আগামী এপ্রিলে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ‘বিমসটেক’ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আজ শুক্রবার এ বিষয়ে কোনো আলোকপাত করতে পারেননি। মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এই মুহূর্তে তাঁর কিছুই বলার নেই।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর প্রায় আট মাস হতে চললেও এখনো নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো বৈঠক হয়নি। আগামী এপ্রিলের ২ থেকে ৪ তারিখে ব্যাংককে বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সেখানে সম্মেলনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদি ও মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, এই বৈঠকের জন্য ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেছে। আজ বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, এই মুহূর্তে ওই বিষয়ে জানানোর মতো কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই।

গত বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সে সময় তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরের মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ; কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। ব্যাংককে সেই সুযোগ ঘটতে পারে। বাংলাদেশ সে জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে।

আজ ভারতের কোনো কোনো প্রভাতি দৈনিকে বিষয়টি উঠে এসেছে। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও কাঠামোগত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা কম। কারণ, ভারত মনে করছে, সেই আলোচনার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।

রাজনৈতিক পালাবদলের পর বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ নিয়ে ভারত সরব। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন এবং ‘ইসলামি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদী উপাদানের’ উত্থান নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা জানিয়ে গেছেন দেশটির গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের ওপর ভারত তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে।

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগেই চলতি মাসে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে যাওয়ার কথা। আবার এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সফরে আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী একাধিকবার বলেছেন, ভারত–বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে কথা হবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে। ভারতের কূটনৈতিক মহলের ধারণা, ব্যাংকক সম্মেলনের অবসরে দুই নেতার মধ্যে সৌজন্য বিনিময় অবশ্যই হতে পারে। তবে কাঠামোগত দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সম্ভাবনা এখনো ক্ষীণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র ব মসট ক সরক র র র বর ত

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতির মৃত্যু কৃষক গ্রেপ্তার

শেরপুরের নালিতাবাড়ী গারো পাহাড়ের পূর্ব সমশ্চুড়া এলাকায় ধানক্ষেতের পাশে দেওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে জমির মালিক জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 
এর আগে ৩১ অক্টোবর একইভাবে পার্শ্ববর্তী বাতকুচি গ্রামের টিলাপাড়া এলাকায় একটি বন্যহাতি প্রাণ হারায়। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে মানুষের পাতা ফাঁদে দুটি হাতির মৃত্যু হলো। 
বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জার দেওয়ান আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রাতেই ঘটনাস্থল থেকে জেনারেটরের জিআই তার জব্দ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, এক সপ্তাহ ধরে ২০-২৫টি বন্যহাতির পাল উপজেলার গারো পাহাড়ের বিভিন্ন টিলা ও জঙ্গলে অবস্থান করছে। দিনে টিলা বা জঙ্গলে অবস্থান করলেও সন্ধ্যার পর তারা দল বেঁধে ধানক্ষেত এবং লোকালয়ে নেমে আসে।
পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামে গুচ্ছগ্রাম-সংলগ্ন এলাকায় পাহাড়ের ঢালে ৭০-৮০ একর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। গারো পাহাড়ে অবস্থানরত বন্যহাতির দলটি সম্প্রতি পাহাড়ি এলাকার বোরো ধানক্ষেতে প্রতিনিয়ত খাবারের সন্ধানে হানা দিচ্ছিল। কৃষকরা ফসল রক্ষায় মশাল জ্বালিয়ে এবং হৈহুল্লোড় করে  হাতির পাল প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। অনেকেই বন্যহাতির কবল থেকে ফসল রক্ষায় ধানক্ষেতে জেনারেটরের মাধ্যমে তার দিয়ে ঘিরে রাখেন। 
বৃহস্পতিবার রাতেও অন্যান্য দিনের মতো পূর্ব সমশ্চুড়া গুচ্ছগ্রাম-সংলগ্ন লাল টেঙ্গর এলাকায় পাহাড়ের ঢালে থাকা জিয়াউর রহমানের বোরো ধানক্ষেতে হানা দেয় বন্যহাতির পাল। এ সময় একটি মাঝ বয়সী পুরুষ হাতি ক্ষেতের পাশে দেওয়া জেনারেটরের জিআই তারে জড়িয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ সময় সঙ্গে থাকা অন্য হাতিরা ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে তাণ্ডব চালায় ও মৃত হাতিটিকে ঘিরে রাখে। এ কারণে ভয়ে ফসল রক্ষায় বা হাতিটি উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। রাত ১১টার দিকে বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। রাতেই কৃষক জিয়াউরকে নন্নী বাজার থেকে আটক করে পুলিশ।
গতকাল দুপুরে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শেরপুরের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আমিন ওই কৃষকসহ অজ্ঞাতনামা দু’জনের বিরুদ্ধে বন্যহাতি হত্যার অভিযোগ এনে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা করেন। 
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমরা বারবার বুঝাতে চেষ্ট করছি, হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের শতভাগ ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে। তবু তারা যেন হাতির ওপর আক্রমণ না করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ