মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বৃহস্পতিবার ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কর্ণাটক রাজ্যের হাইকোর্টে মামলাটি করা হয়। ভারতে বেআইনিভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং ইচ্ছেমতো সেন্সরশিপ চালানো হচ্ছে বলে মামলায় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, এ মামলা এক্সের সঙ্গে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের চলমান দ্বন্দ্বের বিষয়টিকে আরও জোরালোভাবে সামনে আনল। ভারতে ইলন মাস্কের স্টারলিংক ও টেসলার যাত্রা শুরুর পরিকল্পনার মধ্যে এ মামলা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের বহু দেশে অনুদানসহ নানা আর্থিক ব্যয়ের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে পরামর্শ দেয়। 

এজাহারে বলা হয়, অনলাইন কনটেন্ট বাতিল করতে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অন্যায়ভাবে তাঁর সেন্সরশিপ ক্ষমতা ব্যবহার করছে। এক্সের অভিযোগে বলা হয়, ভারত তার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের (আইটি অ্যাক্ট) অপব্যাখ্যা করেছে। বিশেষ করে আইনের ৭৯(৩)(বি) ধারা যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে লঙ্ঘন করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশকেও তা ব্যাহত করছে। আইনের ওই ধারা অনুযায়ী, তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ সাধারণ পরিষেবা ব্যবহারকারীরা কী লিখছেন, তার জন্য এক্স বা ওই জাতীয় প্ল্যাটফর্ম দায়ী থাকবে না, যদি তারা নির্দিষ্ট কিছু শর্ত ভঙ্গ না করেন।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলছে, ৭৯(৩)(বি) ধারা অনুযায়ী, আদালতের নির্দেশ বা সরকারের নোটিশের ভিত্তিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে আইনবহির্ভূত বিষয়বস্তু সরাতে হবে। কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যদি ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে এ নির্দেশ (আদালত বা সরকারের) মেনে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু সরিয়ে না নেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ভারতীয় দণ্ডবিধিতেও ওই প্ল্যাটফর্ম বা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে মনে করছে ভারত সরকার।

এ জায়গাতেই ইলন মাস্কের সংস্থা এক্সের সঙ্গে ভারত সরকারের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এক্স মনে করছে, কোনো বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ করতে বা তা সরিয়ে দিতে গেলে আদালতের নির্দেশ প্রয়োজন। সরকারের নির্দেশের ভিত্তিতে এ কাজ করা যাবে না। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে।

সম্প্রতি ভারতে ইলন মাস্কের সংস্থা এক্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর চ্যাটবোট ‘গ্রোক-৩’ প্রকাশ করে। আক্ষরিক অর্থে এটি ভারতজুড়ে ঝড় তোলে। গ্রোক এমন সব বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলে, যেগুলো নিয়ে দেশটির ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থি বিজেপি সরকারের সরাসরি বিরুদ্ধে যায়। যে বিষয়গুলো নিয়ে বিজেপি-আরএসএসসহ তাদের মিত্র দলগুলো প্রচারণা চালিয়ে আসছে, সেগুলোকে ‘ভুয়া’ প্রমাণ করে দিয়েছে গ্রোক। সেই সঙ্গে আবেগতাড়িত না হয়ে নির্মোহভাবে ইতিহাসের সত্যকে গ্রহণের পরামর্শও দিচ্ছে এটি। এসব কারণে কার্যত বিপাকে পড়ে মোদি সরকার।

দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদন জানায়, ইলন মাস্কের সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’ ব্যবহারকারীরা গ্রোক-৩-এর মাধ্যমে নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে পারছেন। গ্রোকও বলছে, তাদের জবাব পুরোপুরি তথ্যনির্ভর। এতদিন বিজেপি ও তার সমমনা সংগঠনগুলো দাবি করে আসছিল, সোনিয়া গান্ধী ‘বার ডান্সার’ ছিলেন। গ্রোক বলছে, এটা ভুল তথ্য। তিনি বার অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন; ডান্সার ছিলেন না। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে মোদির ‘অনুপ্রবেশকারী’ মন্তব্যের জবাবে গ্রোক বলছে, এটা তিনি করেছেন ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ জাগাতে। 

ব্রিটিশদের কাছে সবচেয়ে বেশিবার কে ক্ষমা চেয়েছেন এবং কে তাদের কাছ থেকে মাসে ৬০ টাকা পেনশন নিতেন– এমন প্রশ্নে গ্রোক বলছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকরের কথা। একজন জানতে চান, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএসের ভূমিকা কী ছিল। উত্তরে বলা হয়, ‘গবেষণালব্ধ তথ্য অনুসারে আরএসএসের ভূমিকা ন্যূনতম অথবা শূন্য ছিল। এর আগে গ্রোক বিষয়ে ইলন মাস্ক বলেন, এটা বিশ্বের সবচেয়ে মজার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই।’  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক ইলন ম স ক র স প ল য টফর ম ব যবহ র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

দিনভর বন্ধ থাকার পর হিথরো বিমানবন্দরে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চলাচল শুরু

যুক্তরাজ্যের হিথরো বিমানবন্দর গতকাল শুক্রবার দিনভর বন্ধ ছিল। বিমানবন্দরের কাছের একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে (সাবস্টেশন) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ চলাচলের সময়সূচি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। পরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় সীমিত আকারে উড়োজাহাজ চলাচল শুরু করে।

হিথরো বিশ্বের পঞ্চম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। প্রায় ৮০টি দেশ থেকে এই বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল করে। প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার যাত্রী হিথরো দিয়ে যাতায়াত করেন। বছরে শেষে এই সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৮ লাখ ৩০ হাজারে। বিমানবন্দরটি বন্ধের কারণে গতকাল ১ হাজার ৩০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কথা ছিল। এতে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েন যাত্রীরা।

এমনই একজন যাত্রী ২৮ বছর বয়সী মুহাম্মদ খলিল। গতকাল হিথরো থেকে পাকিস্তানের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। রয়টার্সকে তিনি বলেন, দেশে ফেরার জন্য তিন মাস ধরে পরিকল্পনা করছেন তিনি। উড়োজাহাজের টিকিট কিনতে অনেক অর্থ ব্যয় করেছেন। ফ্লাইট বাতিলের পর বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটিতে আগুন লাগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৭০ জন কর্মীকে পাঠানো হয়। পরে সকাল ৮টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের কারণে প্রায় ১ লাখ ঘরবাড়ি বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে বেলা ২টার দিকে বিমানবন্দরে আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হয়।

এরপর গতকাল বিকেলে হিথরো বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র জানান, সন্ধ্যা থেকে বিমানবন্দরে সীমিত আকারে উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য নিরাপদ ঘোষণা করা হবে। আগামীকাল (শনিবার) থেকে পুরোদমে উড়োজাহাজ ওঠানামা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। হিথরো বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড।

এদিকে ওই বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটিতে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। আগুন লাগার পর উপকেন্দ্র এলাকার আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। উপকেন্দ্রটির আশপাশের ভবনগুলো থেকে প্রায় ১৫০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। লন্ডন পুলিশের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে আপাতত নাশকতার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

ভ্রমণবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যাঘাতের প্রভাব শুধু হিথরো বিমানবন্দরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, অন্যত্রও তা ছড়িয়ে পড়বে। ভ্রমণশিল্প বিশ্লেষক হেনরি হার্টভেল্ট বলেছেন, আগামী কয়েক দিন একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ