কেরানীগঞ্জের ‘আব্বা বাহিনীর মদদদাতা’ আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল গ্রেপ্তার
Published: 21st, March 2025 GMT
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৪টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট থানা এলাকার বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ‘আব্বা বাহিনীকে’ মদদ দেওয়ার অভিযোগ আছে।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীন উদ্দিন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় ইকবালকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় দুটি মামলা আছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগে ‘আব্বা বাহিনী’ গড়ে উঠে। ইকবাল হোসেন ও তাঁর ভাই শুভাঢ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাছের উদ্দিন অনেক আগে থেকেই দলবল নিয়ে চলতেন। সেই দলবলই পরে ‘আব্বা বাহিনীতে’ রূপ নেয়। এ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন বাছের। আর মাঠ পর্যায়ে বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন তাঁর ছেলে ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব উদ্দিন (রাব্বি)। আর এই বাহিনীকে মদদ দিয়ে এসেছেন ইকবাল। আব্বা বাহিনীর বিরুদ্ধে মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ আছে। এসব কর্মকাণ্ডে কেউ বাধা দিলে তাঁদের ওপর হামলার পাশাপাশি কুপিয়ে জখম করা হতো। সেই সঙ্গে টর্চার সেলে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হতো।
সূত্রগুলো আরও জানায়, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ‘আব্বা বাহিনীর’ কর্মকাণ্ড আলোচনায় আসে। চাঁদার টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ওই সময় সাইফুল ইসলাম নামের বাহিনীটির এক সদস্যকে টর্চার সেলে ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে সাইফুলের মৃত্যু হয়। নির্যাতনের একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। সমালোচনার মুখে আফতাবসহ বাহিনীটির ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে আব্বা বাহিনীর মদদদাতা ইকবাল প্রভাবশালী হওয়ায় এত দিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইকব ল
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের ভয় দেখিয়ে চার কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ
ক্রসফায়ার ও গুমের ভয় দেখিয়ে ৪ কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করছেন পুলিশের চার কর্মকর্তা। এমন অভিযোগ করেছেন দেশের অন্যতম মেডিকেল ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠান ‘মেডিকো’র প্রতিষ্ঠাতা ডা. জুবায়দুর রহমান জনি। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
পুলিশ কর্তৃক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা, শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করেন ডা. জুবায়দুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও শাস্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ষড়যন্ত্রমূলক প্রশ্নফাঁস মামলায় গত ২ আগস্ট বাসা থেকে ডা. জুবায়দুর রহমানকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর ক্রসফায়ার ও গুমের ভয় দেখিয়ে তাঁর পারিবারের কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করে সিআইডি’র সাবেক অপরাধ তদন্ত প্রধান মোহাম্মদ আলী ও পুলিশের তিন কর্মকর্তা।
অন্য তিন কর্মকর্তা হলেন, র্যাব-১৪ এর সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সেবা) জুয়েল চাকমা, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান, ঢাকা মালিবাগ সিআইডির অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ-পরিদর্শক আতিকুর রহমান।
ডা. জুবায়দুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর ছয় কিস্তিতে আমার পরিবারের কাছ এ টাকা নেয় মোহাম্মদ আলী সিন্ডিকেট। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় দেড় কোটি, কারাগারে থাকা অবস্থায় দেড় কোটি, কারাগার থেকে বের হয়ে আসার পর এক কোটি নেয়।
তিনি জানান, আগাঁরগাও আইসিটি টাওয়ার, পাসপোর্ট অফিস, বেতার ভবন আশেপাশের রাস্তার থেকে সাব-ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসান নিজের গাড়ি দিয়ে এসে নিয়ে গেছেন। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় শারীরিক নির্যাতন, নতুন আরও মামলা, স্ত্রীকে গ্রেপ্তার ও মেডিকো সীলগালা করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এ অর্থ আদায় করা হয়।
ডা. জুবায়দুর রহমান দাবি করেন, টাকা নেওয়ার বিষয়ে একাধিক অডিও রেকর্ড রয়েছে তাঁর কাছে। তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের স্কাইসিটি হোটেলে ডেকে মুক্তির বিনিময়ে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করা হয়। এছাড়া রিমান্ডে ক্রসফায়ারে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় এবং তা একজন সাংবাদিক দিয়ে ভিডিও নেওয়া হয়।
প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক দাবি করে তিনি বলেন, আমার পরিবারের একমাত্র বোন দুইবার মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পায়নি, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, এছাড়া আমার স্ত্রী’র দুইবার মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়ে সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়নি। পরবর্তীতে ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমার স্ত্রীকে কেন স্কাইসিটি হোটেলে ডাকা হয়েছিল? কেন আমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হয়েছিল? এটা কি শুধুই তদন্তের অংশ, না কোনো চক্রান্ত?’ তখন আমার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের স্কাইসিটি হোটেলে ডেকে মুক্তির বিনিময়ে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করা হয়।
উল্লেখ্য-২০২৩ সালের জুলাইয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে সিআইডি তদন্ত শুরু করে। তার ধারাবাহিকতায় ২৩ আগস্ট ভোরে সাদা পোশাকে পুলিশ ডা. জনিকে তার বাসা থেকে আটক করে। অভিযোগের এ বিষয়ে জানতে সিআইডির সাবেক অপরাধ তদন্ত প্রধান মোহাম্মদ আলীকে ফোনে করা হলে সিমটি বন্ধ দেখায়।