ভৈরবে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ-ভাঙচুর, আহত ১৫
Published: 21st, March 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছে। এ সময় বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে পৌর শহরের জগন্নাথপুর লক্ষ্মীপুরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় আহত আল আমিন, মিনারা বেগম, জিয়াসমিন আক্তার, মহিন মিয়া, শিপন মিয়া, মমতা বেগম ও অজুফা বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গুরুতর আহত অজুফা বেগমকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা গেছে, গত বুধবার জগন্নাথপুরের লক্ষ্মীপুরের ডেঙ্গাবাড়ির জীবন মিয়ার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেনেন একই এলাকার মাক্কুম মোল্লা ফ্যাক্টরির কর্মচারী জিহাদ মিয়া। পরদিন সন্ধ্যায় জীবন মিয়া টাকা না দিয়ে সেই ফোন জিহাদ মিয়ার কাছ থেকে ফেরত নেন। আগারবাড়ির শিপন মিয়া এর প্রতিবাদ করলে কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সকালে সালিশ বসানো হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ফের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় আগারবাড়ির সমর্থকরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে নিজেদের লোকজনকে জড়ো হতে বলে। এ ঘোষণা শুনে দুই পক্ষই দা, বল্লম, টেঁটা, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় আগারবাড়ির পক্ষে তরি মোল্লার বাড়ির লোকজন যোগ দেন। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুই পক্ষের ১৫ জন আহত হয়। উভয় পক্ষের ২০টি দোকান ও বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফরহাদ মিয়া, কাল্লু মিয়া ও নাদিম মিয়া বলেন, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে দোকানের মালপত্র তুলেছি। আমরা ঝগড়ায় ছিলাম না। এর পরও দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। বাড়িঘরেও হামলা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।
আগারবাড়ির শিপন মিয়া বলেন, ডেঙ্গাবাড়ির জীবন চুরি করা ফোন জিহাদ নামে এক শ্রমিকের কাছে বিক্রি করে আবার ফেরত নেয়। প্রতিবাদ করলে হামলা করে। সকালে সালিশেও হামলা চালায় তারা। বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।
জীবনের বাবা মুসলিম মিয়া বলেন, আমার ছেলের দোকান থেকে ৮ হাজার টাকায় একটি ফোন কেনে জিহাদ। ওই সময় আগারবাড়ির কয়েকজন একটি দামি ফোন নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করতে গেলে আমার আরেক ছেলে জুম্মন ও তার বন্ধু মানিককে ধাওয়া দেয়। সকালে সালিশ বসলে সেখানেও আমাদের ওপর হামলা করে।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ফুহাদ রুহানী জানান, সেনাসদস্যদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ রব স ঘর ষ আহত ব ড় ঘর এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ, দেশজুড়ে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মুসল্লিরা। এ ছাড়া গাজায় হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল জুম্মার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস। সেখানে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, তারা যেন গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়। ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি আওরঙ্গজেবের সমাধিস্থলে হাত দেওয়া হয়, তাহলে এ দেশের মুসলমানরা বসে থাকবে না। প্রয়োজনে আওরঙ্গজেবের সমাধিস্থলের দিকে লংমার্চ করা হবে।
সংগঠনটির নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাসেমী বলেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ভারতে মুসলমানদের ওপর আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হলে তা ছাত্র-জনতা প্রতিহত করবে।
সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরের নেতারাও বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে, জুম্মার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে খেলাফত মজলিস। গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সেখান থেকে বাংলাদেশ মুসলিম সমাজসহ মিছিল বের করে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। এ সময় ফিলিস্তিনে মুসলমানদের রক্ষায় বিশ্বের সব মুসলমানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গতকাল বায়তুল মোকাররম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে আগে থেকেই কর্মসূচি ঘোষণা করে অনেক সংগঠন। তবে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ‘পুনর্বাসন প্রচেষ্টার’ প্রতিবাদেও বিক্ষোভ হওয়ার কথা ছিল। এসব কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকাল থেকে বায়তুল মোকাররমের সামনে সতর্ক অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সরেজমিন দেখা যায়, পল্টন মোড়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের জলকামান ও এপিসি কার রাখা। পাশাপাশি দুটি প্রিজন ভ্যানও প্রস্তুত রাখে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রতিটি প্রবেশপথে ছিল কঠোর নজরদারি। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। নাইটিংগেল মোড়েও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নিরাপত্তার স্বার্থে মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরাও বিশেষ জ্যাকেট পরে নজরদারি চালান।
গাজায় হামলার নিন্দা মির্জা ফখরুলের
ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক বিবৃতিতে গাজায় রক্তপাত বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় ফিলিস্তিন উপত্যকাটি যেন এখন এক ভয়াল মৃত্যুপুরী।
নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার দাবি সিপিবির
ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন স্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। শুক্রবার পুরানা পল্টন মোড়ে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সিপিবির প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। দলটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান হাসান তারিক চৌধুরী। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
প্রেস ক্লাবের সামনে বাসদের বিক্ষোভ
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় বর্বরতার প্রতিবাদ এবং সেখানে হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সদস্য জুলফিকার আলী ও নগর কমিটির সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন। সভাপতিত্ব করেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
ইসরায়েলি, মার্কিন ও ভারতীয় পণ্য বর্জনের শপথ
গাজায় হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েলি, মার্কিন ও ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে শপথ নিয়েছে আমজনতার দল। দলটির সদস্য সচিব তারেক রহমান শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে উপস্থিত সবাইকে শপথ পড়ান। এর আগে তারা মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় থেকে প্রেস ক্লাবের দিকে রওনা হলে সেনাসদস্যরা তাদের বায়তুল মোকাররমের দিকে ঘুরিয়ে দেন। কিছুক্ষণ সড়কে স্লোগান দিয়ে প্রেস ক্লাবের দিকে মিছিল নিয়ে যান।
এ ছাড়া গাজায় হামলার প্রতিবাদে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, পিরোজপুর, শরীয়তপুর, রাঙামাটি, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, যশোর, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, পাবনা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।