উত্ত্যক্তের বিচার চাওয়ায় শ্লীলতাহানি, অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা স্কুলছাত্রীর
Published: 21st, March 2025 GMT
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় উত্ত্যক্তের বিচার চাওয়ায় এক স্কুলছাত্রীকে (১৫) শ্লীলতাহানি ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর অপমানে স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে তিনজনের নাম উল্লেখ করে হাতিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুলছাত্রীকে বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়ার সময় প্রায় উত্ত্যক্ত করতেন স্থানীয় তিন বখাটে তরুণ। এ বিষয়ে সামাজিকভাবে বিচার চাওয়া হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। পরে গতকাল রাতে ঘর থেকে বের হয়ে শৌচাগারে যাওয়ার সময় ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও অপহরণের চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই ছাত্রী। পরিবারের সদস্যরা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
ছাত্রীর বাবা বলেন, তাঁর মেয়ে খুবই অসুস্থ। সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। অভিযুক্ত তিনজন এলাকায় অনেক অপকর্মে জড়িত বলে জানান তিনি।
ছাত্রীর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ছাত্রীটি মানসিক ট্রমার মধ্যে আছে। অভিযুক্ত ছেলেগুলো এলাকায় বখাটেপনা করে বেড়ায়। মেয়ের বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
হাতিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম আজ শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, উত্ত্যক্ত ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এক ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে মেয়েটির বাবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে খুন করা হয় শিশুকে
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় এক ব্যক্তির ওপর প্রতিশোধ নিতে তার সাত বছরের ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা ও লাশ গুম করে দুই প্রতিবেশী। খুনের পর শিশুটির সন্ধান চেয়ে দুই ঘাতক মাইকিংয়েও অংশ নেয়।
প্রায় আড়াই মাস আগের এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলো ফতুল্লার লামাপাড়া দরগাবাড়ি মসজিদ-সংলগ্ন সালাম মিয়ার ভাড়াটে ওবায়েদউল্লাহ বাবুর ছেলে তানজিল (২৪) ও একই বাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত ফরজুল ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলম (২০)।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গ্রেপ্তার আসামিরা ও নিহত শিশু মুস্তাকিনের পরিবার পাশাপাশি বাসায় বসবাস করত। একটি মোবাইল ফোন নিয়ে তানজিল ও শাহ আলমের সঙ্গে মুস্তাকিনের বাবা হাশিম মিয়ার ঝগড়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তানজিল তাঁর সহযোগী শাহ আলমকে নিয়ে মুস্তাকিনকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে তারা ফতুল্লার ডিআইটি মাঠ থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনে। এর পর ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে প্রথমে চিপস কিনতে শিশুটির হাতে ২০ টাকা দেয় তানজিল। পরে শিশুটির সঙ্গে হেঁটে মূল রাস্তায় মেইন রোডে এসে দুটি চিপস কিনে হাতে দেয়। এর পর অটোরিকশায় করে ফতুল্লা গুদারাঘাট দিয়ে কেরানীগঞ্জের কাওটাইল এলাকায় যায়। সেখানে বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদের পেছনে ঝোপের ভেতরে নিয়ে গিয়ে শিশুটির মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেন শাহ আলম। এ সময় তানজিল তাঁর সঙ্গে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে শিশুটিকে একাধিকবার আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তারা ঘটনাস্থলে শিশুটির লাশ ফেলে রেখে লামাপাড়ার বাসায় চলে যায়।
শিশুটিকে না পেয়ে তার পরিবার সন্ধান চেয়ে মাইকিং করেছিল। ঘাতকরাও সে সময় মাইকিংয়ে অংশ নেয়। দু-তিন দিন পর তারা তাদের নিজ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ চলে যায়। ঘটনার ১৩ দিন পর ১৮ জানুয়ারি দুপুরে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। কোনো পরিচয় না পাওয়ায় লাশটি অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়। পরে ২০ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করে। এর আগে ৬ জানুয়ারি শিশুটির বাবা ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। শিশুটির সন্ধান না পেয়ে তার বাবা গত শুক্রবার ফতুল্লা মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের ৭২ দিন পর গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ময়মনসিংহ নান্দাইল থেকে প্রথমে শাহ আলমকে, পরে দুপুর ১২টার দিকে একই জেলার ফুলবাড়িয়া থানার কাচিজোড়া থেকে তানজিলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ রাত ৮টার দিকে ফতুল্লা থানার লামাপাড়ায় তানজিলের বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার চাকুটি উদ্ধার করে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ‘ক’ সার্কেল হাসিনুজ্জামান জানান, শিশুটির বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতেই শিশুটিকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার তানজিল ও শাহ আলম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কেরানীগঞ্জ থানা থেকে যোগাযোগ করা হলে শিশুটির পরিবার থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে রক্ষিত শিশুর জামাকাপড় দেখে পরিচয় শনাক্ত করে।