ক পারমিট (নুলা ওস্তাস) মেয়াদোত্তীর্ণ বা বাতিল হতে পারে। এতে ভিসা প্রার্থী ও তাদের পরিবারের উপর বিশাল আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।”
রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো এই বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত বছরের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া সকল লুল্লা ওস্তাস বর্তমানে ইতালিয় সরকারের নতুন আইনের অধীনে স্থগিত রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “আইনটি গৃহীত হওয়ার আগে যারা ইতিমধ্যেই ভিসা আবেদন জমা দিয়েছেন তাদের ভ্রমণ নথি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
রাষ্ট্রদূত আরও জানান যে, লুল্লা ওস্তার পুনঃপরীক্ষা প্রক্রিয়া কেবল ইতালির প্রাদেশিক অভিবাসন কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হয়, যারা লুল্লা ওস্তা নিশ্চিত বা বাতিল করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, “মুলতুবি থাকা লুল্লা ওস্তার যাচাই-বাছাইয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনও ক্ষমতা দূতাবাসের নেই।”
প্রক্রিয়াকরণের সময় সম্পর্কে একটি প্রশ্নের বিষয়ে, ইতালিয় রাষ্ট্রদূত ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, দূতাবাস ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিটি ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অবস্থানে নেই।
বাংলাদেশে গৃহীত কাজের ভিসা আবেদন এবং ইতালিতে ‘ফ্লো ডিক্রি’ বাস্তবায়নের বাধ্যতামূলক নিয়ন্ত্রণের জন্য কখনও কখনও ৯০ দিনেরও বেশি সময় লাগে।
“লুল্লা ওস্তা”-এর মেয়াদ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো বলেছেন, “আইনত স্থগিতাদেশের ফলে মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে।”
রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো পররাষ্ট্র সচিবকে আশ্বস্ত করেছেন, তিনি ইতালির উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে মুলতবি থাকা লুল্লা ওস্তাসের পুনঃপরীক্ষা দ্রুত করার এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যাটির সমাধানের অনুরোধ পৌঁছে দেবেন।
ঢাকা/হাসান/ইভা