পুলিশ পরিচয়ে ইউপি সদস্যদের কাছে চাঁদা দাবি, হুমকি
Published: 21st, March 2025 GMT
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সিমলা রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্যের কাছে পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পাঁচ ইউপি সদস্য নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
থানায় অভিযোগ দেওয়া ইউপি সদস্যরা হলেন– সিমলা রোকনপুর ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলী আকবর মালিতা, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মুনছুর আলী, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনুচ আলী, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উজ্জ্বল হোসেন ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বদিউজ্জামান টিটো।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউনুচ আলী স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১৫ মার্চ রাত ৯টা ৫২ মিনিটে কালীগঞ্জ থানার এএসআই মাসুদ পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাঁকে কল দিয়ে জানায়, তাঁর (ইউনুচ আলী) নামে থানায় মামলা আছে। মামলা থেকে নাম খারিজ করতে ২ লাখ টাকা দাবি করে নানা ভয়ভীতি দেখায় সে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই ব্যক্তি তাঁকে গালাগাল করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ৫-৬টি নতুন মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়।
ইউপি সদস্য ইউনুচ আলী জানান, একই রাতে অজ্ঞাতপরিচয় প্রতারক চক্রটি তাঁর ইউনিয়নের আরও পাঁচজন ইউপি সদস্যকে একইভাবে মোবাইলে টাকা দাবি ও হুমকি দিয়েছে। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সদস্যদের মধ্যে এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হওয়ায় তারা নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা পেতে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু থানা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ নিতে নানা টালবাহানা ও বিভিন্ন অজুহাত দেখানো হচ্ছে। ভুক্তভোগী ইউপি সদস্যরা তাঁকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে অভিযোগ করতে তারা দুপুরে থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের আড়াই ঘণ্টা বসিয়ে রেখে বিকেলে অভিযোগ নিলেও তাঁর রিসিভ কপি দেয়নি। ঘটনাটি যাচাই করে পরে রিসিভ কপি দেবে বলে জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক ইউপি সদস্য অভিযোগ করে বলেন, ১৫ মার্চ রাতে পুলিশ পরিচয়ে মোবাইল ফোনে এক প্রতারক মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি ও আটকের হুমকি দিলে বাড়ি ছেড়ে পালাতে গিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আমিনুল ইসলামের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই ইউপি সদস্যের পরিবারকে পুলিশ এখনও কোনো আইনি সহায়তা করেনি। একই ঘটনার তারাও পুলিশের সহায়তা পাবেন কিনা এ নিয়ে সন্দিহান। বর্তমানে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, অজ্ঞাত প্রতারকদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছেন। সেটি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাংস্কৃতিক সমাবেশে নারী ও প্রকৃতি নিপীড়নের প্রতিবাদ
কুঞ্জ উজাড়। সেখানে গভীর গর্ত। আরসিসি ঢালাই করা পিলারের অংশবিশেষ। লোহালক্কড় আর ইট–পাথরে আকীর্ণ পরিবেশ। অনেক চেনা সবুজ ‘পান্থকুঞ্জ’কে এখন কুঞ্জ বলার কোনো মানেই হয় না। এটি এখন ক্ষতবিক্ষত মাঠ। এরই এক প্রান্তে হলো গাছের গান, নদীর গান; প্রাণী, পাখি ও নারীর প্রতি নির্যাতনের প্রতিবাদী গান। উচ্চারিত হলো সহিংসতা, নিপীড়নের প্রতিবাদ।
গতকাল শুক্রবার অপরাহ্ণে পান্থকুঞ্জে ‘নারী ও প্রকৃতির প্রতি নিপীড়ন রুখে দিন’ আহ্বান নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন ও নাট্যসংগঠন বটতলা।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প (ওঠানামার পথ) নির্মাণের জন্য নগরের বুকে ক্ষুদ্র সবুজ উদ্যান পান্থকুঞ্জের গাছপালা কেটে বিরান বানিয়ে ফেলা হচ্ছিল। এর প্রতিবাদে গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেখানে অবস্থান করছেন। গতকাল ছিল অবস্থানের ৯৮তম দিন।
এদিকে সারা দেশেই নারীদের প্রতি সহিংসতা, নিপীড়নের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সে কারণে নারী ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে সব নিপীড়ন বন্ধের ডাক দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় এ আয়োজনে। শুরুতেই নাট্যসংগঠন বটতলার পক্ষে ঘোষণা পাঠ করেন শেউতি শাগুফতা। এতে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে নারীকে হেনস্তা, পোশাক নিয়ে সমালোচনা ও কটূক্তি করা হচ্ছে। ধর্ষণের হুমকি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারীর নিরাপত্তাহীনতার এক দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে তাঁরা মুক্তি চান।
সংহতি জানিয়ে বক্তব্য এবং ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবাদী গান, আবৃত্তি, মূকাভিনয় ও নারী নির্যাতনবিরোধী নাটক দিয়ে সাজানো হয়েছিল এই সাংস্কৃতিক কর্মী সমাবেশের কার্যক্রম। এতে গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব বলেন, পান্থকুঞ্জের এই চিলতে পরিমাণ সবুজ ছিল এই এলাকার ফুসফুসের মতো। উন্নয়নের নামে তা ধ্বংস করা হচ্ছে।
কাব্যনাটক বৃক্ষ সম্মেলন থেকে আবৃত্তি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বটতলার নাট্যকার সামিনা লুৎফা বলেন, ‘একটা গাছের সঙ্গে পাখি, কীটপতঙ্গসহ কত ধরনের প্রাণবৈচিত্র্যের নিবিড় সংযোগ থাকে, তা আমরা অনুভব করি না। তাদের প্রাণকে আমরা মূল্যবান ভাবি না। এই মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে।’
নাট্যজন আজাদ আবুল কালাম সংহতি জানিয়ে বলেন, বহু প্রাণ ও রক্তপাতের বিনিময়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন মুক্ত সমাজের আশা জেগেছিল, তার সঙ্গে এখনকার বাস্তবতার মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
আলোচনার ফাঁকে প্রকৃতি ও মানুষ নামের মূকাভিনয় পরিবেশন করেন শহীদুল মুরাদ। গানের দল ‘বেতাল’–এর শিল্পীরা পরিবেশন করেন বৃক্ষ নিয়ে গান ‘গাছে গাছে কথা কয় পাখিরা তা জানে’। নাট্যসংগঠন বটতলার শিল্পীরা পরিবেশন করেন নারী নির্যাতনের প্রতিবাদী গান ‘যেন আমি সেই মেয়েটা’। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাট্যকার ও নির্দেশক শাহমান মৈশান।
গানের দল ‘মাভৈঃ’ পরিবেশন করে নদী নিয়ে গান ‘পুবের পাহাড়ে, বরাক নদীর দুধারে’। কবিতা আবৃত্তি করেন অনন্য লাবণি। আরও বক্তব্য দেন বটতলার নির্দেশক মো. আলী হায়দার। সঞ্চালনা করেন বটতলার যোগাযোগ পরিচালক হুমায়ুন আজম। প্রতিবাদে দৃপ্ত এই সমাবেশ শেষ হয়েছিল বটতলার নারী নির্যাতনবিরোধী নাটক আর নয় চুপ থাকার পরিবেশনা দিয়ে।