বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, দেশে এখনো চক্রান্ত চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে ইনশাআল্লাহ। বর্তমান উপদেষ্টা সরকার দ্রুত নির্বাচনের দিকে আগাচ্ছে।
শুক্রবার বিকেলে কেরানীগঞ্জের আটি ভাওয়াল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
আমানউল্লাহ আমান বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গঠন হবে। তারেক রহমান দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবেন না।
তিনি বলেন, যদি কেউ মনে করে শেখ হাসিনা আবার দেশে আসবে এটা ভুল কথা। তার আর দেশে আসার সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার মেয়ে এমনকি তার গুষ্টি, হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।
এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করেন। খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় একসঙ্গে ১৫ হাজার লোকের ইফতারের আয়োজন করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কফিল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ছোটদের ‘খাটো’ করে দেখার এ কেমন কালচার
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এক শিক্ষককে পেয়েছিলাম, যিনি নতুন-পুরোনোনির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীকেই ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। নবীন শিক্ষার্থীরা ‘হোঁচট’ খেতেন, অনেকে তুমি বলার জন্য কাকুতি–মিনতি করতেন; কিন্তু স্যার কাউকে কোনো দিন তুমি বলতেন না। রিকশাচালক, কমনরুমের ফরমাশ খাটা বিনা বেতনের বয়, কলাভবনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী—সবাইকে একই স্বরে তিনি আপনি করেই বলতেন।
এই ধাতুর আরেক বিরল ব্যক্তিত্ব ছিলেন অধ্যাপক মুহম্মদ শামসউল হক, (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য, পরে মন্ত্রী। তাঁকে তাঁর একান্ত সহকারী, এমনকি পিয়ন পর্যন্ত আগে সালাম দিতে পারেননি। তিনিই আগে সালাম দিতেন এবং সবাইকে আপনি করেই সম্বোধন করতে দেরি করতেন না।
কিন্তু তাঁদের গুণমুগ্ধ বেশির ভাগ ছাত্রের মধ্যে বিষয়টি ‘সংক্রমিত’ হয়নি। আমরা জানি, অসুখ সংক্রমিত হয়, সুস্বাস্থ্য নয় আর সুবচন তো ‘হুনস্ত দুরস্ত’। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষকের সরাসরি ছাত্র পরবর্তী সময়ে মেধার গুণে বিভাগের শিক্ষক হওয়ার পর তাঁর শিক্ষার্থীদের ‘আপনি’ দূরে থাক, ‘তুমি’ টপকিয়ে একেবারে ‘তুই’ বলে সম্বোধন শুরু করেন। তাঁর ধারণা ছিল, হাঁটুর বয়সী পোলাপানের সঙ্গে আপনি বললে মাথায় চড়ে বসবে। কন্ট্রোল করা যাবে না, আর বাইরে বলতেন, আমি ওদের ‘আপন’ ভাবি বলেই তুই বলি!
আমাদের আপনি বলা সেই শিক্ষক অথবা সবার আগে সালাম দেওয়া অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শামসউল হককে কেউ কোনো সময় অসম্মান করেছেন বলে কোনো কানকথাও নেই। অথচ ‘তুই’ বলে যিনি আপন করে নেওয়ার নজির তৈরি করতে চেয়েছিলেন, তিনি সামনে-অসামনে শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে নানাভাবে অপমানিত হয়েছেন। পেছন থেকে ‘ভুয়া’ ধ্বনি শুনেছেন বহুবার।
২.
সম্প্রতি (২৭ মার্চ ২০২৫) ‘তুই’ বলে সম্বোধন করায় ময়মনসিংহে সজীব (২০) নামের এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, ‘বড় ভাই’ ও ‘ছোট ভাই’ দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন সজীব। আগের দিন রাতে হামিদউদ্দিন রোডে সজীবসহ বেশ কয়েকজন তরুণ-যুবক আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় মন্টি মিয়া (২৬) নামের স্থানীয় একজনকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করেন সজীব। বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়।
■ বেশির ভাগ ছাত্রের মধ্যে বিষয়টি ‘সংক্রমিত’ হয়নি। আমরা জানি, অসুখ সংক্রমিত হয়, সুস্বাস্থ্য নয় আর সুবচন তো ‘হুনস্ত দুরস্ত’। ■ যাঁরা প্রবীণ সম্প্রদায় রয়েছেন, তাঁদেরও কর্তব্য নবীনদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা। একটি উন্নত জাতিসত্তা গঠনে সচেষ্ট থাকা।একপর্যায়ে পাশের একটি দোকান থেকে সুপারি কাটার জাঁতি (সরতা) এনে ধারালো অংশ দিয়ে সজীবের বুকে কোপাতে শুরু করেন মন্টি। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা সজীবকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
দুজনের বয়সের পার্থক্য বেশি না হলেও ‘সম্মানের জন্য’ বুকে ছুরি বসাতে দেরি হয়নি। ‘তুই’ কি শুধুই তুচ্ছ অর্থে ব্যবহৃত হয়, নাকি তাঁর সঙ্গে সম্বোধনকারীর শ্রেণিদূরত্বের কথাও মনে করিয়ে দেয়। যেমন রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, বাজারে তরকারি বিক্রেতাকে যেভাবে পাইকারিভাবে ‘তুই’, ‘তুমি’ করি, সেখানে বয়সের কোনো মাপকাঠি থাকে না। মানুষকে ক্ষমতাহীন করে দেওয়ার এ এক চমৎকার হাতিয়ার ‘আমি উত্তম তুমি অধম’—তুই সম্বোধনের মাধ্যমে সহজেই সেই বার্তা প্রচার করা যায়।
আমলাতন্ত্রের মধ্যে এই আচরণকে পোশাকি রূপ দেওয়া হয়েছে। এক দিনের জুনিয়র হলেও তাকে আর কোনোভাবেই আপনি বলে সম্বোধন করার রেওয়াজ নেই বললেই চলে। অনেককে দেখেছি আপনি সম্বোধন ফিরে পাওয়ার জন্য কাঁচুমাচু হয়ে বলে দিতেন, ‘আমার কিন্তু এসএসসি অত সালে।’ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসবে বরফ গলে না; বরং উত্তর আসে, ‘ওহ তাই!’ এসব সিনিয়র-জুনিয়র দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানকে—আগে বসবে কে পরে বসবে।
দুই সচিব একবার একই কাফেলায় হজে গেছেন। হজের পূর্ব অভিজ্ঞতা আর মাসলা–মাসায়েল জানা-শোনার কারণে মোয়াল্লেম করা হয়েছিল তাঁদের একজনকে। যিনি মোয়াল্লেম হলেন, তাঁর প্রমোশন হয়েছিল পরে। আগে যিনি প্রমোশন পেয়েছিলেন, তিনি হজে গিয়েও পদে পদে সচিবালয়ের সম্মান-মর্যাদা আশা করতে থাকেন। একদিন বাসে বসা নিয়ে মোয়াল্লেম হতে না–পারা সচিবের তীব্র আপত্তি, বিরক্তিকর কথা-কাটাকাটিতে রূপ নেয়। আল্লাহ মালুম হাশরের ময়দানে তাঁরা কোন ‘তুমি-তুইয়ের সুতা’ ধরে বসে থাকবেন।
এ তো গেল পজিশনের ধমক; বয়সের ধমক কথায় কথায় শুনতে হয় কম বয়সীদের। তরুণ বয়সে ‘ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যানের’ কাজে যুক্ত হয়েছিলাম ১৯৯০ সালে। কাজ ছিল বন্যাদুর্গত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলা। বন্যার সঙ্গে তাঁরা কীভাবে বসবাস করে সামাল দেন, তার তত্ত্বতালাশ করা। বন্যা দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কেমন তথ্য সহযোগিতা পান ইত্যাদি।
একসময় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আয়োজন করা হলো অবহিতকরণ সভা। বড় হোটেলের ঠান্ডা ঘরের সেই সভা হঠাৎ গরম করে ফেললেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী। তাঁর দপ্তরের সীমাবদ্ধতা কথা, নিষ্ক্রিয় থাকার কথা উঠতেই তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। ইংরেজি ছেড়ে বাংলায় বলতে থাকলেন, ‘গাল টিপলে দুধ বের হয়, এমন লোকজন এখন কনসালট্যান্ট! এগুলোর জন্মের আগে থেকে আমার চাকরি। এমন পোলাপানের তথ্য বিশ্লেষণ শোনার মতো সময় আমার নেই।’ অনেক বিদেশিও ছিলেন সভায়। তাঁরা তাঁদের কনসালট্যান্সি নিয়ে উৎকণ্ঠিত হলেন। আমরা কষ্ট পেলাম।
৩.
আল-জাজিরার সাবেক সাংবাদিক মেহদি হাসান এক চাঁছাছোলা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিদায়ী অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতির। এখানে রনিল বিক্রমাসিংহ সম্পর্কে একটু বলে রাখা ভালো। রনিল বিক্রমাসিংহের জন্ম শ্রীলঙ্কায়, ১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ। তিনি ১৯৯৩-৯৪, ২০০১-০৪, ২০১৫-১৮, ২০১৮-১৯ এবং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।। তিনি ২০২৪ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার নবম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রনিল বিক্রমাসিংহে সম্পর্কে এই বর্ণনা দেওয়ার শানে নজুল হচ্ছে, তিনি যে শ্রীলঙ্কার কুলীনদের একজন, সেটা একটু মনে করিয়ে দেওয়া। শিক্ষিত দেশের শিক্ষিত লোক হওয়ার পরও তিনি তরুণদের প্রশ্ন করাকে যে বরদাশত করেন না, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। খোলা ক্যামেরার সামনে তিনি ভদ্রতার নেকাব ধরে রাখতে পারেননি।
আল-জাজিরার সাক্ষাৎকারটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয় লক্ষ করছেন, প্রশ্নের মুখে বেশ বেকায়দায় আর অস্বস্তিতে ছিলেন বিক্রমাসিংহে। একপর্যয়ে তিনি মেহদিকে বলেই ফেললেন, ‘আরে রাখো মিয়া তোমার প্রশ্ন, তোমার জন্মের আগে থেকে আমি রাজনীতি করি! তোমার কাছ থেকে আমাকে রাজনীতি শিখতে হবে? মেহদি এমন ঝাড়ির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এরপরও প্রত্যুত্তরে ছোট করে বলে দিলেন, ‘সেটাই সমস্যা বলে মনে হচ্ছে।’
৪.
যাঁরা পশ্চিম বাংলার রাজনীতির দিকে নজর রাখেন, তাঁরা জানেন সেখানেও প্রবীণদের মন খারাপ। তরুণদের ‘পাকামো’ তাঁদের ভালো লাগছে না। নবীনদের কেউ কেউ পুরোনো নেতাদের কটাক্ষ করে বলছেন, ‘তাদের সফটওয়্যার আপডেট হয়নি। পুরোনো সফটওয়্যার দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ চলে না’। প্রবীণদের দিক থেকে নতুন প্রজন্মকে ‘নাবালক, নাদান’ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
খেলাটা শুরু হয় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় ভোটকৌশলী প্রশান্ত কুমারের সংস্থা আইপ্যাককে নির্বাচনী কৌশল তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়ার পর। সেই প্রথম একটা পরামর্শদাতা সংস্থার কর্মীরাই ঠিক করে দিচ্ছিলেন নেতা-নেত্রী প্রার্থীদের ভাষণ, সভার সময়সূচি ইত্যাদি।
তখন থেকেই প্রবীণ নেতাদের কেউ কেউ বলছিলেন যে তাঁরা রাজনীতি অনেক বেশি বোঝেন অভিজ্ঞতা দিয়ে। তাই বাইরের কোনো যুবক কী করে তাঁর বক্তব্যের বিষয় ঠিক করে দিতে পারেন! সেসব অভিযোগ-অনুযোগ অবশ্য ধোপে টেকেনি। পরপর নির্বাচনী লড়াইতে প্রফেশনাল সংস্থাকে দিয়েই ভোট করিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, আর সেই সূত্রে সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি করে নিজের হাতে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার ভাইয়ের ছেলে অভিষেক ব্যানার্জি।
ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জিও কয়েক দিন আগে এক জনসভায় বলেন যে নেতাদের বয়স হলে কর্মক্ষমতা কমে। এই কথা ভাইপো ছাড়া অন্য কেউ বললে মমতাজি যে তার থোতা মুখ ভোঁতা করে দিতেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অভিষেকের চূড়ান্ত অভিষেকের মতলবেই হোক আর তরুণদের প্রতি অনাবিল আস্থার কারণে হোক, নতুনদের পাত্তা দেওয়ার কৌশলটা কাজ করছে; নতুন প্রজন্মকে টানতে পারছে তৃণমূল।
৫.
কম বয়সী মানুষের কাছেও অনেক কিছু শেখার আছে। ‘প্রাপ্তবয়স্ক’রা এটা বুঝলেও স্বীকার করেন না। ‘রিয়েলিটি’ মানতে চান না। ২০০০ সালে মারাত্মক বন্যায় বন্যামুক্ত হিসেবে তকমা পাওয়া বৃহত্তর যশোর-কুষ্টিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কোনো সময় বন্যা না হওয়া এই অঞ্চলের গ্রামগুলোয় মানুষ প্রশস্ত মাটির দেয়ালের ঘরে অভ্যস্ত ছিল। মাটির ঘরগুলো গরমে শীতল আর শীতে উষ্ণ থাকে। বন্যার পানিতে এসব মাটির ঘরবাড়ি নিমেষে গলে নিথর কাদায় পরিণত হয়। ধসে যায় গ্রামের পর গ্রাম।
বন্যার পানি নামতেই শুরু হয় গৃহনির্মাণ। সব দাতা সংস্থা ছুটে আসে নিজ নিজ ঘরের মডেল আর টাকা নিয়ে। মাস দুয়েকের মধ্যে নানান নকশার ঘর দাঁড়িয়ে যায়। সবাই বলে ওঠে, বাহ, বেশ বেশ বেশ। শুরু হয় দাতাদের নিয়ম রক্ষার মূল্যায়ন, উড়ে আসে নানা রঙের আর মাপের কনসালট্যান্ট। মূল্যায়নের একটা শর্ত ছিল, শিশুদের কাছ থেকেও জানতে হবে ঘর পেয়ে তারা কেমন খুশি। ভিডিও হবে তাদের হাসিখুশি মুখের। এমন একটা শিশু পাওয়া গেল না যে গদগদ হয়ে ঘরগুলোর তারিফ করে।
এক শিশু মুখের ওপর বলেই বসল, ‘এগুলো তমাগের ঘর, আমাগের নয়।’ কাগজ-কলম দেওয়া হলে তারা আঁকিয়ে দিল কেমন হলে ঘরটা তাদের হতো। সব শিশুই ঘরের সঙ্গে একটা দাওয়াইয়ের (বারান্দা) ছবি এঁকেছিল। বলেছিল, ‘যে ঘরের বারান্দা নেই, সেটা শুধুই টংঘর। বারান্দাটাই আসলে আমাদের বাড়ি। এখানে বসে পড়ি, খেলা করি, খাই, বৃষ্টি দেখি, দেখি মেঘের আনাগোনা, বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব, গরমের দিনে রাতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়ি, মা পরে ঘরে বন্দী করে—সকাল থেকে আবার বারান্দায়।’
কথাগুলো অনুবাদ করে কনসালট্যান্টদের চোখ খুলে যায়; কয়েকজনের চোখ দিয়ে পানিও পড়ে। বাংলাদেশে এখন দানের সব ঘরেই বারান্দা থাকে। এটাই ছিল শিশুদের পরামর্শ।
সাদ্দামের ইরাককে ‘টাইট’ দেওয়ার জন্য সে দেশের উত্তর অঞ্চলকে বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল কুর্দিস্তান। একবার সেখানে প্রচণ্ড খরা দেখা দেয়। ট্রাকে করে মানবিক সংগঠনগুলো গ্রামে গ্রামে পানি সরবরাহ করতে থাকে। প্রতিদিন পানি নিয়ে কাইজ্যা।
সাবেরা নামের ১১ বছরের এক শিশু আমাদের কতগুলো সমাধানের ‘তরিকা’ দিয়েছিল। বলেছিল, তোমরা পরিবারপ্রতি পানি দাও পরিবারের লোকসংখ্যা বিবেচনা করে, এটা ঠিক নয়। যে পরিবারে শিশু বেশি, তাদের পানির খরচ বেশি। এটা তোমাদের মাথায় রাখা উচিত। হাজার পাতা পড়া পানি সরবরাহ বিশেষজ্ঞদের নতুন করে বিতরণ নীতিমালা লেখায় শিশু সাবেরা।
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো নবীন-প্রবীণের মধ্যে সব ধরনের দূরত্ব কমিয়ে আনা। আমাদের যাঁরা প্রবীণ সম্প্রদায় রয়েছেন, তাঁদেরও কর্তব্য নবীনদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা। একটি উন্নত জাতিসত্তা গঠনে সচেষ্ট থাকা।
(দায়মুক্তির প্রবচন: এই লেখা আগস্ট ’২৪–পরবর্তী পরিস্থিতির পটভূমিতে লেখা নয়। কোনো মিল থাকলে তা নিতান্তই কাকতালীয়। এই লেখার দায়দায়িত্ব একান্তই লেখকের। লেখক ছাড়া অন্য কাউকে এ বিষয়ে দায়ী করা যাবে না।)
● গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক
[email protected]