ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেছেন, “শহীদের রক্তের দায় কোনো অবস্থাতেই ক্ষমা করা যায় না। রক্তের মূল্য বৃথা যায় না। কোনো রাজনীতি, কোনো অজুহাত বা কোনো কূটকৌশলে মানুষের রক্ত-জীবনকে বিক্রি করে দিলে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করে না।”

শুক্রবার (২১ মার্চ) জাতীয় শহীদ মিনারে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আ‌য়োজিত এক গণইফতার মাহ‌ফি‌লে এসব কথা ব‌লেন তিনি।

মাওলানা ইউনুস আহমাদ ব‌লেন, “রক্তের দায় যারা অস্বীকার করে তাদের শাস্তি ভোগ করতেই হয়। তাই ২৪ এর গণআন্দোলনসহ বিগত বছরগুলোতে যারা হত্যা, গুম, জুলুম ও নিপিড়নের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের বিচার করতেই হবে। এবং আগামীতে যেনো কোন স্বৈরাচার জন্ম নিতে না পারে সেজন্য রাষ্ট্র সংস্কার করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।”

আরো পড়ুন:

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে স্বাগত জানাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

রাখাল রাহার বিচার করতে হবে: হেফাজতে ইসলাম

তি‌নি বলেন, “আমাদের শিক্ষা না কর্মমুখী, না নৈতিকতাভিত্তিক। ফলে এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে জাতীকে নেতৃত্বে দেওয়ার মতো সৎ ও দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে না। তাই নৈতিকতাভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।”

তারুণ্যের বেকারত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব বলেন, “দেশে শিল্পায়ন করতে হবে। তারুণ্যকে সহজ ও সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। স্টার্টআপ প্রোগ্রামকে বাধাহীন উৎসাহ দিতে হবে।”

শাখা সভাপতি আরিয়ান মুহাম্মদ ইমনের সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হুসাইনের সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুনতাছির আহমাদ, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির হোসাইন,  ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নিয়ামাতুল্লাহ বিন হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মাদ রাছিবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

চৈত্রের শেষ দিনে জাবিতে ব্যাঙের পানচিনি ‘বিয়ে’ 

দিনভর প্রবল উত্তাপের শেষে বাংলা বছরের শেষ সূর্যের মেজাজ তখন কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে। গাছের নতুন পাতায় সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব উৎসবের সাজ দিয়েছে৷ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ফুটে ওঠেছে উৎসবের আমেজ।

উৎসবের পালে নতুন হাওয়া দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরাতন কলা ভবনের সামনে চলছে তখন পানচিনির আয়োজন। সবার মাঝে বিয়ের আমেজ। মঞ্চের একপাশে সেজেগুজে বসে আছে কনে। বরপক্ষের আগমনের অপেক্ষায় কনেপক্ষ। বিকেল ৫টার দিকে এক র‍্যালি নিয়ে হাজির বরপক্ষ। বরের মাথায় এক ঢাউস ছাতা।

হলুদ, ধান ও দূর্বা দিয়ে কনেপক্ষ বরপক্ষকে বরণ করে নিল। চলল আশীর্বাদ আদান-প্রদান। মন্ত্র পাঠের আগে অভিভাবকরা কথা দিলেন, আসছে আষাঢ়ে তাদের বিয়ে হবে। বরের বাবা হলেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অন্যদিকে কনের বাবার দায়িত্বে ছিলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন৷

তবে এটি কোনো মানুষের বিয়ে নয়। ব্যাঙের বিয়ে। খরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির প্রত্যাশায় কলা ও মানবিকী অনুষদ চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই ‘ব্যাঙের পানচিনি’র আয়োজন করেছিল। পানচিনি অনুষ্ঠান মূলত বিয়ের অঙ্গীকার প্রদান, আশীর্বাদ আদান-প্রদান এবং বর-কনের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর আয়োজন।

ব্যাঙের এই পানচিনি সম্পর্কে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান জানান, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রচণ্ড দাবদাহে যখন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, সেসময় বর্ষার আবাহন হিসেবে ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তাদের একটা কৃত্য হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা করে ব্যাঙের বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ বর্তমান সময়ে মানুষের সাথে প্রাণ-প্রকৃতির যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে তা নিরসনের প্রত্যাশায় প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তির দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ব্যাঙের পান-চিনি’ আয়োজন করা হয়।

ব্যাঙের পানচিনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেজেছিলেন বরপক্ষের সাজে। আর পুরাতন কলা ভবন কনেপক্ষ। বাঁশ আর রঙিন কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছিল ব্যাঙ-যুগলের বিশাল দুটি প্রতিকৃতি। গতরাতেই কনেপক্ষ বরপক্ষের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে আলাপটা সেরে এসেছিলো।

সকাল থেকেই উভয়পক্ষের বাড়িতে চলছিল সেই প্রস্তুতি। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে নেচে-গেয়ে বরপক্ষ হাজির হয় পুরাতন কলা ভবনের কনেপক্ষের বাড়িতে। কনেপক্ষ হুই-হুল্লোড় করে ‘গেট ধরলে’ চলে মধুর দর-কষাকষি। এরপর জমে ওঠে প্রীতি কথার লড়াই। কারও হার না মানা অবস্থায় মঞ্চে পাশাপাশি বসার সুযোগ হয় হবু বর-কনের।

বরপক্ষ ও কনপক্ষের এ মধুর লড়াই চলে বেশ সময় ধরে। কেউ কাউকে নাহি ছাড়৷ কারো মতে, বিয়ের দেনমোহর হওয়া উচিত কোটি টাকায়। কারো মতে, আরও কম৷ কেউবা বলছেন, ব্যাঙের বিয়ে হওয়া উচিত যে কোনো ধর্ম মেনে৷ তবে কনেপক্ষের মত, মানুষের ধর্ম নয়, ব্যাঙের ধর্ম মেনেই হবে ব্যাঙের বিয়ে৷ শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছে দুই পক্ষ। আংটি বদলের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চৈত্র সংক্রান্তির ব্যাঙের বিয়ে৷ 

ব্যাঙের পানিচিনি নিয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বৈশাখ থেকে প্রকৃতির পরিবর্তন হতে থাকে৷ ফলে প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের মানব মনে নাড়া দেয়৷’

সম্পর্কিত নিবন্ধ