গাজায় হত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান বিএনপির
Published: 21st, March 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় নির্মম হত্যা ও রক্তপাত বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসন বন্ধ করে সেখানে জনগণের জানমালের নিরাপত্তাসহ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে।
আজ শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব কয়েক দিন ধরে চলা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় শিশুসহ অসংখ্য ফিলিস্তিনি হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শোক জ্ঞাপন করেছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, পবিত্র রমজান মাসেও ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর চলছে মানবতাহীন নিষ্ঠুর বর্বরতা। গাজা উপত্যকাকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি উপেক্ষা করে নির্বিচার বিমান হামলায় নারী ও কোলের শিশুসহ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় ফিলিস্তিনের উপত্যকাটি যেন প্রাণহীন ঊষর মরুভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে, উপত্যকাটি যেন এখন এক ভয়াল মৃত্যুপুরী।
যুদ্ধবিরতির পরও নতুন করে এই হামলা বেআইনি ও মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গাজা উপত্যকায় রক্তপাত বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ইসরায়েলের এই ভয়াবহ রক্তাক্ত আগ্রাসন ফিলিস্তিন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার একটি সুপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান। বিশ্ব জনমতের কোনো তোয়াক্কা না করে দখলদার শক্তি ইসরায়েলিরা আধিপত্য বজায়ের খেলায় মেতে রয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসরায়েলি সামরিক হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করনে। তিনি নিহত ফিলিস্তিনিদের নিকটজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ব এনপ ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে গাজার বাসিন্দাদের, অপুষ্টিতে ধুঁকছে শিশুরা
দেড় মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধে ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে না পারায় ক্রমেই তীব্র হচ্ছে খাদ্যসংকট। এতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে উপত্যকার বাসিন্দাদের। বিশেষ করে শিশুরা ধুঁকছে ব্যাপক অপুষ্টিতে। এ অবস্থায় ক্ষুধাকে অস্ত্র বানানোর অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ অবরোধ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় পুনরায় হামলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে ২ মার্চ সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল। এরই মধ্যে তারা গাজার বিভিন্ন এলাকায় স্থলাভিযানও শুরু করেছে। পাশাপাশি অব্যাহতভাবে চালানো হামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে আরও ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৭৩ জন। এর মধ্যে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এক হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হন।
গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, অবরোধই হচ্ছে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের উপায়। এ অবরোধ সরানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত তাদের নেই। এ অবস্থায় জানিয়েছে, পুষ্টিহীনতার কারণে গাজার পরিস্থিতি দ্রুতই খারাপের দিকে যাচ্ছে। কাটজ বলেন, যুদ্ধ বন্ধে শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হলেও তাদের বাহিনী গাজায় নিজেদের বানানো বাফার জোন ছাড়বে না। ইসরায়েলের মন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে হামাস বলছে, তাঁর এ বক্তব্য যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করা ছাড়া কিছু নয়। বৃহস্পতিবার টেলিগ্রাম পোস্টে সংগঠনটি লিখেছে, ইসরায়েল নিরপরাধ বেসমারিক লোকজনের জীবনরক্ষার মৌলিক উপাদান যেমন– খাবার, ওষুধ, পানি ও জ্বালানি থেকে বঞ্চিত করছে।
এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ বলছে, পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে না দেওয়ায় শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএর এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের অবরোধের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে জানায়, মানবিক সহায়তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ায় গাজায় তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেখানে মাংস, হাঁস-মুরগি, দুগ্ধজাত পণ্য, শাকসবজি ও ফলমূলের মতো পুষ্টিকর খাদ্য একেবারেই কমে গেছে। ওসিএইচএর তথ্য অনুযায়ী, মার্চে অপুষ্টিতে ভোগা ৩ হাজার ৬৯৯ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৭। পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি গাজায় বিশুদ্ধ পানির সংকটও তীব্র।
যুদ্ধের এ পরিস্থিতির মধ্যে ফিলিস্তিনে পালন করা হচ্ছে ‘কারাবন্দি দিবস’। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় আগ্রাসন শুরুর আগে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ২৫০ (৪০ নারী ও ১৭০ শিশু)। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ সংখ্যা ৯ হাজার ৯০০ জনে পৌঁছেছে, যাদের মধ্যে নারী ২৭ জন; শিশুর সংখ্যা কমপক্ষে ৪০০। ফিলিস্তিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের কারাগারে ৬৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা দখলের বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে জার্মানি। মূলত ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজার তথাকথিত নিরাপত্তা অঞ্চলে সেনাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করার কথা বলার পর এ সতর্কবার্তা এলো। অন্যদিকে, ইসরায়েল স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে উত্তর কোরিয়া। পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় নতুন করে শুরু করা ইসরায়েলের হামলার সমালোচনাও করেছে পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) এ খবর জানায়।