যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তাঁর কাজে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে ভেনেজুয়েলার কয়েক শ নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে এল সালভাদরে পাঠানো নিয়ে আদালতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে ট্রাম্প প্রশাসন। এরই মধ্যে আদালত নিয়ে এই মন্তব্য করলেন ট্রাম্প। এতে করে দেশটি সাংবিধানিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের কেন্দ্রীয় সরকারের বিচারক জেমস বোসবার্গ কঠোর ভাষায় বলেছেন, ‘আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ট্রাম্প প্রশাসন কিছু ব্যক্তিকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে।’ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার ওই অভিবাসীদের কেন এল সালভাদের পাঠানো হয়েছে, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে বিচার বিভাগের কাছ থেকে তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন তিনি।

যেসব ব্যক্তিকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অনিয়মিত যুদ্ধ’ চালাচ্ছে। এই অভিযোগে গত শনিবার (১৫ মার্চ) ট্রেন ডি আরাগুয়ার গ্যাংয়ের ২৩৮ এবং আন্তর্জাতিক গ্যাং গোষ্ঠী এমএস-১৩ এর ২৩ সদস্যকে কারাগারে রাখতে এল সালভাদরের পাঠায় ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের কারাগারে রাখার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ পাবে মধ্য আমেরিকার দেশটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেন ডি আরাগুয়ার সদস্যদের দ্রুত দেশ থেকে বের করতে গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) কয়েক শতকের পুরোনো ভিনদেশি শত্রু আইন বা এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট ব্যবহারের নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি যুদ্ধকালীন আইন হিসেবে পরিচিত।

পরদিন শনিবার ওয়াশিংটনের কেন্দ্রীয় সরকারের বিচারক জেমস বোসবার্গ ১৭৯৮ সালের ওই ভিনদেশি শত্রু আইনের ব্যবহার ১৪ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তাঁর যুক্তি ছিল, এই আইনে অন্য দেশের দ্বারা সংঘটিত এমন ‘শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড’কে বোঝানো হয়েছে, যা ‘যুদ্ধের সমতুল্য’।

কিন্তু ওই দিনই অভিযুক্ত গ্যাং সদস্যদের কয়েকটি উড়োজাহাজে করে এল সালভাদরের পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাদের পাঠানো হয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কেবল ট্যাটু বা উলকি থাকার অপরাধেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার জেমস বোসবার্গ বিচার বিভাগের আইনজীবীদের কাছে কিছু বিষয়ে তথ্য জানতে চান। তিনি তাঁদের প্রশ্ন করেন, গ্যাং সদস্যদের পাঠানো-সংক্রান্ত ট্রাম্পের ঘোষণাটি ঠিক কখন কার্যকর হয়েছিল এবং প্রত্যর্পণের ফ্লাইটগুলো এল সালভাদরের উদ্দেশ্যে কখন রওনা করেছিল?

জেমস বোসবার্গের প্রশ্নের জবাব দিয়ে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী (আইসিই) কর্মকর্তা রবার্ট সারনা স্থানীয় একটি আদালতকে জানান, শনিবার বিকেলে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে ট্রাম্পের নির্দেশ প্রকাশিত হওয়ার পর আটক ব্যক্তিদের বহনকারী তিনটি উড়োজাহাজ এল সালভাদরের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে।

তবে আটক ব্যক্তিদের বহনকারী একটি উড়োজাহাজ বোসবার্গের রুলিংয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে গিয়েছিল। শনিবার রাত ৭টা ২৫ মিনিটে বোসবার্গ দুই সপ্তাহের জন্য এসব গ্যাং সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কার স্থগিত রাখতে বলেছিলেন। আদালতকে আইসিই কর্মকর্তা রবার্ট সারনা আরও বলেন, আটক ব্যক্তিদের শুধু এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্টের অধীন পাঠানো হয়নি; বরং তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আলাদা বহিস্কারের নির্দেশ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে, ২০ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র কর

এছাড়াও পড়ুন:

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, কুমেক হাসপাতালে গিয়ে হামলার শিকার ৪ সাংবাদিক

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) ভুল চিকিৎসায় পারুল বেগম (৫২) নামের এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন চারজন সাংবাদিক। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একদল ইন্টার্ন চিকিৎসক এ হামলা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আহত সাংবাদিকরা।

আহতরা হলেন- যমুনা টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি রফিক ইসলাম খোকন চৌধুরী, ক্যামেরা পার্সন সাকিব, চ্যানেল ২৪ এর কুমিল্লা প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান এবং ক্যামেরা পার্সন ইরফান। এ সময় হামলাকারীরা তাদের মারধর করে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন বলে জানা গেছে।

ঘটনার পর ইন্টার্ন চিকিৎসক ও বেশকিছু শিক্ষার্থী হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

রাত সোয়া ১টায় ওই হাসপাতাল থেকে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করেছেন। তাদেরকে জেনারেল হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুমনা টিভির সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে ভুল চিকিৎসায় একজন নারীর মারা যাওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে যাওয়ার পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায় ও ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার আমরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আমাদের ওপর হামলা চালায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাসুদুর রহমানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: মির্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আমরা এ নিয়ে জরুরি মিটিংয়ে বসেছি। কেন এই ঘটনা তা জেনে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ