গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমনকে গুলি করে হত্যার পেছনে মহাখালী এলাকার ‘সেভেন স্টার গ্রুপের’ সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি তাদের। পুলিশ বলছে, এ বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত করলেও এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে গুলশান ১–এর পুলিশ প্লাজার উত্তর পাশের সড়কে সুমন মিয়াকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। ওই ঘটনায় সুমনের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে আজ শুক্রবার গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেল ও তাঁর সহযোগীরা এর আগে একাধিকবার সুমনের ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে মারধরও করেছিলেন। ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসার দ্বন্দ্বের জের ধরেই গতকাল রাতে সুমনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী।

মৌসুমী আক্তার প্রথম আলোকে জানান, মহাখালীর টিবি গেট এলাকায় ‘প্রিয়জন’ নামে সুমনের ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা রয়েছে। তিনি মহাখালী এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ দিতেন। আর সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেলও মহাখালীতে কেব্‌ল টিভি সংযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করতেন। ২০২০ সালে করোনার সময় রুবেলের সহযোগী জামাল, সেন্টু ও আফজাল মারধর করে সুমনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ সময় তাঁরা কয়েক লাখ টাকার ইন্টারনেট লাইনের তার নিয়ে যান।

মৌসুমী আক্তার জানান, ওই ঘটনার পর তৎকালীন গুলশান থানার ওসিকে অনুরোধ করে পুলিশের হস্তক্ষেপে সেই সংযোগ আবার চালু করেছিলেন সুমন। তখন সন্ত্রাসী রুবেলের সহযোগী জামাল ও সেন্টুর নেতৃত্বে মহখালীর টিবি হাসপাতালের গেট এলাকায় সুমনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে তাঁর দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় জামালসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করলেও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করেনি। পরে তাঁরা জামিনে মুক্ত হন। পরে আফজাল, শফিক, বিন্দু ও সেন্টু কয়েকবার সুমনকে মারধর করেন। এরপর টিবি হাসপাতাল এলাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁরা ভাষানটেকের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। সুমনের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। তাঁর বাবার নাম মাহফুজুর রহমান।

মৌসুমী আক্তার বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর সালোয়ার কামিজ তৈরির জন্য গুলশান ১–এর পুলিশ প্লাজার কাছে গিয়েছিলেন সুমন। সেখান থেকেই হয়তো তাঁকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে সুমনের শ্বশুর আক্তার শেখ প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে রুবেলের এক সহযোগীকে অস্ত্রসহ পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিলেন সুমন। তার পর থেকে রুবেল বাহিনী তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। রুবেল বাহিনী কয়েকবার সুমনকে মারধর করে, আবার তাঁর বিরুদ্ধেই থানায় মামলা দিয়েছিল। তারা সম্প্রতি সুমনকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো.

তারেক মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, সুমন মিয়া হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। রুবেল গ্রুপের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্ব ছাড়াও অন্য কোনো কারণ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশের গুলশান থানার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও র‍্যাব এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে।

নিহত সুমনের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি ও মারামারির অভিযোগে গুলশান, বনানী ও বাড্ডা থানায় ছয়-সাতটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স মন স মন র স মনক গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঈশ্বরদীতে অটোরিকশাকে ধাক্কা দেওয়া বাসটির নিবন্ধন স্থগিত

পাবনার ঈশ্বরদীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে দুর্ঘটনায় যুক্ত ভলকা পরিবহনের সংশ্লিষ্ট বাসের নিবন্ধন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বৃহস্পতিবার রাতে বিআরটিএর পাবনা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) আলতাব হোসেনের সই করা চিঠিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

পাবনা-ব-১১-০১৫৯ নম্বর বাসটি নিবন্ধিত হয়েছে নিটল মোটরসের নামে। বিআরটিএ বলেছে, বাসটির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর। ওই বাসের মালিককে রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ আগামী তিন দিনের মধ্যে বিআরটিএ পাবনা কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে নিবন্ধন বাতিলসহ মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।

বিআরটিএর চিঠিতে বলা হয়েছে, ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের বহরপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে দুর্ঘটনায় পড়ে বাসটি। এতে ওই অটোরিকশার পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনার পর সন্ধ্যা সাতটায় পাবনা সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক এস এম ফরিদুল রহিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ অবস্থায় ২০২২ সালের সড়ক পরিবহন বিধিমালা অনুযায়ী পাবনা-ব-১১-০১৫৯ নম্বর বাসের নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।

আরও পড়ুনঈশ্বরদীতে অটোরিকশাকে বাসের ধাক্কা, একই পরিবারের তিনজনসহ নিহত ৪২০ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ