‘সি টু সামিট’-এর পথে শাকিল হাঁটা শুরু করেছে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫। ‘সি টু সামিট’ ব্যপারটা খোলাশা করে বলি। সমুদ্র সৈকত থেকে পায়ে হেঁটে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট সামিটের পুরোটা পথ হেঁটে যাবে শাকিল। বিশ্বে এখন পর্যন্ত আর একজন ব্যক্তি এই পাগলামি করেছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ম্যাকার্টনি-স্নেপ। ১৯৯০ সালে ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পা রাখেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। শাকিল বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে এই যাত্রা শেষ করার প্রয়াস করেছে ৯০ দিনে এবং দূরত্ব হবে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ। অর্থাৎ এই পাগলামিটা করতে পারলে শাকিলের এবং বাংলাদেশের জন্য একটা মাইলফলক হবে বিশ্বদরবারে। এই অভিযান শুধু ভৌগোলিক পথচলা নয়, বরং এক অন্তর্নিহিত প্রতিজ্ঞা, পরিবর্তনের এবং সচেতনতার। সিঙ্গেল-ইউজড প্লাস্টিক দূষণ কমানো ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের বার্তা নিয়ে শাকিল তার দীর্ঘ পথচলা শুরু করেছে। 

এটাকে ‘পাগলামি’ বললাম কারণ, আমরা যারা এসব করে বেড়াই আমাদের সমাজের মানুষ ‘পাগল’ বলে আখ্যায়িত করে। সবাইকে সব কিছু করতে হবে না, কিছু লোক পাগলামি করে যদি বিশ্ব রেকর্ড করতে পারে তাহলে পাগলই ভালো। শাকিল তার লক্ষ্যে সফল হলে, এটি হবে পদযাত্রা করে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে এবং সবচেয়ে কম সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড।

কক্সবাজার থেকে হেঁটে হেঁটে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জ হয়ে ১২ দিন পর ঢাকায় পৌঁছাল শাকিল। এরপর ৯ মার্চ ‘প্রাণ’র সৌজন্যে প্রেস কনফারেন্স হলো ঢাকার শুটিং ক্লাবে। সেখানে শাকিল তার যাত্রার লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ব্যপারে সবাইকে জানালো। এই কর্ম সম্পাদন করতে যে পাহাড়সম অর্থায়ন প্রয়োজন সে জন্য স্পন্সর ও দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানালো। এখনো এভারেস্ট যাত্রায় শাকিলের অর্ধেক অর্থের ঘাটতি রয়েছে। জানিয়ে রাখি, এভারেস্টে চড়তে হলে নেপাল সরকারকে জমা দিতে হয় পনেরো হাজার ইউএস ডলার। 

সব কিছু গুছাতে শাকিল কয়েকদিন সময় নিলো এবং এরপর ঢাকা থেকে হাঁটা শুরু করল। প্রতিদিন যেখানে হাঁটা শেষ হচ্ছে পরদিন সেখান থেকেই আবার হাঁটা শুরু হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে শাকিলের সঙ্গে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত হেঁটে যাচ্ছে মাসফিকুল হাসান টনি। নাটরের ছেলে, মিষ্টভাসী আর বেশ এনার্জেটিক। বছর দুই আগে সে ভোমরা সীমান্ত থেকে হেঁটে বান্দারবানের সাকাহাফং চূড়ায় উঠেছিল। সেই অভিজ্ঞতা বই আকারে প্রকাশ করেছে অদ্রি প্রকাশনী থেকে। কক্সবাজার থেকে কয়েকদিনের পথ হেঁটেছে পর্বতারোহী বিপ্লব ভাইও। 

ভোরবেলা তারা সায়েদাবাদ থেকে রওনা দিয়েছে। আজকে যুক্ত হয়েছে একদল অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষেরা। আমি যুক্ত হলাম কারওয়ান বাজার থেকে। পর্বতারোহী সাদিয়া সম্পা আপা শাকিলের এই যাত্রার সব ধরনের আপডেট দিচ্ছেন। সকাল থেকে আপার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের জায়গামত ধরে ফেললাম। আজকে শাকিলের কাজ থাকায় পল্লবীতে গিয়ে এই হাঁটার ইতি টানা হবে। এতোদিন হেঁটে আসার নানা অভিজ্ঞতা, এভারেস্টে যাবার পরিকল্পনা এসব গল্প শুনতে শুনতে আমরা ফার্মগেট, আগারগাঁও হয়ে মিরপুর চলে এলাম। 

শাকিলের সঙ্গে সি টু সামিটের অংশীদার হয়ে কিছুদিন হাঁটার পরিকল্পনা করে গতকাল থেকে হাঁটা শুরু করে দিয়েছি। ভোরে পল্লবী থেকে হাঁটা শুরু হলো, গন্তব্য গাজীপুরের কালিয়াকৈর। দেরি করে ঘুম ভাঙ্গাতে আমি ওদের আশুলিয়া বাজারে এসে ধরলাম। সেখান থেকে কালিয়াকৈর এসে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেল। 

আশুলিয়ার রাস্তাটা বেশ বাজে, অতিরিক্ত ধুলা আর গাড়ির শব্দ। আশুলিয়া থেকে আমরা বিকল্প রাস্তায় কালিয়াকৈরের দিকে হাঁটতে থাকলাম। জিরাবো বাজার থেকে আবার মেইন রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলাম। পথে শাকিলের বন্ধু এবং মামার সঙ্গে আমাদের দেখা হলো। দিদার উত্তরা থেকে হাঁটা শুরু করেছিল, চন্দ্রার কাছে এসে সে বিদায় নিলো। চন্দ্রাতে আমরা ইফতার করে আরো পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে কালিয়াকৈর পৌঁছালাম। সাংবাদিক ভাইরা শাকিলের এই পদযাত্রার এবং আমাদের বক্তব্য ধারণ করলেন। শাকিলের এই উদ্যোগের ব্যাপারে তারাও বেশ কৌতূহল নিয়ে সংবাদ প্রচারে ফুল নিয়ে হাজির হয়েছে। শাকিলের পৈতৃক বাড়ি কালিয়াকৈরের বাগচালা গ্রামে। এত কাছে এসে মায়ের মুখ না দেখলে কি হয়!  সে যে লম্বা সফরে বের হয়েছে। তাই আমাদের সে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলো। রাতটা থেকে ভোরবেলা হাঁটা শুরু হবে।

বছর দুই আগে আমি মির্জাপুর থেকে হেঁটে বাংলাবান্ধা গিয়েছিলাম ১৩ দিনে। তখন সঙ্গে ছিল নেপালি তরুণ ঈ। পথে পথে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছিল এবং নতুন কিছু মানুষকে পেয়েছি যারা আত্মীক বাঁধনে যুক্ত হয়েছে। এবারেও পথ চলতে চলতে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। এ ছাড়া পথের বিচিত্র অভিজ্ঞতা তো রয়েছেই। টনি আর শাকিলের সাথে গল্প করতে করতে হাঁটতে বেশ ভালো লাগছে। শাকিল নেপালে ট্র্যান্স হিমালয় শেষ করেছে আর টনি ভোমরা থেকে সাকা হাফং। অনেক অনেক গল্প। অদ্রি থেকে প্রকাশিত তার বই এ বছর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। নাম ‘অভিযাত্রীর পদচিহ্ন ভোমরা থেকে সাকা হাফং’। 

আলাপনে দীর্ঘ পথ কখন ফুরিয়ে গেল টের পেলাম না। তবে প্রচণ্ড তাপ ত্রাহি অবস্থা করে দিয়েছে আমাদের। টাঙ্গাইল হয়ে যমুনা নদী সাঁতার কেটে শাকিলকে পার করে দিয়ে আসবো এখন পর্যন্ত এমনই পরিকল্পনা। 

এভারেস্টের পথে এই লম্বা সফরে পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি অনুষঙ্গ। যা এখনো পুরাপুরি জোগাড় হয়নি। সাহস করে সে পথে নেমে গেছে সেজন্য সাধুবাদ। আশাকরি বাংলাদেশের পতাকা পৃথিবীর সর্বচ্চ পর্বতশৃঙ্গের চূড়াতে আবারো উড়বে। আজকে ৩৪.

২১ কিলোমিটার পথ হাঁটা হলো। টনি আর শাকিলের হলো আরো ৮ কিলোমিটার বেশি।

সি টু সামিট- এই লম্বা পথের পদযাত্রায় শাকিলের বাড়িতে এক রাত থাকাটা বেশ আবেগঘন ছিল ৷ মায়ের আশীর্বাদ এবং পরম যত্নে রান্না করা খাবার শাকিলের কঠিন পথের প্রেরণা জোগাবে, সঙ্গে আমাদেরও। সকালবেলা বিদায় বেলায় অশ্রুজলে মা ছেলেকে দোয়া করে দিলো। সাংবাদিক ভাইরা আরো কিছু সময় নিলো আমাদের। এরপর বাগচালা গ্রাম থেকে আমরা গতকালের হাঁটার পয়েন্টে এসে হাঁটা শুরু করলাম। আজকে শুরু করতে একটু দেরিই হয়ে গেলো বলা যায়। ফলশ্রুতিতে তপ্ত রোদে আমাদের দগ্ধ হতে হয়েছে।

কালিয়াকৈর উপজেলার সীমানা ছাড়িয়ে টাঙ্গাইল মহাসড়কে ওঠার পর সোজা পথ। গাছপালার নাম নিশানাও নাই। হাইওয়ে দিয়ে হাঁটা বিরক্তিকর কাজ। তারপরও আমাদের হাঁটতে হলো। মির্জাপুর থেকে বিকল্প পথে সেবার আমি হেঁটেছিলাম। তবে তাতে করে কয়েক কিলোমিটার পথ বেশি হাঁটা হবে। শাকিলের হাতে সময় কম, তাই বাংলাদেশের অংশটুকু দ্রুত পার করতে পারলে তার এভারেস্টের পথে কিছু সময় বাঁচবে। পথের মাঝখানে যুক্ত হলো সিজান। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলো, বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী। আজকে সারাদিনের পথ সে পায়ে হেঁটে আমাদের সঙ্গে এলো।

টাঙ্গাইল শহরের কাছাকাছি এলে আরো যুক্ত হলো হেলাল ভাই এবং শাকিল হোসেন। সেবার হাঁটার সময় পথে দেখা হয়েছিল। এবার আবারও সেই হাঁটা পথেই দেখা হলো। রাতে হেলাল ভাইয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ। বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময়টা বেশ চ্যলেঞ্জিং। শাকিলের পায়ে ফোস্কা পড়েছিল। সেই ব্যথাটা ভোগাচ্ছে। গরমে আমাদের গতি কমে আসলো। এদিকে টনি ভালো হাঁটে, সে আমাদের তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে,  ভালোভাবে না হাঁটলে সন্ধ্যার পর বেশি হাঁটতে হবে। শহরে ঢোকার ৫ কিলোমিটার আগে সোনিয়া আপা যুক্ত হলো ইফতার নিয়ে। সবাই একত্রে ইফতার করে আবার হাঁটা শুরু। রাত আটটা বেজে গেলো নগর জালফৈ বাইপাস আসতে। আজকের দিনের জন্য এখানেই ইতি। 

শহরে আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল বদরউদ্দিন ভাই, আমার আয়রনম্যানের সঙ্গী। তিনি টাঙ্গাইলের একটি ব্যাংকের ম্যনেজার, আন্তরিক মানুষ। অনেকদিন পর বদর ভাইয়ের সাথে দখা হয়ে খুব ভালো লাগলো ৷ আগামীকাল আমরা যমুনা নদী সাঁতরে অন্য প্রান্তে যাবো। আমি শাকিল দুজনই খুব এক্সাইটেড। হেলাল ভাইরাও যুক্ত হবে। রাতে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে থাকার বন্দোবস্ত হলো। আমার খবর পেয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা বন্ধু বাবু দেখা করতে চলে এলো কলিগকে নিয়ে। বেশ ক্লান্ত ছিলাম তাই বেশি সময় দিতে পারিনি, ফ্রেশ হয়ে হেলাল ভাইয়ের বাড়ির দিকে চললাম নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। 

হেলাল ভাই ডাকঘরে কাজ করেন। স্পোর্টস এক্টিভিটি এবং স্বাস্থ্য-সচেতনতা নিয়ে তার ব্যাপক আগ্রহ। গিয়ে দেখলাম আমাদের জন্য নানা পদের খাবারে তার টেবিল সাজানো। মন আর পেট তৃপ্তিতে ভরে গেলো। 

লেখক: ভ্রমণ লেখক, আয়রনম্যান ৭০.৩ এবং বাংলা চ্যানেল ফিনিশার


 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ল ম ট র পথ য ক ত হল আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফাহামিদুলের বাদ পড়া এবং কিছু প্রশ্ন

জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার ইচ্ছাতেই সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ক্যাম্পে ডাকা হয়েছিল ইতালি প্রবাসী ফুটবলার ফাহামিদুল ইসলামকে। তবে দল যখন ক্যাম্প শেষ করে বাংলাদেশে ফিরল (১৮ মার্চ, ২০২৫) তখন দলের সঙ্গে দেখা গেল না ফাহামিদুলকে! সৌদি থেকে ইতালিতে ফেরত পাঠানো হয় এই ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডারকে।

গোটা দেশ যখন হামজার হোমকামিংয়ে মজে ছিল, তখন জন্ম নেয় বিশাল এই বিতর্কের। হ্যাঁ, বিতর্কই বটে। কারণ, ফাহামিদুলকে স্কোয়াডে না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠলেও কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি ফুটবল দল সংক্রান্ত কেউই।

আরো পড়ুন:

‘মেসির সঙ্গে’ পরিচয় করিয়ে দিলেন জামাল, ছেত্রীর সঙ্গে তুলনায় দিলেন অন্যরকম উত্তর

আসিফের হুঁশিয়ারি
বাফুফেতে সিন্ডিকেটের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে সরকার

দলের ম্যানেজার আর কোচের কথার সুর প্রায় একই, ফাহামিদুল দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি, তবে তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনায় আছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, তারা যখন এই উত্তরগুলো দিচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিল না তারা নিজেরাই বিশ্বাস করছেন! তাছাড়া অতীতে নর্দার্ন আইরিশ টপ ডিভিশনে খেলা রিয়াসাত ইসলামের সাথেও এক দশক আগে ফাহামিদুলের মতো একই কাজ করা হয়েছিল।

আজ বুধবার (১৯ মার্চ, ২০২৫) দুপুর ১টা নাগাদ যখন ভারত ম্যাচের পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন চলছিল ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে, তখন বাইরে চৈত্রের তাপ উপেক্ষা করে সারাদেশ থেকে আসা ফুটবল সমর্থকরা করছিল প্রতিবাদ। তাদের মতে, ফাহামিদুলের সাথে যা ঘটেছে তা এক কথায় অন্যায়। এই সমর্থকরা দাবি করছে বহুদিন ধরেই একটা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ফুটবল।

প্রতিবাদীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য একটা অংশ হচ্ছে ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠী ‘বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাসের।’ গতকাল বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর রাজপথে এই প্রতিবাদী সমর্থকগোষ্ঠীর স্লোগান ছিল, ‘জনে জনে খবর দে, সিন্ডিকেটরে কবর দে।’ আন্দোলনের স্ফূলিঙ্গের মাঝেই দুই একজন জানালেন, সিন্ডিকেটের মানুষদের জন্যই যোগ্য ফুটবলাররা খেলতে পারেন না একাদশে। অনেক সময় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দারুণ খেলা ফুটবলারদের রাখা হয় না স্কোয়াডেও।

এই আন্দোলনরত ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠীর দাবি, রিয়াসাত এবং ফাহামিদুলের বাদ পড়ার পেছনে সেই সিন্ডিকেটেরই প্রভাব আছে। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, প্রস্ততি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার পড়ও কিভাবে বাদ পড়ে? এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বয়ং বাফুফের পোস্ট করা একটা ভিডিওর প্রসঙ্গ টেনে আনলেন তারা। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিরি’ডিতে খেলা ফাহামিদুলের ড্রিবলিংয়ের সামনে রীতিমত খাবি খাচ্ছিলেন দেশের স্বনামধন্য ডিফেন্ডাররা।

যদিও বাংলাদেশ দলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাহামিদুলের বাদ পড়ার পেছনে কোচের কৌশলগত কারণই বারবার সামনে আসছে। বাদ দেওয়ার কারণ নিয়ে কোচ কাবরেরা বলেন, “তার বয়স ১৮ বছর। সে আমাদের বিবেচেনায় আছে। কিন্তু এই মুহুর্তে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত না। সে আমাদের সঙ্গে থাকবে ভবিষ্যতে।”

এই বয়সের যুক্তি কতখানি ধোপে টিকে? এই কাবরেরার স্বদেশী লামিনে ইয়ামাল যখন জার্মানিতে ২০২৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে স্পেনকে শিরোপা জেতান, তখন তার বয়স মাত্র ১৬! জার্মানির আইন অনুযায়ী শিশু হওয়াতে, স্পেন দলকে গুনতে হয়েছিল মোটা অঙ্কের জরিমানাও।

অন্যদিকে কাবরেরা যখন জামাল ভূঁইয়া ও হামজা চৌধুরীকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তখন প্রেস কনফারেন্স রুমের শেষদিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার স্বদেশী ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী কোচ ডেভিড গোমেজ। তাকে সামনে পেয়ে প্রশ্ন করার লোভ সামলাতে পারলাম না। প্রস্ততি ম্যাচে ফাহামিদুল হ্যাটট্রিক করেছিল কিনা জানতে চাইলে ব্যাচারা একদম হতবম্ভ হয়ে পড়ে। একদমই আশা করেনি এমন প্রশ্ন। অপ্রস্তুতভাবেই একগাল হেসে জবাব দিলেন, ‘‘আমি না ঠিক মনে করতে পারছিনা। নিশ্চিত না এই ব্যাপারে।’’

ডেভিডের উত্তরটা খুবই অনুমেয় ছিল। এরপর কিছুটা নিপাট ভদ্রলোকের মতোই যোগ করলেন, ‘‘আমি আসলে উত্তর দিতে পারব না। কোড অব কন্ডাক্টের বাইরে যেতে পারব না।’’

জাতীয় দলের ম্যানেজার, কোচ এবং সহকারী কোচ, সবার কথা একই সুতোয় গাঁথা, সব জায়গাতেই আছে সমন্বয়। তবে একটু জিজ্ঞাসু কিংবা অনুসন্ধানী চোখে তাকালেই লক্ষ্য করা যায় অদ্ভুত এক রহস্য, কি জানি এক লুকোচুরি, কোথায় জানি বড্ড বেখাপ্পা। ফাহামিদুলের বাদ পড়াটা কেন জানি বারবার জন্ম দিচ্ছে কিছু অস্বস্থিকর প্রশ্নের।

শেষ করা যাক বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পের শুরুর দিকের এক ঘটনা দিয়ে। এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার বাবা ক্যামেরনের এবং মা আলজেরিয়ার। তবে এমবাপ্পে বিশ্বজয় করেছেন ফ্রান্সের জার্সিতে। এই উইঙ্গার যখন মোনাকোর সিনিয়র দলে সুযোগ পেলেন, তখন তার বাবা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্যামেরুন জাতীয় দলের ট্রায়ালে। ছোট্ট এমবাপ্পে সহজেই জয় করলেন সবার হৃদয়। তবে ক্যামেরুন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই একজন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বসলেন উঠতি তারকার বাবার কাছ থেকে।

তাতেই বেঁকে বসল এমবাপ্পে ও তার পরিবার। তারা ফ্রান্সে ফিরে যায়। এই ব্যাপারটা পরে জানাজানি হলে ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশন ফেরাতে চান এমবাপ্পেকে। তবে তিনি আর ফিরেননি। গোটা ক্যামেরুনের সৌভাগ্য হলো না, এমন একজন বিস্বয়কর ফুটবলারকে তাদের জার্সিতে দেখার। এরপর ফ্রান্সের নীল জার্সিতে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জয় করে আগমনী বার্তা জানান দেন এমবাপে। পরের বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে লিওনেল মেসির হাত থেকে প্রায় একাই বিশ্বকাপটা ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন, একটুর জন্য হয়নি সেবার।

তবে ক্যামেরুনের ফুটবলে আজীবনের আফসোস থাকবে এমবাপ্পেকে পেয়েও না পাওয়ার গল্প, কিছু হটকারী কর্মকর্তার জন্য। বাংলাদেশের ফাহামিদুলের গল্পটাও কি সেদিকেই যাচ্ছে? এই প্রশ্ন তোলা থাক।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কষ্টের জয়ে শীর্ষেই রইল আবাহনী
  • হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট যে ৪ কৌশলে বেশি হ্যাক করা হয়
  • শেষ মুহূর্তে ভিনিসিয়ুস জাদুতে ব্রাজিলের দারুণ জয়
  • সার্বিয়া যেতে না পেরে ১১ দিন ধরে বিমানবন্দরে
  • মহানবীর (সা.) ইতিকাফ
  • আমি আর সিনেমা করতে চাই না: বর্ষা
  • আসামির বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই, রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত 
  • রাজশাহীতে শাশুড়িকে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার
  • ফাহামিদুলের বাদ পড়া এবং কিছু প্রশ্ন