চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে বইছে নানা ডামাডোল। অনেকে স্বপ্নের জাল বুনছেন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের। তবে খালি চোখে দেখলে মনে হতে পারে উল্টো স্রোত। আপামর বিপ্লবী জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐকমত্য প্রত্যাশা করেছিল, ক্ষেত্রবিশেষ তার মোহভঙ্গ হয়েছে। আশার কথাও রয়েছে। আওয়ামী লীগ যেন ফের স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে দেশের মানুষের ওপর জুলমবাদ প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, সে বিষয়ে সব দলই মোটামুটি একাত্মতা জানিয়েছে। এর মধ্যে আবির্ভাব ঘটেছে চব্বিশের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম থেকে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বহু মত-পথের মানুষের সম্মিলনও ঘটেছে এ দলে। এই মুহূর্তে বহু চর্চিত বিষয়– বহুধা বিভক্ত দেশে এমন ভিন্নধারার রাজনৈতিক দল আদৌ সফলতা পাবে কিনা! নাকি অন্য আট-দশটি রাজনৈতিক দলের মতো আদর্শ ও নেতৃত্বের বিভক্তিতে ক্ষমতার চোরাবালিতেই আটকে যাবে– সে প্রশ্নও রয়েছে। এখানে বলে রাখা ভালো, নতুন দলটি গঠন করার সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির দুই শীর্ষ নেতা, যারা সাবেক ছাত্রশিবির নেতা তাদের ফেসবুকে স্ট‍্যাটাস দিয়ে সরে যাওয়া কিছুটা হলেও এনসিপির জন‍্য ধাক্কা ছিল।
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দলীয় নেতৃত্বের গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব রয়েছে। অধিকাংশ দল পরিবারতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়, যেখানে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসার সুযোগ কম। ফলে রাজনৈতিক সংস্কার বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশে বিগত সময়ে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক কর্মীদের দমন-পীড়ন ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হবে, এমন কোনো আইন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। 

বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী ভারত এবং চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতার কারণে বাংলাদেশের জন্য সঠিক কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া, ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি এবং বেকারত্ব বাড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
নতুন রাজনৈতিক দলকে উল্লিখিত বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করেই জনগণের দ্বারে যেতে হবে। কারণ, বর্তমান সরকারে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠকদের প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে। এমনকি নতুন দলের প্রধান নাহিদ ইসলামও ছিলেন সরকারের উপদেষ্টা। পাশাপাশি এখনও দু’জন ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনীতি এবং দেশে কিছু গুণগত পরিবর্তন আনতে পারলে জনগণের আস্থায় যাওয়াটা তাদের জন্য সহজ হবে।

স্বৈরাচার পতন-পরবর্তী সময়ে দেশের এমন একটি সময়ে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত। কেবল রাজনৈতিক দলের উত্থান নয়, বরং নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হতে চলেছে নতুন এই দল ঘিরে– এমনটাই আভাস মিলছে রাজনীতির ময়দানে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বিভিন্ন পেশাজীবী ও নানাবিধ পরিচয়ের মানুষের রাজনৈতিক সংগঠন ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’, যেখানে নেতৃত্বের আসনে সুদৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই। ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট এই আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা নেতৃবৃন্দ। সেখানে নারী নেতৃত্বের আধিক্যও বেশ লক্ষণীয়। 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আধিপত্য বিরাজমান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও জনঅসন্তোষের ফলে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটবে– এটা ধারণাগত জায়গায় তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলেও হাসিনা সরকারের পতনের আগে ততটা পরিষ্কার ছিল না। তবে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের ফলে সেই উত্থান অনেকাংশেই নিশ্চিত হয়।
আওয়ামী লীগ বিতাড়িত হওয়ার পর বর্তমানে বেশ সুবিধাজনক অবস্থাতেই রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারিত হয়ে আসা রাজনৈতিক দলগুলো; বিশেষ করে বিএনপি এবং তার সমমনা দলগুলো। পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও ধীরে ধীরে রাজনৈতিক উৎকর্ষ অর্জনে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ দুই রাজনৈতিক দলের জন্যই এখন অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে নতুন রাজনৈতিক সংগঠনটিকে মোকাবিলা করা। কেননা, ছাত্র-জনতার বহুল কাঙ্ক্ষিত এ দলটি যে অন্যতম প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া তারুণ্যের যে নতুন সূর্য উদিত হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তা একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বারকে উন্মোচিত করেছে– এ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

সব দিক চিন্তা করে মানুষ প্রত্যাশা করে, জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্থান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি নতুন ভোরের সূচনা করবে। তরুণ নেতৃত্ব ও ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে দলটি জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। তবে সংগঠনের স্থায়িত্ব, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অভিজ্ঞতার অভাবসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঐক‍্যবদ্ধ থেকে নব্য উত্থিত এই রাজনৈতিক দলটি কতটা সফল হবে, তা বিবেচনার বিষয়। সম্ভাবনার জায়গা থেকে দেখলে বলা যায়, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য অগ্রগামী এ দলটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে, যা তাদের রাজনৈতিক রসদ বাড়াতে বেশ সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলটি জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হতে পারে।

মাহমুদ রাকিব: অ্যাসাইনমেন্ট ডেস্ক ইনচার্জ, এখন টেলিভিশন

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ দ শ র র জন ত র জন ত ক স র র জন ত ক জনগণ র র জন য সরক র স গঠন আওয় ম দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চামড়া শিল্পের সংকটে গণমাধ্যমের করণীয় বিষয়ক কর্মশালা

রাজধানীর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে ‘চামড়া শিল্পের সংকট : গণমাধ্যমের করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, চামড়া গবেষণা ইনস্টিটিউট, হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাসহ রাজশাহী, যশোর, খুলনা, সিলেট, শরিয়তপুর, মৌলভীবাজার, নাটোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা কর্মশালায় অংশ নেন।

চামড়া শিল্পের সংকট নিয়ে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন কর্মশালার পরিচালক ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মুত্তালিব, চামড়া গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার মো. আবুল কাশেম আজাদ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম।

কর্মশালায় আলোচকরা চামড়া শিল্পের বর্তমান বাস্তবতা, চামড়া শিল্পের সংকট নিরসনে কারিগরি পদক্ষেপসমূহ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রচলিত সংবাদ ও প্রত্যাশিত রিপোর্টিং এবং চামড়া শিল্পের সংকট নিরসনে সাংবাদিকের করণীয় বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন।

বক্তারা এতিমখানাগুলোকে সম্পৃক্ত করে বিনা সুদে অর্থায়নপূর্বক চামড়া সংগ্রহে উদ্ভাবনী বিজনেস মডেলের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সচেতনতা বৃদ্ধি, শিল্পের সংকট সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ও নীতিনির্ধারকদের অবহিত করতে গবেষণাধর্মী রিপোর্ট, নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন, শিল্প উদ্যোক্তাদের মতামত তুলে ধরা, টেকসই উন্নয়ন প্রচার পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্প গড়ে তোলার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও গবেষণা প্রকাশ ইত্যাদি বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতিবেদন তৈরিতে উৎসাহিত করেন বক্তারা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, চামড়া শিল্পের উন্নয়ন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরতে গণমাধ্যমকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে, দেশের আপামর জনগণের কল্যাণে প্রশিক্ষণার্থীগণ অবদান রাখবেন। চামড়া শিল্পের প্রকৃত সংকট ও সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন, এটা আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমকর্মীদের পাশে থেকে দেশ গঠনে সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, কোরবানিকে সামনে রেখে চামড়া সংগ্রহে দক্ষতা উন্নয়ন ও শিল্পের সংকট গভীরভাবে বিশ্লেষণপূর্বক বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান আরও সমৃদ্ধ করে জনকল্যাণে অনুসন্ধানী রিপোর্ট উপস্থাপিত হবে, এটাই সাধারণের প্রত্যাশা। উত্তম অনুসন্ধানী রিপোর্টের মাধ্যমে আজকের কর্মশালার সফলতা নির্ভর করবে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ। আলোচনায় আরও অংশ নেন পরিচালক ড. মারুফ নাওয়াজ। সঞ্চালনা করেন উপপরিচালক সুমনা পারভীন।

প্রসঙ্গত, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এসআইবিই-এনআইএমসি প্রকল্পের আওতায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংকট উত্তরণে দ্রুত নির্বাচন দরকার: মির্জা ফখরুল
  • সমন্বয়কেরা তদবির করে আ.লীগের দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাচ্ছেন: নুরুল হক
  • পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা যেন পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায়: তারেক রহমান
  • ‘কচুক্ষেত’ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হবে না: গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ
  • আ.লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে যা বললেন জিএম কাদের
  • ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ প্রসঙ্গে ফেসবুকে হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্ট
  • ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে: আমীর খসরু
  • ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে: আমির খসরু
  • চামড়া শিল্পের সংকটে গণমাধ্যমের করণীয় বিষয়ক কর্মশালা