মাস পার হলে জানা যায়নি উত্তরায় চীনা নাগরিক খুনের রহস্য
Published: 21st, March 2025 GMT
মাস পার হলেও এখনও জানা যায়নি রাজধানীর উত্তরায় চীনের নাগরিক ওয়াং বো (৩৭) হত্যার কারণ। অভিযুক্ত দুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তারেও নেই কোনো উদ্যোগ। তবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চীনা নাগরিককে আনা-নেওয়ার দায়িত্বে থাকা মাইক্রোবাস চালক হৃদয় হোসেন ওরফে রুবেলকে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ভাড়া বাসা থেকে ওয়াং বোর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথার পেছনেসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় নিহতের আত্মীয় আরেক চীনা নাগরিক লিউ রুই ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ওই দিনই মামলা দায়ের করেন। এরপর আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন।
মামলা দায়েরের পর ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় হৃদয় হোসেনকে। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ড শেষে হৃদয় কারাগারে রয়েছেন।
মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা-পশ্চিম থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো.
তিনি আরো বলেন, ‘‘যারা (দুইজন) হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা দেশের বাইরে চলে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা ভিকটিমের ব্যবসায়িক পার্টনার। তবে কোন দেশে গেছে জানা যায়নি। খুনের প্রকৃত কারণও জানা যায়নি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’’
এ বিষয়ে কথা বলতে মামলার বাদী লিউ রুইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি মামলা সম্পর্কে কথা বলতে রাজী হননি।
শাহ আলম নামে এক বাংলাদেশীকে নিয়ে থানায় মামলা করতে যান লিউ রুই। শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি তারা কয়েকজন একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। ধারণা করা হচ্ছে দুইজন চীনা নাগরিক এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কী কারণে খুন এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।’’
জানা গেছে ওয়াং বো ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে বাস করছিলেন। এখানে ইট, বালি, পাথরের ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ওয়াং বোর বাবা গত ১৬ জানুয়ারি মারা যান। এ কারণে তিনি চীনে যান। হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় ফেরেন। ঘটনার দিন দুপুর ১২টার দিকে লিউ রুই ওয়াং বোকে দুপুরে খাবার জন্য ডাকতে যান। সেখানে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
এ দিকে ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে ওয়াং বো বাসার গেইট থেকে একজনকে রিসিভ করে রুমে নিয়ে যান। পরদিন ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেইটের সামনে এসে দাঁড়ান। ২ মিনিট পর অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা মাইক্রোবাস থেকে আরেকজন অজ্ঞাতনামা নেমে এলে তিনি তাকে রিসিভ করেন। এর ঠিক ৩-৪ মিনিট পর অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি ১২টা ১১ মিনিটে ওয়াং বোর রুম থেকে ওই অজ্ঞাতনামা দুই চীনা নাগরিক দৌড়ে বের হয়ে আসেন এবং অপেক্ষারত মাইক্রোবাসে চলে যান।
এ দিকে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকালে ওয়াং বোর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দ্বারা ১১টি আঘাতের ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়।
গ্রেপ্তারকৃত হৃদয়ের আইনজীবী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘সে গাড়ি চালক। তার কাজ এয়ারপোর্ট থেকে চীনা নাগরিকদের নিয়ে আসা এবং নিয়ে যাওয়া। সে ঘটনার বিষয়ে কিছু জানে না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আসামিরা তার গাড়িতে করে এসেছিল। এটাই তার অপরাধ। তার বিরুদ্ধে কোনো ফুটেজ নাই। আশা করছি, মামলার তদন্ত সুষ্ঠু হবে। হৃদয় ন্যায় বিচার পাবে।’’
ঢাকা/মামুন//
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ গুম, আসামির দেখানো জায়গায় মাটি খুঁড়ে উদ্ধার
হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে নিখোঁজের সাতদিন পর চুনারুঘাটের কাপাইছড়া চা বাগানের গহীন জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে লিটন মিয়া (৩৮) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের কাপাইছড়া চাবাগানের ৯ নন্বর টিলার ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। লিটন মিয়া মাধবপুর উপজেলার গোয়াছনগর এলাকার ছায়েদ আলীর ছেলে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ এপ্রিল সাতছড়িতে লাকড়ি সংগ্রহের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন লিটন। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। সাতদিনেও বাড়িতে ফিরে না এলে পরিবারের লোকজন বিষয়টি বুধবার পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানা পুলিশ কাপাইছড়া চা-বাগানে অভিযান চালিয়ে প্রমোদ রিকমন (৩২) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। প্রমোদ কাপাইছড়া চাবাগানের মঙ্গল রিকমনের ছেলে। পরে প্রমোদকে সঙ্গে নিয়ে তার দেওয়া তথ্যমতে পাহাড়ি এলাকার কাপাইছড়া চা বাগানের ৯ নম্বর টিলার ভেতরে মাটি খুঁড়ে লিটন মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রমোদ রিকমন পুলিশকে জানান, তার ১০টি গরু চুরি হয়েছে। ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় কাপাইছড়া বাগানে লিটনকে গরু চুরি সন্দেহে পাঁচজন মিলে আটক করে মারপিট করেন। একপর্যায়ে মাথায় আঘাত করলে মাটিতে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর প্রমোদ রিকমনসহ পাঁচজন মিলে লিটনের মরদেহ মাটিতে পুঁতে রেখে চলে যান।
মাধবপুর সার্কেলের এএসপি সালিমুল হক বলেন, এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, কাপাইছড়া চা-বাগানের বাজারে অভিযান চালিয়ে প্রমোদ রিকমনকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে সঙ্গে নিয়ে চা বাগানের ৯ নম্বর টিলায় মাটি খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম বলেন, ঘটনাটি জানার ১২ ঘণ্টার মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তারের পর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।