যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন শহরে আকাশ ও স্থলপথে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল।  হামলায় ইতোমধ্যে ৬০০ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। এর মধ্যে অন্তত ২০০ জন শিশু রয়েছে। গাজায় ইউনিসেফের মুখপাত্র রোসালিয়া পোওলিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইসরায়েলের এ নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

রংপুর:
শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুরে রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাংলার চোখ’ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়ো, ফিলিস্তিনকে রক্ষা করো’, ‘ফিলিস্তিনের কান্না আর না, আর না’ স্লোগান সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

গাজীপুরে দুই কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাংলার চোখ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন আশরাফী।

পঞ্চগড়:
আজ জুমার নামাজের পর পঞ্চগড়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও ঈমান আক্বীদা রক্ষা কমিটিসহ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলগুলো শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলকারীরা এসময় ‌‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন জাতিসংঘ জবাব চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

ঈমান আক্বিদা রক্ষা কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান, সাধারণ সম্পাদক ক্বারী মো.

আব্দুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হাই, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সভাপতি হাফেজ মীর মোর্শেদ তুহিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পঞ্চগড় শহর শাখার সভাপতি জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি জুলফিকার রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।  

বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করছে। গত কয়েকদিনে সহস্রাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনি গণহত্যার শিকার হয়েছেন। বিশ্ব মুসলিমকে জেগে উঠতে হবে। চুপ থাকার সময় শেষ।

সুনামগঞ্জ:
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও ভারতে মুসলমানদের ওপর আগ্রাসের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ জুমার নামাজ শেষে পৌর শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে সচেতন তাওহীদী জনতার ব্যানারে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাদের পাশাপাশি  নানা শ্রেণি পেসার মানুষ অংশ নেন।

জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর গণহত্যা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমেরিকা ইসরায়েলকে সবপ্রকার সহযোগিতা করে। তাদের এ দ্বিচারিতা বন্ধ করতে হবে। বক্তারা বিশ্বের সব দেশকে আহ্বান জানান, তারা যেন তারা নীরবতা ভেঙে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ান।

গোপালগঞ্জ:
ইসরায়েলের গাজা দখলের চক্রান্ত ও ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গোপালগঞ্জ ওলামা পরিষদ এ বিক্ষোভের আয়োজন করে। 

জুমার নামাজের পর গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদ এলাকা থেকে  বিক্ষোভ মিছিল বের করে মুসল্লিরা। মিছিলটি জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

গোপালগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রেজাউল করিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা তসলিম হোসাইন শিকদার, অ্যাডভোকেট গোলাম মেহেদী খান, এস.এম বাবুল কায়ুম সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এ বিক্ষোভ কর্মসূচীতে বিভিন্ন ইসলামীক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।

অপরদিকে, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

বক্তারা বলেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও রজমান মাসে নির্বিচারে ফিলিস্তিনি নারী শিশুদের হত্যা করছে ইসরায়েল। মুসলিম বিশ্ব এখনো চুপ করে বসে আছে। ইসরাইলি আগ্রাসন দমাতে হবে। পাশাপাশি তাদের পণ্য বর্জন করতে হবে।

রাঙামাটি:
রাঙামাটি শহরের বনরুপা জামে মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও স্টুডেন্টস এন্ড সিটিজেন অব রাঙামাটি। মিছিলটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘুরে বনরুপা পেট্রোল পাম্পে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির রাঙামাটি জেলার সদস্য মো. জালাল উদ্দীনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ইসলামী ছাত্র আন্দোলন রাঙামাটি জেলার সভাপতি মো. হোসাইন মল্লিক, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মিনহাজ মুরশীদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলার সভাপতি মো. আবদুস সালাম, ইসলামী ছাত্রশিবির রাঙামাটি জেলার সভাপতি শহিদুল ইসলাম সাফি।

বক্তারা বলেন, রমজান মাসে ইসরায়েল নিরীহ ফিলিস্তিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করছে। ফিলিস্তিদের জীবন আজ বিপন্ন। মানবতার দূত হিসেবে খ্যাত জাতিসংঘ ইসরায়েলের বিপক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সারা বিশ্বের মুসলিম জনতা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে ইসরায়েল পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এসময় ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণারও দাবি জানান তারা।

অপরদিকে বনরুপা জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদের ব্যানারেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে বনরুপা মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বনরুপা জামে মসজিদের খতিব আলহাজ ইকবাল হোসেন আল ক্বাদেরী, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ুব চৌধুরীসহ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ফিলিস্তিনের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার জন্য ইসরায়েলকে একদিন জবাবদিহি করতে হবে। সেহরি ও ইফতারের সময় বোমা নিক্ষেপ করে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে, অনেককে আহত করা হচ্ছে। আমরা মুসলিম বিশ্বের কাছে দাবি জানাই, অবিলম্বে ইসরাইলকে নিষিদ্ধ রাষ্ট্র ঘোষণা করার।

টাঙ্গাইল:
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। শুক্রবার  জুমার নামাজ শেষে মিছিল বের করে তারা। সেটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় তাদের বিভিন্ন ধরনের ইসরায়েল বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ইসলামী ছাত্রশিবিরের টাঙ্গাইল জেলা সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, অর্থ সম্পাদক আব্দুল আলিম। 

বক্তারা বলেন, ইসরায়েল ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষকে হত্যা করছে। তাদের হামলায় যারা মারা যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই শিশু এবং নারী।  ইসরায়েলের চালানো হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দ্রুত গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এসময় ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা। শহরের শান্তিমোড়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে একটি মিছিল বের হয়ে বিশ্বরোডে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে গাজাবাসীর শান্তি ও ইসরায়েলের ধ্বংস কামনা করে মোনাজাত হয়।

সামাবেশে বক্তারা বলেন, ইসরায়েলের ইহুদিরা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজার মুসলিমদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এর ফলে সেখানকার নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছেন। আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অনাহারে দিন কাটছে তাদের। সেখানকার মানুষরা মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত। এখন পৃথিবীর মানবাধিকার সংগঠনগুলো কোথায়? বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ গঠন করা হয়েছে। এই বর্বর হামলার বিরুদ্ধে তারা কোনো কথা বলেনি। আমরা এসবের জবাব চাই।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহিন খান, মুত্তাসিন বিশ্বাস, শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ ও মাহফুজ, রামকৃষ্টপুর মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, কোর্ট মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. সুলতান আলী, আরামবাগ মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. জাহিদ। 

পাবনা:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাবনার উদ্যোগে শুক্রবার (২১ মার্চ) বাদ জুমা পাবনার চাপা বিবি ওয়াকফ মসজিদের সামনে থেকে  বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পাবনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ইন্দারা মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। 

সেখানে বক্তব্য রাখেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাবনার আহ্বায়ক বরকতউল্লাহ ফাহাদ, মুখ্য সংগঠক ইউসুফ আরফান বিপ্লব, যুগ্ম আহ্বায়ক মিনহাজুর হোসেন রাতুল, শফিকুল ইসলাম শাকিল, রাসেল আহমেদ।

বক্তরা বলেন, ‍“সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের দোসররা বলে, তারা নাকি শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী। অথচ তারাই বিশ্বে অশান্তি প্রতিষ্ঠাকারী। যদি বর্বর ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো গণহত্যা বন্ধ না হয় এবং মুসলিম উম্মাহ যদি জিহাদের ডাক দেয় আমরা সেই জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত আছি।

সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরা জেলা শহরের খুলনা রোডস্থ মোড় শহীদ আসিফ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সাতক্ষীরা শহর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মো. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির শহর শাখার সভাপতি আল মামুন।

আল মামুন বলেন, ‍“চার শতাধিক ঘুমন্ত ও সেহেরিরত ফিলিস্তিনি ভাই-বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। বিশ্ব মানবতার এই দুর্দিনে আমাদের সবাইকে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের দায়ে নেতানিয়াহু সরকার ও ইসরায়েলকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”

বিক্ষোভ মিছিল আরো উপস্থিত ছিলেন  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা শহর সেক্রেটারি খোরশেদ আলম, সাতক্ষীরা শহর শিবিরের সাবেক সভাপতি আবু তালেব ও আনিছুর রহমান,সাতক্ষীরা শহর শাখার অফিস সম্পাদক নূরুন্নবী, অর্থ সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ, সাহিত্য সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

নেত্রকোণা:
নেত্রকোনা বড়বাজার শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জেলা খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বক্তরা বলেন, গাজায় নিরীহ মুসলমানদের হত্যা ও ভারতে মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমরা এই নৃশংসতা বন্ধে জাতিসংঘ, ওআইসি, আরবলীগসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কার্যকর হস্তক্ষেপ দাবি করছি।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মোতালিব খান ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বীন ইয়ামিন। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব গাজী মুহাম্মাদ আবদুর রহীম রুহী।

এদিকে, বাদ জুমা মোক্তারপাড়া বড় মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নেত্রকোণা জেলা শাখার উদ্যোগে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে করে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৪৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি থাকলেও গত মঙ্গলবার থেকে নির্বিচারে গাজায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। 

ঢাকা/আমিরুল, নাঈম, মনোয়ার, বাদল, শংকর, কাওছার, মেহেদী, শাহীন, শাহীন, সোহেল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ম ছ ল ব র কর ম ছ ল ব র হয় ল দ শ ইসল ম গ প লগঞ জ ইসর য় ল র গণহত য র দ র স মন দ র ওপর শহর র ব শ ষ হয় ত হয় ছ বক ত র ন সড়ক বর বর স গঠন শহর শ

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা গাজাবাসী নিজেদের আর কত মিথ্যা বলব

আমরা গাজার মানুষ বারবার হুমকির মুখে পড়েছি। আমরা আমাদের ‘সাফ’ করে দেওয়ার হুমকি শুনেছি; গণহত্যার হুমকি শুনেছি। আমাদের ওপর ‘জাহান্নাম’ নামিয়ে আনার হুমকি শুনেছি। আসলে আমরা তো ইতিমধ্যেই জাহান্নাম পার করেছি। ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ১৯ মার্চ ২০২৫—গণহত্যার এই দহনকালে গাজার ২০ লাখ ফিলিস্তিনির মতো আমিও বেঁচে আছি।

সত্যি বলতে, আমি বেঁচে আছি জীবনকে আঁকড়ে ধরে নয়, বরং ‘লাইফ’ (জীবন) শব্দ থেকে ‘এফ’ ফেলে দিয়ে ‘লাই’ (মিথ্যা) ধরে রেখে বেঁচে আছি। যত বেশি নিজেকে মিথ্যা বলেছি, ততই আমার নাজুক অস্তিত্ব টিকেছে। প্রথম মিথ্যাটার কথা এখনো মনে পড়ে। সেটা গণহত্যারও অনেক আগের কথা।

২০০৮-০৯ সালে ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের পর নিজেকে বলেছিলাম, ‘আর কখনো এমন যুদ্ধ দেখব না।’ সেটি একেবারেই শিশুসুলভ মিথ্যা ছিল। এরপর ২০১২ সালেও যুদ্ধ দেখলাম। ২০১৪ সালে দেখলাম। ২০২১ সালে দেখলাম। এমনকি ২০২৩ সালের মে মাসেও।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় যখন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজার ওপর নির্বিচার বোমাবর্ষণ শুরু করল; তখন আমার মা ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। আমি মাকে জড়িয়ে ধরলাম। সেই মুহূর্তে সত্য বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেদিন মাকে আর নিজেকে বললাম, ‘এটাই আমাদের করুণ জীবনের শেষ অধ্যায়।’ মনে হচ্ছিল, সামনে যা আসছে, তাতে কোনো না কোনোভাবে মরবই। বাঁচার কোনো পথ নেই। মা-ও তা–ই ভেবেছিলেন; তাই কাঁদছিলেন।

কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যুকে পুরোপুরি মেনে নিয়ে কীভাবে বাঁচা সম্ভব? মানুষ স্বভাবতই বাঁচতে চায়। তাই আবার নিজেকে মিথ্যা বলা শুরু করলাম...

আমি যুদ্ধের মধ্যে বড় হয়েছি এবং ১৫ মাসের গণহত্যার মধ্যেও বেঁচে থেকেছি। তবু আমি আশ্চর্য হচ্ছি, এত বড় যন্ত্রণার পরও আমি ভয় থেকে বাঁচার কোনো প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। আমি এখনো সামনের দিন নিয়ে ভয় পাচ্ছি।

শিগগিরই যখন ১৭ অক্টোবর ইসরায়েল ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে হামলা করে শত শত মানুষকে হত্যা করে, তখন আমি নিজেকে মিথ্যা বলেছিলাম। আমি
নিজেকে বলেছিলাম, গাজার জন্য পৃথিবী উঠে দাঁড়াবে এবং আর কখনো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজাকে বোমা মারবে না। এটা ছিল একটি স্বল্পস্থায়ী মিথ্যা। এরপর ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ তীব্রতর হয়ে উঠেছিল এবং গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিল।

যখন ইসরায়েল আমাকে ওই বছর ডিসেম্বর মাসে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছিল, আমি নিজেকে বলেছিলাম, কয়েক দিনের মধ্যে আমি ফিরে আসব। ২০২৪ সালের মে মাসে ফিরে আসার পর, আমি নিজেকে বলেছিলাম, এবার আর আমাকে বাস্তুচ্যুত করা হবে না।

যখন ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার সপ্তম বাস্তুচ্যুতি থেকে ফিরে এলাম, তখন ইসরায়েল গাজায় ত্রাণপ্রবাহ কঠোরভাবে সীমিত করে দিয়েছিল। তখন আমি নিজেকে বলেছিলাম, পৃথিবী আমাদের ক্ষুধার্ত হতে দেবে না। কিন্তু তা-ই হলো। কয়েক সপ্তাহ, আমি এবং আমার পরিবার প্রায় না খেয়ে বেঁচে ছিলাম। আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় কিছু রুটি, জাআতার এবং টুনা মাছের কিছু ক্যান সঞ্চয় করেছিলাম, তা একটু একটু করে খেয়ে কোনোমতে বেঁচে ছিলাম।

আরও পড়ুনইসরায়েলের নৃশংসতা নিয়ে যদি সবাই মুখ খুলত১৮ ঘণ্টা আগে

কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্রবিরতির প্রথম পর্ব কার্যকর হওয়ার পর আমি নিজেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা বলেছিলাম। বলেছিলাম, ‘এটাই শেষ, যুদ্ধের গণহত্যার অংশ শেষ হয়েছে। কারণ, ইসরায়েল আর কী করতে পারে, যা তারা আগে করেনি? আমরা তো সব ধরনের যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছি!’ কিন্তু ভেতরে-ভেতরে জানতাম, আমি নিজের কাছে মিথ্যা বলছিলাম।

আমি জানতাম, গাজার অনেক মানুষের মতো, এটা শুধু সময় এবং উপায়ের ব্যাপার ছিল যে ইসরায়েল আবার কখন ও কীভাবে গণহত্যা শুরু করবে।

এতটুকু সময়ের মধ্যে একটি সংকেত মিলেছিল যে আবার হামলা আসছে। পবিত্র রমজানের শুরু হওয়ার পরপরই ইসরায়েল সব সাহায্যপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এটি আরেকটি খাদ্যসংকট সৃষ্টি করে। দুই সপ্তাহ পর, সাহ্‌রির ডাকের বদলে আমরা প্রচণ্ড বোমাবর্ষণের শব্দে জেগে উঠলাম। ওই বোমায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ মরেছে। এর মধ্যে অন্তত ১০০টি শিশু ছিল।

ইসরায়েল তাদের ‘সম্পূর্ণ’ বিজয় অর্জন করতে আর কত শিশুকে হত্যা করবে? এ দফায় তাদের ‘কাজ শেষ করতে’ কত সময় লাগবে? আমাদের আর কতটা ভীতি ও দুর্দশা সহ্য করতে হবে? আর এবার এই হামলা কীভাবে শেষ হবে?

ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের ১৫ মাস পার হওয়ার পরও আমি এ প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর জানি না। কারণ, একের পর এক তাদের পাশবিকতা দিয়ে ইসরায়েল আমাকে চমকে দিতে থাকে।

এখনো আমি বলে যাচ্ছি, এগুলো কী? এটি কি গণহত্যার চূড়ান্ত পর্যায়? আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া, সব সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া এবং পানি ও বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া কি চলতেই থাকবে? আমার ভয়, ইসরায়েল নৃশংসতার পথে আরও বহুদূর যাবে।

ইসরায়েলি সরকার বলছে, যতক্ষণ না তারা তাদের বন্দীদের ফিরে পায়, ততক্ষণ এই আক্রমণগুলো চলবে। যদি এটা সত্যি হয়, তবে যুদ্ধবিরতির কী দরকার ছিল? এটা কি হত্যাকারীদের কিছু সময়ের ‘বিশ্রাম’ ছিল?

এদিকে পৃথিবী আবারও শুধু নিন্দা জানাচ্ছে, কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এটি আমাদের বহুবার ব্যর্থ করেছে। আমরা এতবার ব্যর্থ হয়েছি যে আমি গণনা করা ছেড়ে দিয়েছি।

আমি যুদ্ধের মধ্যে বড় হয়েছি এবং ১৫ মাসের গণহত্যার মধ্যেও বেঁচে থেকেছি। তবু আমি আশ্চর্য হচ্ছি, এত বড় যন্ত্রণার পরও আমি ভয় থেকে বাঁচার কোনো প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। আমি এখনো সামনের দিন নিয়ে ভয় পাচ্ছি।

আমি আবার মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছি। কিন্তু এবার আমি নিজেকে সত্য বলতে চাই। আমি বলতে চাই, ইসরায়েল আমার ওপর যে জীবন চাপিয়ে দিয়েছে, আমি তার চেয়ে ভালো জীবন পাওয়ার যোগ্য। আমি আর নিজেকে মিথ্যা বলতে চাই না, আমি বাঁচতে চাই।

কাসেম ওয়ালিদ গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি পদার্থবিদ ও লেখক

 আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজার পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সোচ্চার হতে সরকারের প্রতি বাসদের আহ্বান
  • আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হবে: নাহিদ ইসলাম
  • আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের নিন্দা জানাল জাতীয় নাগরিক পার্টি
  • আ.লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: নাহিদ
  • আ.লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
  • ঢাবিতে একাধিক মিছিলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি
  • ইসরায়েলি ‘জায়নবাদী বর্বরতার’ বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার
  • গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় সিপিবির ক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ
  • আমরা গাজাবাসী নিজেদের আর কত মিথ্যা বলব