আ.লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে যা বললেন জিএম কাদের
Published: 21st, March 2025 GMT
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, “আওয়ামী লীগ একটি গাড়ির ন্যায়। সেই গাড়ির ভেতরে থাকা ড্রাইভার খারাপ হতে পারে, কিন্তু গাড়িটি খারাপ না। কাজেই এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে। এগুলো না বুঝে, দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে বাইরের রেখে ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না। তাই দলটিকে নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না।”
শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেলে দুই দিনের সফরে রংপুরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, “পুলিশ বাহিনীর মনোবল ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যে কারণে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। এখন সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। যা দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। রাজনীতির আগে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষা করা জরুরি। এজন্য সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।”
আরো পড়ুন:
‘ক্লিন ইমেজের’ আড়ালে ‘কলঙ্ক’, দুদকের জালে জিএম কাদের
দেশে মবক্রেসি চলছে, জানমালের নিরাপত্তা নেই: জিএম কাদের
তিনি বলেন “আমেরিকা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। এখন সরকার যদি প্রমাণ করতে না পারে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নেই, তাহলে সামনে বড় সংকট আসতে পারে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “বিভিন্নভাবে দেশে মৌলবাদের উত্থান ঘটছে। মব জাস্টিস হচ্ছে, অথচ এসব দমনে বর্তমান সরকার ব্যর্থ। ফলে আগামীতে এসব কারণে দেশের জনগণ চরম বিপদের মুখে পড়তে পারে।”
জিএম কাদের বলেন, “বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ দুর্যোগময় পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। জনগণের আস্থার জায়গা পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বিচার বিভাগ অপব্যবহার হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজানো আর সহজ হবে না।”
জাতীয় পার্টির এই নেতা জানান, নব্য ফ্যাসিবাদীরা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অতীতে শেখ হাসিনার মতো তার ইমেজ নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিগত সময়ে সব বাহিনী চেষ্টা করেও দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি তার বিরুদ্ধে। অথচ এখন নতুন করে দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। যা কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা বলেও মনে করেন তিনি।
ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র জ এম ক দ র
এছাড়াও পড়ুন:
কার স্বার্থে এমন বিনাশী প্রকল্প
হাওরের পরিবেশ বিনাশের যাবতীয় বন্দোবস্ত থেমে নেই। নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে হাওর অঞ্চলকে এমনেই সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে, সেখানে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি প্রকল্প। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরের বুক চিরে নির্মাণ হচ্ছে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। প্রকল্পটি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে নেওয়া হয়েছিল। বাস্তবিক অর্থে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণের উপকার বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
পানি আইন ২০১৩-তে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ বা উহার প্রবাহে বাধা সৃষ্টি বা উহার গতিপথ পরিবর্তন বা পরিবর্তনের চেষ্টা করিতে পারিবে না।’ এই প্রকল্পের এই আইনের স্পষ্ট ব্যত্যয় ঘটছেই বলতে হয়। এ ছাড়া কৃষকদের মতামত নেওয়া হয়নি, জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে, অথচ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। এই রাস্তা শুধু কৃষকদের জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, বরং হাওরের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত করবে, যার কারণে উজানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
কৃষকদের অভিযোগ অনুযায়ী, যখন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, তখন তাঁরা বাধা দিয়েছিলেন, কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁদের চাপে ফেলেন। এখন ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও একই কৌশল ব্যবহৃত হচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ নয়, বরং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সুবিধা নিশ্চিত করা।
এখানে আরও বড় প্রশ্ন হলো, প্রকল্পটি আদৌ কতটা প্রয়োজনীয়? হাওর এলাকার বিশেষ প্রকৃতি এবং পরিবেশগত গুরুত্ব বিবেচনায় না নিয়েই কীভাবে একটি সড়ক নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হলো? সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেই হাওরের বুক চিরে সড়ক নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন। অথচ তাঁরই একান্ত ইচ্ছায় একই ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
যে টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যয় হওয়ার কথা, তা ক্ষমতাধর ব্যক্তির ইচ্ছাপূরণে ব্যয় হওয়ার চক্র থেকে মানুষের মুক্তি কি আদৌ ঘটবে? স্থানীয় প্রশাসন যদিও বলছে, প্রকল্পের বিষয়ে তারা খোঁজখবর রাখছে। বাস্তবতা হলো, কৃষকদের ক্ষতির কোনো প্রতিকার এখনো হয়নি। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা অর্থায়ন করছে। জাইকা যদি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করে, তবে তাদের উচিত প্রকল্পটির পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব পুনর্মূল্যায়ন করা। একই সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত প্রকল্পটি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা এবং স্থানীয় জনগণের মতামত নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি, পরিবেশবান্ধব এবং কৃষকদের ক্ষতি না করে এমন কোনো সমাধান বের করা। আর তা শুধু সাংহাই হাওর নয়, সমগ্র হাওর অঞ্চলেই যেন কার্যকর হয়।