শিক্ষার্থীদের অবরোধে আটকা দুই ট্রেন
Published: 21st, March 2025 GMT
পলিটেকনিকে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের স্থানান্তর, প্রমোশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে দিনাজপুরে রেলপথ অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকাগামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেসসহ দুটি ট্রেন আটকা পড়লে জেলার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার জিলা স্কুলের সামনে রেললাইনে এ কর্মসূচী পালন করেন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
প্রশাসনের আশ্বাসে পৌনে তিন ঘণ্টা পর অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন আন্দোলনকারীরা। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তারা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের স্থানান্তর, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর করা, উপসহকারী প্রকৌশলী পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত করা, কারিগরি বোর্ড সংস্কারসহ ছয় দাবি জানিয়ে আসছে। এসব দাবি আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন।
কর্তৃপক্ষ দাবি আদায়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তারা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, যদি তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ সময় তারা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
বেলা পৌনে ১২টা থেকে শিক্ষার্থীদের অবরোধে পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ও বিরল থেকে লালমনিরহাটগামী কমিউটার ট্রেন দিনাজপুর রেলস্টেশনে আটকা পড়ে। জিলা স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
দুপুর ১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আনোয়ার হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নূরে আলম।
আশ্বাস পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এ সময় আটকে থাকা ট্রেন গন্তব্যে রওনা হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভরাট করা হয়েছে ৫০ শতক জমি নির্মাণ করা হবে গোডাউন, অফিস
রাজশাহীর চারঘাটে মাছের জন্য ইজারা নেওয়া রেলের জলাশয়ে গোডাউন ও অফিস নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। এরই মধ্যে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে ওই জলাশয়ের অর্ধেক ভরাট করেছেন হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যবসায়ী। স্থানীয়রা অভিযোগ জানালেও ভরাট বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
হুমায়ুন কবিরের দাবি, কালভার্টের মুখ দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হবে। তা ছাড়া পুরো জায়গাটি ভরাট করা হবে না। অনেক টাকা খরচ করে রেল কর্তৃপক্ষ থেকে নিজ নামে বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিয়েছেন। তবে এ-সংক্রান্ত কাগজ দেখতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহসুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, রেলের জমি সাবলিজ কিংবা জমির শ্রেণির পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। জলাশয় ভরাটের অনুমোদন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
১৯২৯ সালে নন্দনগাছী স্টেশনটি স্থাপিত হয়। জনবল সংকটের কারণে স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। বর্তমানে এই স্টেশনে লোকাল ট্রেন থামলেও কোনো জনবল নেই। এ সুযোগে প্রভাবশালীরা ইচ্ছেমতো রেলওয়ের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। তাদেরই একজন হুমায়ুন কবির। তাঁর লোকজন রেললাইন ঘেঁষে রেলের জলাশয়ের পশ্চিম অংশ ভরাট করছে। সেখানে পোলট্রির গোডাউন করা হবে। এ কাজ করার আগে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি ওই পোলট্রি ব্যবসায়ী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ১৯৯০ সালে রেলের এক একর জলাশয় লিজ নেন সওবান আলী ও পলাশ আলী নামে দুই ভাই। সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে ৫০ শতক জায়গা সাবলিজ নেন হুমায়ুন কবির। যদিও রেলের জমি সাবলিজ দেওয়ার বিধান নেই। হুমায়ুন জমিটি রেলের কাছ থেকে নিজে লিজ নিয়েছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের ফিল্ড কানুনগো শরিফুল ইসলাম বলেন, হুমায়ুন কবির নিজের নামে লিজ চাইলেও তাঁকে দেওয়া হয়নি। সেই জমি পলাশ আলীর নামেই লিজ রয়েছে। তাঁকে (হুমায়ুনকে) জলাশয় ভরাটের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
নন্দনগাছী বাজারের ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে নন্দনগাছী বাজারের সব পানি রেলওয়ের জলাশয় হয়ে কালভার্ট দিয়ে পার্শ্ববর্তী বিলে নেমে যায়। জলাশয় ভরাট করায় পানি নামতে পারবে না। এতে বাজারে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। রেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা পরিদর্শন করে চলে যায়। আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।
শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, এমনিতে বর্ষায় কয়েক মাসজুড়ে নন্দনগাছী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ জলাবদ্ধ থাকে। এরপর আবার একের পর এক জলাশয় দখল হয়ে যাচ্ছে। জলাশয় ভরাট বন্ধ না করলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উপজেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০ দিন ধরে প্রভাবশালীরা দাঁড়িয়ে থেকে রেলের জলাশয় ভরাট করছে। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এমনটি হচ্ছে। এজন্য বারবার অভিযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ভরাট কাজের শুরুতেই স্থানীয়রা অভিযোগ জানালে ফিড ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরকে নিষেধ করা হয়েছে। সে ভরাট কাজ বন্ধ করেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।