নাটোরের গুরুদাসপুরে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে এক সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার (২১মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের কাছিকাটা টোল প্লাজা এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহত সেনা সদস্যের নাম আল মামুন (২৬)। তিনি নাটোর সদর উপজেলার বড়বাড়িয়া লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত ওছিম উদ্দিনের ছেলে।

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় ট্রাকচাপায় ২ জন নিহত

পাবনায় বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে শিশুসহ নিহত ৫

বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো.

ইসমাইল হোসেন বলেন, ‍“চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আরপি স্পেশাল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস কাছিকাটা ১০ নম্বর সেতু এলাকায় পৌঁছায়। এসময় বিপরীতমুখী একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের যাত্রী মামুন ঘটনাস্থলে নিহত হন।”

তিনি আরো বলেন, “দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এসে মামুনের মরদেহ উদ্ধার করে। তার কাছে সেনা সদস্যের পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। তিনি কোথায় কর্মরত ছিলেন তা জানা যায়নি।”

ঢাকা/আরিফুল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ন হত স ঘর ষ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

হামার কুমড়ায় রোজা, কুমড়ায় ঈদ

রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর বাজারের পূর্বদিকে বিজয় বাঁধ। তিস্তার এই বাঁধের ওপর নদীভাঙনে নিঃস্ব হওয়া বেশ কিছু ভূমিহীন পরিবারের বাস। এই চরে মিষ্টিকুমড়া চাষে কর্মসংস্থান হয়েছে এখানকার ব্যবসায়ী, শ্রমিক-মজুর, ভ্যানচালকসহ চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। চরের উৎপাদিত কুমড়া পাল্টে দিয়েছে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র।
পূর্ব প্রান্তে গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক চরের সীমানার বাসিন্দা জহিরন বেওয়া (৬০) গতকাল শুক্রবার দুপুরে বাঁধে বসেই বঁটিতে মিষ্টিকুমড়া ফালি করছিলেন। তাঁর হাতের কাছে বস্তায় ছিল আরও বেশ কয়েকটি কুমড়া। গাঢ় হলুদ রঙের কুমড়ার ফালি দেখে জিজ্ঞেস করলে জানান, সিদ্ধ করে মিষ্টি কুমড়ার ফালি দিয়ে তিনি ইফতার করবেন। শুধু তিনিই নন, চরাঞ্চলের অভাবি পরিবারগুলো সহজে হাতের কাছে পাওয়ায় প্রথম রোজা থেকেই সিদ্ধ মিষ্টিকুমড়ার ফালি দিয়ে ইফতার করছেন। ভাতের সঙ্গে তরকারিতেও প্রতিদিন সবজি হিসেবে থাকছে এই মিষ্টিকুমড়া।
গল্পের ফাঁকে মুখে এক ফালি হাসি দিয়ে জহিরন বেওয়া বলেন, ‘এবার হামার কুমড়ায় রোজা, কুমড়ায় ঈদ। সংসারে অভাব থাকলেও এই কুমড়ার তকনে (জন্য) ভালো আচি। কুমড়ায় হামাক ভালো থুইচে।’ কুমড়া বিক্রির টাকায় রোজা ও ঈদ পার করবেন– স্বস্তির এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে রোজার শুরুতে চরাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের সংসারে যখন চলছিল হাজারো টানাপোড়েন, ঠিক তখনই তিস্তার চরে শীতকালে আবাদ করা মিষ্টিকুমড়া তাদের ঘরে ওঠে। যাকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে ব্যবসায়ী, শ্রমিক-মজুর, ভ্যানচালকসহ চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। চরের উৎপাদিত কুমড়া পাল্টে দিয়েছে এলাকার অর্থনীতির চিত্র। আলুতে লোকসান হলেও বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় চাষকৃত মিষ্টিকুমড়ায় রোজা-ঈদ পার করার স্বপ্ন দেখছেন এবার তিস্তার চরের মানুষ।
সরেজমিন গঙ্গাচড়ার গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক চর, রাজবল্লভ, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর, শংকরদহ, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, মটুকপুরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে দেখা যায়, ছোট ছোট ঘরে থরে থরে সাজানো রয়েছে মিষ্টিকুমড়া। বর্তমানে কুমড়া বিক্রির টাকায় সংসার চলছে অভাবি পরিবারগুলোর। পাইকারি হিসাবে প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কুমড়ার বাম্পার ফলনে স্থানীয়রা তিস্তার চরকে এখন ‘সাদা সোনার দেশ’ বলে থাকেন। অক্টোবরের প্রথম দিকে লাগানো এই কুমড়া মার্চ-এপ্রিল মাসে কৃষকদের ঘরে ওঠে। চরের ভূমিহীন পরিবারগুলো চাহিদা মেটাচ্ছেন কুমড়া চাষে। কয়েক বছর ধরে চরের আবাদ করা মিষ্টিকুমড়া দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে।
চর ইছলী এলাকার বাসিন্দা রহমত আলী তিন বিঘা জমিতে কুমড়ার আবাদ করেছেন। এ পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছেন। ঘরে থাকা কুমড়া আরও ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেল, নারী-পুরুষ মিলে শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে কুমড়া তুলছেন। বাছাই করে তা ট্রাকে তোলা হয়। এ কাজে শ্রমিকরা প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে পান। কুমড়া আনা-নেওয়ার কাজে ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়িরও কদর বেড়েছে। 
মহিপুর সেতুর উত্তর প্রান্তে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে প্রতিটি দোকানের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে মিষ্টিকুমড়া। খুচরা ব্যবসায়ীসহ পথচারীরা সেখান থেকে কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখান থেকেই প্যাকেট হয়ে ট্রাকে সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে কুমড়া।
গঙ্গাচড়ার বিভিন্ন চরে এ বছর ১২০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তার চরের প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ