কী হয়েছে ইলন মাস্ক ও টেসলার, কেন কমছে শেয়ারের দাম
Published: 21st, March 2025 GMT
শনির দশা হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের। প্রায় তিন মাসে তাঁর মূল কোম্পানি টেসলার বাজারমূল্য কমেছে ৭৬৩ বিলিয়ন বা ৭৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার—তাঁর নিজের সম্পদমূল্যও হুড়মুড়িয়ে কমেছে। এই কয়েক মাসে ৪৯ শতাংশ বাজারমূল্য হারিয়েছে টেসলা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, অটোমোটিভ শিল্পের ইতিহাসে এমন ঘটনা ‘নজিরবিহীন’।
যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি সূচকে এ বছর সবচেয়ে খারাপ করেছে ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা। টেসলার সামরিক মানের ট্রাক বাজার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। অথচ একসময় টেসলা জাতে উঠতে চাওয়া ও পরিবেশগতভাবে সচেতন বামদের গর্বের বস্তু ছিল। সম্প্রতি ডানপন্থীদেরও নয়নের মণি হয়ে উঠছিল এ ব্র্যান্ডটি। কিন্তু পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে টেসলার সবচেয়ে কট্টর সমর্থকেরা অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরাও ধৈর্য হারাতে বসেছেন।
বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিটের এক আর্থিক বিশ্লেষক টেসলাকে নীরবতা ভেঙে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য, আর চুপ করে থাকার সময় নেই। এখন সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি মনে করেন, টেসলা মানেই মাস্ক এবং মাস্ক মানেই টেসলা—এই দুটি নাম সমার্থক এবং একটি থেকে আরেকটি পৃথক করা যায় না।
বিশ্লেষকদের মতে, টেসলার এই নাটকীয় পতনের পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে—বিশ্ববাজারে বিক্রি কমে যাওয়া এবং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের রাজনীতিতে জড়ানো।
একসময় মনে করা হচ্ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি মাস্কের সমর্থন টেসলার জন্য সুফল বয়ে আনবে। নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর টেসলাই ছিল একমাত্র বৈদ্যুতিক গাড়ি, যাদের শেয়ারমূল্য বেড়েছিল। কিন্তু এর পর থেকেই বিধি বাম। ডিসেম্বর থেকে কমতে শুরু করে টেসলার শেয়ারের দাম।
জে পি মরগ্যান মনে করছেন, মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সিতে কাজ করা ঘিরে দেশেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণপন্থীরা যেমন এতে সন্তুষ্ট, তেমনি বামপন্থীরা ক্ষুব্ধ। তবে শেষ পর্যন্ত এই বিতর্কের ফলে টেসলার বিক্রিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে টেসলার বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে; বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙচুরও হয়েছে। ট্রাম্প এ ঘটনায় টেসলার পক্ষ নিয়ে বলেছেন, তিনি দোষীদের ‘দেশীয় সন্ত্রাসী’ ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইলন মাস্ক এখন ১১০ শতাংশ সময় দিচ্ছেন এই ডজিতে। তাঁরা বলছেন, মাস্ক টেসলাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করছেন। ফলে এখন পর্ষদকে নতুন সিইও বা প্রধান নির্বাহী খুঁজে নিতে হবে। যাঁরা এসব কথা বলছেন, তাঁরাই একসময় মাস্কের ভক্ত ছিলেন। সিএনএন বিষয়টিকে অস্বাভাবিক হিসেবেই আখ্যা দিয়েছে।
বিষয়টি হলো, বিনিয়োগকারীরা এত দিন মাস্কের উদ্ভট ও খ্যাপাটে আচরণ সহ্য করেছেন। এই মাস্ক একসময় বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন; একসময় কোভিড-১৯ নিয়ে অপতথ্য ছড়িয়েছেন; জনসমক্ষে ব্যবসায়িক অংশীদারদের সমালোচনা করেছেন। অন্যান্য সিইও বা প্রধান নির্বাহীর এ ধরনের আচরণ হয়তো সহ্য করা হতো না, কিন্তু মাস্ক এত দিন বেঁচে গেছেন।
এমনকি মাস্ক অনেক সময় শিশুতোষ আচরণ করলেও বিনিয়োগকারীরা মেনে নিয়েছেন কেবল একটি কারণে। সেটা হলো, মাস্ক শেষ পর্যন্ত ব্যবসা ঠিক রাখতে পেরেছেন।
এত কিছু সত্ত্বেও এটা ঠিক, ইলন মাস্ক এখনো বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং টেসলা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্র্যান্ড। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেসলা দ্রুত বাজার হারাচ্ছে। এর কারণ একাধিক, অংশত টেসলা ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না; এবং অংশত টেসলা নতুন কিছু উদ্ভাবন করেনি। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা টেসলার শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন এবং পরিণামে শেয়ারের দাম ডিসেম্বরের পর অর্ধেক কমেছে।
ইদানীং ইলন মাস্কের মধ্যে ধনকুবেরসুলভ আচরণ দেখা যাচ্ছে—এ বিষয়টিও তাঁর পক্ষে যাচ্ছে না। এত দিন মানুষের গাড়ি বয়কট করা বা টেসলার বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ, ভাঙচুর এসবের প্রতি ওয়াল স্ট্রিট তেমন পাত্তা দিত না; কিন্তু সেই বাস্তবতা আর নেই। সামাজিক আন্দোলনও মাস্কের কোম্পানির শেয়ারের দামে প্রভাব ফেলছে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে বুধবার দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী টেলিভিশন অনুষ্ঠানে টেসলা কেনার পরামর্শ দেওয়ার পরও বৃহস্পতিবার টেসলার শেয়ারের দাম ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে টেসলা কিনে তা ফলাও করে প্রচার করলে টেসলার শেয়ারের দাম সাময়িকভাবে বাড়ে।
বিষয়টি হলো, ইলন মাস্কের আয়ের বড় অংশই আসে টেসলা থেকে—এই কোম্পানিতে তাঁর শেয়ার ১৩ শতাংশ। মাস দুয়েক আগে আগুপিছু না ভেবে রাজনীতিতে জড়ালেন। ভেবেছিলেন, ব্যবসার মতো করে সরকারি কাজ করবেন। কিন্তু বাস্তবে এখন মূল কাজের প্রতি তাঁর নজর কমে গেছে। যে ব্যবসা তাঁকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী বানিয়েছে, সেই ব্যবসায় তাঁর নজর নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক র বলছ ন ব যবস ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ফারিয়াকে নিয়ে কু-মন্তব্য, সেই যুবকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রতিষ্ঠান
ছোটপর্দার অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা সেই যুবকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সাজিদা ফাউন্ডেশন। বুধবার রাতে প্রতিষ্ঠানটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়, রাকিবুল হাসান নামের সেই যুবকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন তারা।
সেখানে বলা হয়, গত ১৮ মার্চ শবনম ফারিয়ার ফেসবুক পোস্টে সাজিদা ফাউন্ডেশনের কর্মী রাকিবুল হাসান কু-মন্তব্য করেন। আমরা তীব্রভাবে এর নিন্দা জানাই। এ ধরনের আচরণ (অফিস সময়ের ভেতরে বা বাইরে) সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের সুরক্ষা কমিটির তদন্ত চলছে এবং প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাজিদা ফাউন্ডেশনের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করে শবনম ফারিয়া পাল্টা এক পোস্টে লেখেন, ‘অনলাইনে বা অফলাইনে, কেউই কোনো নারীর প্রতি হয়রানি করার অধিকার রাখে না। অসম্মানজনক আচরণ কখনোই সহ্য করা উচিত নয়, আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি সাজিদা ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য। তাদের এই দ্রুত সিদ্ধান্ত স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, এমন আচরণের ফলাফল ভোগ করতে হয়, তা যেখানেই হোক না কেন। আসুন, আমরা সবাই হয়রানির বিরুদ্ধে দাঁড়াই এবং সৌহার্দ্য ও শ্রদ্ধাশীলতার পরিবেশ গড়ে তুলি।’
ঘটনার সূত্রপাত ১৬ মার্চ। এদিন শবনম ফারিয়া, শাকিব খান, ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ, তানজিদ হাসান তামিমসহ বিভিন্ন অঙ্গনের একঝাঁক তারকা উপস্থিত ছিলেন শাকিব খানের প্রসাধনী প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে। কয়েকটি ভিডিও ক্লিপে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠতে দেখা গেছে অভিনেত্রীদের।
এর মধ্যে একটি ক্লিপে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াকে হাসতে হাসতে বলতে শোনা যায়, আমি তাসকিনের পাশে দাঁড়াব না। আমাকে খাটো লাগবে। তামিম ভাইয়া, তুমি আসো। শবনম ফারিয়া সেই ভিডিও ক্লিপের মন্তব্যের ঘরে আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায় এক যুবককে। যা অভিনেত্রীসহ নেটিজেনদের দৃষ্টি এড়ায়নি।
বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। পোস্টে ওই যুবকের কমেন্টের স্ক্রিনশট ও ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি তুলে ধরে প্রতিবাদ জানান ফারিয়া। সেই সঙ্গে সাজিদা ফাউন্ডেশনে চাকরি করা সেই যুবকের এই ধরনের মন্তব্যের কারণে প্রতিষ্ঠানটির নামও উল্লেখ করেন নিজের স্ট্যাটাসে। যা রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।