মঞ্জুর এলাহীর মতো ব্যবসায়ী উপমহাদেশে বিরল: রেহমান সোবহান
Published: 21st, March 2025 GMT
প্রয়াত ব্যবসায়ী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী সব ক্ষেত্রেই অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সৎ, নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে, শিক্ষানুরাগী আর সৎ ও শোভন মানুষ—কী ছিলেন না তিনি। এত গুণের সমাহার সাধারণত ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা যায় না।
শুক্রবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে আয়োজিত প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও অ্যাপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর দোয়া মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই সততা, নিষ্ঠা ও শোভনতার অসাধারণ নজির স্থাপন করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বলেন, এ রকম নজির বিরল, বিশেষ করে এই ভারতীয় উপমহাদেশে। টাকাপয়সা হলে বা সফলতা এলে মানুষের মধ্যে সাধারণত ঔদ্ধত্য আসে। কিন্তু যাঁরা মঞ্জুর এলাহীকে চিনতেন, তাঁরা বলবেন, তাঁর মধ্যে কখনো অভদ্রতা দেখা যায়নি।
রেহমান সোবহান আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগেই ৯০ বছর পূর্ণ হলো আমার। এই বয়সে নিজের এক ছাত্রের স্মরণসভায় আসতে হলো, যদিও হওয়ার কথা ছিল উল্টো। তিনি কেন এত ভালো পরিবার ও বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সেই ১৯৬২ সালে ঢাকায় এসেছিলেন, তা রেহমান সোবহানের কাছে প্রথম ব্যাখ্যাহীন মনে হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি ব্যবসায়ী হিসেবে যে উচ্চতায় উঠেছিলেন, তাতে ঢাকায় আসার সার্থকতা প্রমাণ করেছেন। তাঁর সন্দেহ, কলকাতায় থাকলে এত বড় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা হওয়া তাঁর পক্ষে সহজ হতো না।’
পেশা নির্বাচনেও মঞ্জুর এলাহী নিজের পথে হেঁটেছেন। তাঁর বাবা ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রধান বিচারপতি, তাঁর ভাইও বিচারপতি, সেখানে তিনি প্রথমে গেলেন বহুজাতিক কোম্পানিতে এবং তারপর এলেন ব্যবসায়। সেখানেও তিনি সফল।
মঞ্জুর এলাহী সম্পর্কে তাঁর সহপাঠী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন বলেন, তিনি বিভিন্নভাবে ক্ষমতা লাভ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি কখনোই সেই পথে হাঁটেননি। বরং সব সময় সাহস, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতেন। সে কারণে করাচিতে বহুজাতিক কোম্পানির উচ্চ পদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করেন। চামড়ার ব্যবসায় তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। শুধু তা–ই নয়, বাংলাদেশের চামড়া খাতকে রপ্তানি খাত হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী অত্যন্ত শিক্ষানুরাগী মানুষ ছিলেন বলে মন্তব্য করেন ফরাসউদ্দিন। তিনি না থাকলে হয়তো ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই হতো না। সেই বিশ্ববিদ্যালয় এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ।
ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, ‘অত্যন্ত বন্ধুবৎসল মানুষ ছিলেন মঞ্জুর এলাহী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তাঁর যে কক্ষসঙ্গী ছিলেন দুজন, আজীবন তাঁদের খোঁজ নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকের জন্যই তিনি অনেক কিছু করেছেন, যার সাক্ষী তিনি নিজে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো.
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ৮৩ বছর বয়সে ১২ মার্চ মারা যান।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রের উদ্বোধন
রাজশাহীতে আজ মঙ্গলবার সকালে ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্র। নতুন এই প্রজননকেন্দ্রে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন ঘড়িয়াল জুটিকে। এই জুটির এখনো নাম দেওয়া হয়নি।
বন বিভাগের পবা নার্সারির রেসকিউ সেন্টারে ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রটি করা হয়েছে। এটির অবস্থান জিয়া শিশুপার্ক রোডে। আজ সকালে কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ বি এম সরোয়ার আলম।
এদিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে থাকা গড়াইকে গাজীপুর সাফারি পার্কে ও পদ্মাকে নতুন প্রজননকেন্দ্রে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই ‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ মিঠাপানির বিরল প্রজাতির কুমির-ঘড়িয়াল। এই কুমির এখন বিলুপ্তির পথে। তাই রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় আবদ্ধ জায়গায় প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
এর আগে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানের পুকুরে ঘড়িয়াল ছিল দুটি। দুটিই ছিল মেয়ে। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট তাদের সঙ্গী পাল্টে দেওয়া হয়। তখন মেয়েটির নাম রাখা হয় পদ্মা আর গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আনা ছেলে ঘড়িয়ালটির নাম দেওয়া হয় গড়াই।
রাজশাহী চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও ইনচার্জ ফরহাদ উদ্দিন বলেন, প্রায় ৮ বছর ধরে বারবার এরা পানিতে ডিম দিয়েছে। ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য প্রজনন ব্যর্থ হয়েছে। তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন মেয়ে ঘড়িয়াল পদ্মাকে নতুন প্রজননকেন্দ্রে দেবেন আর ছেলেটিকে গাজীপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম বলেন, দেশে এর আগে কোথাও ঘড়িয়ালের ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ হয়নি। রাজশাহীতে যদি সফল হয়, তাহলে এটা হবে বিরল ঘটনা।
উপমহাদেশীয় এই কুমির সাধারণত মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। এর মূল আবাসভূমি গঙ্গা (পদ্মা) নদী বলে এর বৈজ্ঞানিক নামকরণও (Gavialis gangeticus) হয়েছে গঙ্গার নামে। তবে গঙ্গা ছাড়াও উপমহাদেশের অন্যান্য বড় নদীতেও আগে ঘড়িয়াল দেখা যেত। বাংলাদেশে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও সেগুলোর শাখায় একসময় প্রচুর ঘড়িয়াল দেখা যেত। কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার কারণে বাংলাদেশে প্রজননক্ষম ঘড়িয়াল বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশে ঘড়িয়াল বর্তমানে মহাবিপন্ন বন্য প্রাণী, যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ দ্বারা সংরক্ষিত।
নতুন প্রজননকেন্দ্রটির সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঘড়িয়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য লেখা রয়েছে। পাশাপাশি কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেমন রোদ পোহানোর সময় বা অন্য কোনো সময় ঘড়িয়ালকে বিরক্ত করা যাবে না, ডিম সংগ্রহ বা নষ্ট করা যাবে না, পুকুরে পলিথিন বা প্লাস্টিক ছুঁড়ে ফেলা যাবে না এবং পুকুরে কাপড় কাচা, মাছ ধরা ও গোসল করা যাবে না।