আ.লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
Published: 21st, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের সকল সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
আজ শুক্রবার দেশের চলমান রাজনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জরুরি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল। আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে এত সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক বক্তব্য থাকার পরেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় ধীরগতি অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমের সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মন্তব্য করেছেন- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। আমরা তার এ বক্তব্যের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসন, বিগত আন্দোলনের হত্যাকাণ্ড, গুম, ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পথ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল নয় বরং এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেনি। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে অবস্থান করছে। বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার যে কোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে।
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, আওয়ামী মতাদর্শ দল এবং মার্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ৩৬ জুলাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। ফলে দল ও মতাদর্শ হিসেবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার সকল অধিকার হারিয়েছে।
তিনি বলেন, এনসিপি মনে করে- বিচারিক কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে। আত্মপ্রকাশের পর থেকে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি, কৃত অপরাধের বিচার, দায় স্বীকার, অনুশোচনা, পাপমোচন ব্যতীত আওয়ামী লীগের দল হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকার পক্ষে যেকোনো ধরনের তৎপরতা ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের পথকে সুগম করবে।
এনসিপি জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত অপরাপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নিশ্চয়তা চায়। বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এই মাফিয়া গোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফিরানোর যেকোনো প্রচেষ্টাকে এনসিপি প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে, যোগ করেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ন হ দ ইসল ম এনস প জ ত য় ন গর ক প র ট ন হ দ ইসল ম র জন ত ক অপর ধ র গণহত য আওয় ম এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলি ‘জায়নবাদী বর্বরতার’ বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার
যুদ্ধ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলা বন্ধ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
শুক্রবার (২১ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জান রতন, সদস্য জুলফিকার আলী ও নগর কমিটি সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন।
বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে মার্কিন মদদে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর নৃশংস হামলায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, ইসরায়েল ৪২ দিনের মাথায় যুদ্ধ বিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে ১৭ মার্চ মধ্যরাত থেকে আবারো ফিলিস্তিনের গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করেছে। তিন দিনের হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ২০০ এর অধিক শিশু, অধিকাংশ নারী ও বয়স্ক মানুষ।
ইসরায়েলি হামলায় গত ১৭ মাসে গাজায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি ছিল শিশু। শুধু তাই নয়, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা থেকে মানুষজনকে সরে যেতে বলেছে এবং বলছে ‘গাজায় নৃশংসতা কেবল মাত্র শুরু’।
হাজার হাজার টন বোমা ফেলে ফিলিস্তিনকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। এই হামলার বিরুদ্ধে খোদ ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে কিন্তু ইসরায়েল তাতে তোয়াক্কা করছে না। কারণ তার প্রতি সমর্থন রয়েছে যুদ্ধবাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
তারা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের সরে গিয়ে খালি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে দিতে বলেছে। নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠক করে ট্রাম্প নতুন করে হামলার নীল নকশা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গাজায় নতুন করে হামলা শুরু হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও খনিজসম্পদের দখল ও ঐ অঞ্চলে সামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরায়েলকে ব্যবহার করছে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা। সেজন্য অস্ত্র-অর্থসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতায় ও মদদে জায়নবাদী ইসরাইল গণহত্যায় মেতে উঠেছে। এই ধ্বংসযজ্ঞে গাজার ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও গির্জা ধ্বংস হয়েছে। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ধ্বংস করেছে এমনকি জাতিসংঘ ভবনও ধ্বংস করা হয়েছে। পুরো গাজার ৮৩ শতাংশ গাছপালা, ৮০ শতাংশের বেশি কৃষিজমি ও ৯৫ শতাংশ গবাদিপশু নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, যুদ্ধবিরতির সময়েও গাজায় ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজায় যে হামলা চালানো হচ্ছে, তা অতীতের যে কোনো যুদ্ধের ভয়াবহতাকে হার মানিয়েছে। এখন সেখানে কোন ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না যে কারণে সেখানকার মানুষ ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করছে। ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ, দেশে দেশে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট সকল যুদ্ধ এবং যুদ্ধ উন্মাদনার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে প্রতিবাদ প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। একই সাথে গাজায় মানবিক সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সাম্প্রদায়িকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ারও জোর দাবি জানান বাসদ নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ সরকারকে গাজায় ইসরাইলি বোমা হামলা ও গণহত্যা বন্ধের দাবি আন্তর্জাতিক সকল ফোরামে তুলে ধরা এবং গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর বিচারের দাবি উত্থাপনের দাবি জানান।
ঢাকা/মামুন/এনএইচ