হাসনাত আব্দুল্লাহর স্ট্যাটাসে তোলপাড়, সরব ছাত্রনেতারা
Published: 21st, March 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে সেনা প্রশাসন ‘চাপ দিচ্ছে’ বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় তিনিসহ ৩ জনের কাছে সেনানিবাস থেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে’ রাজনীতিতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।”
ওই বৈঠকে ৪০ বছরের বেশি সেনাবাহিনীতে কর্মরত এমন একজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের মতবিরোধ ও বচসা হওয়ার কথা তুলে ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ না করেই তাদের চলে আসতে হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
নতুন প্রজন্মের হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাবে: হাসনাত
হঠাৎ ভোর রাতে নারায়ণগঞ্জে হাসনাত আব্দুল্লাহ
কী ছিল ফেসবুক পোস্টে
শুক্রবার মধ্যরাতে ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন-‘১১ই মার্চ,সময় দুপুর ২:৩০।
কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
আমিসহ আরো দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ই মার্চ দুপুর ২:৩০এ। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই।আমাদেরকে বলা হয়- ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে-তারা শর্ত সাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধীদল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধীদল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।
আমাদেরকে আরো বলা হয়-রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।
আমাদেরকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন।
এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোন ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।
আলোচনার এক পর্যায় বলি-যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই,সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম এন্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স।তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ ইলেকশন হবে না।’
হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
উত্তরে বলি, ‘আওয়ামী লীগের সাথে কোন ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না।আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে।আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে’।
পরে মিটিং অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয়।
জুলাই আন্দোলনের সময়ও আমাদের দিয়ে অনেক কিছু করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো এজেন্সি কখনো বা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করতে চাপ দেওয়া হয়েছে। আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের উপরেই আস্থা রেখেছি। আপনাদের সাথে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি।
আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের উপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। নানামুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোন ধরনের আপস করার সুযোগ নাই।
জুলাইয়ের দিনগুলোতে জনগণের স্রোতে ক্যান্টনমেন্ট আর এজেন্সির সকল প্রেসক্রিপশন আমরা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আজ আবারও যদি আপনাদের সমর্থন পাই, রাজপথে আপনাদের পাশে পাই তবে আবারও এই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ভারতীয় ষড়যন্ত্রও আমরা উড়িয়ে দিতে পারবো।
আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দিবো না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোন সুযোগ নাই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহর স্ট্যাটাসে সরব ছাত্রনেতারা
হাসনাত আব্দুল্লাহ ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পরই সরব হয়েছেন ছাত্র নেতারা।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অন্যতম সমন্বায়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া শুক্রবার তার ভেরিফাইড ফেসবুকে বলেছেন, “নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে এসব শঙ্কার কথা বলে কেউ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে জনতার ঐক্যে ফাটল ধরাতে আসবেন না।মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড.
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, “লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ পর্যন্ত এ লড়াই চলবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম শুক্রবার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বলেন, “আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অপচেষ্টা রুখে দিতে ছাত্র-জনতা আবারও প্রস্তুত। রক্তের দাগ শুকায় নাই। এই রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমার ভাইয়ের খুনিদের ফেরানোর কোন চেষ্টা আমরা সফল হতে দিবো না।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সমন্বয়ক ও চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বলেন, “জলপাই রঙ কিংবা ইন্ডিয়া যারাই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তা জুলাইয়ের মতোই প্রতিহত করা হবে।”
হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন নেতারা মন্তব্য পোস্ট করেন। ছবি সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, “আমি বিএনপি, জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। ছাত্র-জনতা আবারও প্রস্তুত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের অপচেষ্টা রুখে দিতে।”
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট ক য ন টনম ন ট ফ সব ক প স ট স ব ক র কর র ফ সব ক আপন দ র আম দ র বল ছ ন র জন ত র উপর
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ-জাপা ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে বাদ দিলে সেটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। শেখ হাসিনা প্রতিযোগী কমিয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে সফল হয়নি। আপনারাও এ রাজনীতিতে সফল হবেন না। শনিবার সন্ধ্যায় রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, যেই ক্ষমতায় আসে আর ছাড়তে চায় না। ইলেকশন ম্যানিপুলেট করতে চায়। দেশবাসী ম্যানিপুলেট ইলেকশন মানবে না। তিনি বলেন, জিন-ভূতের আছরের মতো অনেকের ওপর ক্ষমতার আছর হয়েছে। ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তারা নানা পলিসি নিয়েছে। তাই দোসর আখ্যা দিয়ে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি থেকে বের করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনীকে ডিস্টার্ব করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি সব সরকারপ্রধান স্বৈরাচারী ছিলেন বলেও দাবি করেন কাদের।
এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, অতিরিক্ত মহাসচিব মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইয়াসির আহমেদ, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন, পীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নুরে আলম যাদু মিয়া, যুবসংহতির নেতা নাজিম উদ্দিনসহ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।