‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও/বাকির খাতা শূন্য থাক/দূরের বাদ্য লাভ কি শুনে/মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক।’ চমৎকার চরণগুলো ওমর খৈয়াম রুবাইয়ের অনুবাদ। ‘রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম’ পারস্য সাহিত্যের এক সমৃদ্ধ নাম। রুবাই বলতে বোঝায় চার লাইনের কবিতা বিশেষ। এর বহুবচন হলো রুবাইয়াত। একটিমাত্র ভাবকে হৃদয়গ্রাহী করে ফুটিয়ে তোলা হয় চার চরণের মধ্যে। এর অন্ত্যমিলে লক্ষ্য করা যায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রেম, দ্রোহ, আনন্দ, বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে রুবাইয়ের ছত্রে ছত্রে। পণ্ডিতরা এগুলোকে ওমরের দার্শনিক সত্তার প্রকাশ বলেই মানেন। হাজার বছর আগের মানুষ ওমর খৈয়ামের জন্ম ইরানের খোরাসানের নিশাপুর শহরে। পুরো নাম গিয়াস উদ্দিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়াম। পরিচিতি পেয়েছেন ওমর খৈয়াম নামে। জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন ও গণিতশাস্ত্রের পাশাপাশি নাম লিখিয়েছেন সাহিত্যের খাতায়। উপমা, রূপক আর ভাবগাম্ভীর্যের কবিতাগুলোকে করেছেন ক্ষুরধার।
খৈয়ামের এই চৌপদি কবিতা পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত। দুষ্প্রাপ্য অনুবাদগুলো বিক্রি হয় চড়া দামে। অনেকের কাছেই রুবাইয়াত সংগ্রহ দারুণ শখের বিষয়। তেমনই এক সংগ্রাহক ইউসুফ আলী সরকার। দীর্ঘ ২০ বছর থেকে খোঁজে ফিরছেন ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত। কোথাও ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতের সন্ধান পেলে সংগ্রহ করার জন্য ওঠেপড়ে লাগেন। একেক করে সংগ্রহ করছেন ৪৯টি বাংলা এবং ২০টি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদকৃত রুবাইয়াত; যার বেশির ভাগই বর্তমানে দুর্লভ। ইউসুফ আলী সরকারের জন্ম ১৯৮৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার আবুদিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা তারিকুল ইসলাম ও মা বীণা বেগম। ঢাকা কলেজ থেকে ভূগোল বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একটি ব্যাংকে কর্মরত।
বইপাড়ায় ইউসুফ আলী সরকারের বেশ নামডাক। পুরোনো বই বিক্রেতা ও পাঠকদের কাছে তিনি পরিচিত মুখ। ইউসুফ আলী সরকার বলেন, দাদা হবিবর রহমান ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বই পড়ার শুরুটা হয় স্কুলশিক্ষক এই দাদার হাত ধরেই। শৈশবেই পেয়ে বসে বই সংগ্রহের নেশা। একেক করে প্রায় সাড়ে চার হাজার বই নিয়ে নিজবাড়িতে গড়ে তুলেছেন একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার। সংগ্রহের বেশির ভাগ বই দুষ্প্রাপ্য। বাড়ির একটি কক্ষে কয়েকটি আলমারিতে স্তরে স্তরে সাজানো পুরোনো বইপত্র। মনে হয় যেন এক প্রাচীন গ্রন্থশালার পুঁথিঘর। বাতাসে পুরোনো কাগজের গন্ধ। ২০০৫ কি ২০০৬ সাল। তখন টিউশনির টাকায় বই সংগ্রহ করেন ইউসুফ। নীলক্ষেতের দুর্লভ একটি বই ২ হাজার টাকা দাম হাঁকলে তিনি রক্ত বিক্রি করে টাকা নিয়ে ফিরে এসে দেখেন বইটি নেই। তবে বই সংগ্রহের শখ শিকেয় ওঠেনি মোটেও। রুবাইয়াত সংগ্রহ শুরু করেন ২০০৪ সাল থেকে। তাঁর কথায়, ‘রুবাইয়াতগুলোর তাৎপর্য অনেক গভীর। প্রতিটি রুবাইয়ের সঙ্গে জীবনের কোনো না মিল খুঁজে পাওয়া যায়। রুবাইয়ের সঙ্গে মিল রেখে আঁকা ছবি ও অলংকরণ বইগুলোকে বিশেষ মাত্রায় রূপ দিয়েছে। ১৯০০ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে যেসব বই ছাপা হয়েছে, সেগুলো আকারে বেশ ছোট এবং অলংকরণ খুব আকর্ষণীয়। বইয়ের জগতে এসব অমর সৃষ্টি। তাই এগুলো সংগ্রাহকদের সংগ্রহের প্রথম তালিকায় থাকে।’
ইউসুফ আলী সরকারের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতের যেসব বাংলা অনুবাদ রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেখক হলেন– পণ্ডিত শ্রী শ্যামাচরণ কবিরত্ন, নরেন্দ্র দেব, কান্তি চন্দ্র ঘোষ, ড.
ইউসুফের জীবনে ওমর খৈয়াম গভীর প্রভাব বিস্তার করেছেন। ইউসুফ নিজেও রুবাই লিখেছেন। শোনালেন গভীর জীবনবোধ নিয়ে লেখা একটি রুবাই– ‘হয়তো তোমাদের দিয়েছি কষ্ট, শত সে মনে ব্যথা।/দেখিবে যে দিন দিবা-রাত্রি জেগেও, কইব না আর কথা।/নিশ্চুপ মনে চলিব একাকী অনাগত সে পথে।/সন্ধ্যা তারার সিক্ত আলোতে ভিজাই নয়ন রথে।’
‘বঙ্গীয় ভাষায় ওমর খৈয়াম’ নামে একটি বই প্রকাশের আগ্রহ এবং ভবিষ্যতে পাঠাগার ও ডিজিটাল আর্কাইভে তাঁর সংগ্রহ উন্মুক্ত করা কথা জানান। যেখানে ওমর অনুরাগীরা পাবেন প্রিয়ার বিনোদ বেণীর ঠাট।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ওমর খ য় ম র অন ব দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সার্ভেয়ার নামের নতুন অ্যাপ আনল অ্যাপল, ব্যবহার করতে পারবেন যাঁরা
নিজেদের ম্যাপিং সেবা আরও উন্নত করতে সার্ভেয়ার নামের নতুন অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে অ্যাপল। অ্যাপটি চালু করে ব্যবহারকারীরা সহজেই তাদের পার্শ্ববর্তী ভৌগোলিক ও অবকাঠামোগত তথ্য সংগ্রহ করে অ্যাপলের কাছে পাঠাতে পারবেন। এরপর তথ্যগুলো নিজেদের ম্যাপস সেবায় যুক্ত করে বর্তমানের তুলনায় আরও নির্ভুলভাবে পথের দিকনির্দেশনা দেখাবে অ্যাপল।
সার্ভেয়ার অ্যাপটির মাধ্যমে মূলত রাস্তার নামফলক, ট্রাফিক সিগন্যালসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করবে অ্যাপল। এর ফলে অ্যাপল ম্যাপস ব্যবহারকারীরা বর্তমানের তুলনায় নির্ভুল নেভিগেশন সুবিধা পাবেন। অ্যাপ স্টোর থেকে বিনা মূল্যে নামানো গেলেও সার্ভেয়ার অ্যাপটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য নয়। এটি মূলত অ্যাপলের নির্দিষ্ট অংশীদার প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে সার্ভেয়ার অ্যাপটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রে চালু করা হয়েছে। অ্যাপটি চালুর পর নির্দিষ্ট কাজ বাছাই করলেই তথ্য সংগ্রহের প্ল্যাটফর্ম প্রিমাইজ চালু হবে। প্রিমাইজ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ছোট ছোট কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায়। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে, অ্যাপলের কাছে পার্শ্ববর্তী ভৌগোলিক ও অবকাঠামোগত তথ্য জমা দিয়ে অর্থ বা পুরস্কার পাওয়া যাবে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি অ্যাপল।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ম্যাকরিউমার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবহারকারী যখন প্রিমাইজ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ম্যাপিং-সংক্রান্ত কোনো কাজ গ্রহণ করবেন, তখন তাঁকে সার্ভেয়ার অ্যাপ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট রাস্তায় চলাচলের সময় গাড়িতে মোবাইল যুক্ত করে ল্যান্ডস্কেপ মোডে ছবি তুলতে হবে।
সূত্র: নিউজ ১৮