জামালপুরে ‘পাওনা টাকা চাইতে গেলে’ চোর অপবাদ দিয়ে রাজমিস্ত্রিকে নির্যাতন
Published: 21st, March 2025 GMT
জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে চুরির অপবাদ দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে এক রাজমিস্ত্রিকে ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে।
নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম মো. মামুন (৩০)। তিনি শাহবাজপুর ইউনিয়নের গণেশপুর এলাকার আবদুল হাকিমের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গত বুধবার রাতে শাহবাজপুর পূর্ব পাড়া এলাকার হাসমত তালুকদারের বাড়িতে তাঁকে বেদম পেটানো হয়। গুরুতর আহত মামুনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন মো.
নির্যাতনের ২ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। এতে দেখা গেছে, পাকা ঘরের মধ্যে একটি বিছানার ওপর খালি গায়ের এক যুবক। প্রথমে তিন ব্যক্তি তাঁকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন। এ সময় যুবকটি হাত দিয়ে লাঠির আঘাত ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। তখন হাতেই লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছিল। তাঁর পায়ের তলায় পেটানো হচ্ছিল। তারপর যুবকটিকে বিছানায় শুইয়ে পেটানো হয়। এরপর আরও দুজন পেটানোতে অংশ নেন। একপর্যায়ে যুবকটি বিছানা থেকে নিচে পড়ে যান। এরপর পাঁচজন এক সঙ্গে মেঝেতে ফেলে তাঁকে পেটাচ্ছিলেন। আশপাশে আরও কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে কেউ একজন এটি মুঠোফোনে ধারণ করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজমিস্ত্রি মো. মামুন ওই এলাকার হাসমত তালুকদারের বাড়িতে নির্মাণকাজ করেন। হাসমতের কাছে কাজের টাকা পেতেন মামুন। বুধবার সন্ধ্যার দিকে তাঁকে টাকা দেওয়ার কথা বলে ওই বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয়। টাকা নিয়ে প্রথমে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হাসমত, তাঁর স্বজন এবং প্রতিবেশীরা রাজমিস্ত্রি মামুনকে চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করতে থাকেন। পরে তাঁকে একটি ঘরের ভেতরে নিয়ে ব্যাপক পেটানো হয়।
নির্যাতনের শিকার মামুনের প্রতিবেশী তাহের আলী বলেন, ‘নাতিকে চোর অপবাদ দিয়ে বাড়িতে আটকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু পেটানো হয়নি। দুই ঠ্যাংয়ের মধ্যে রড ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। দুটি ঠ্যাংয়ে শুধু রড ও লাঠির আঘাত। অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে তাকে পিটিয়েছে। পিটানোর সময় নাতিটা বারবার বলছিল, সে চুরি করেনি, কাজের পাওনা টাকা চাইতে আসছে, কিন্তু কেউ শোনেনি। আসলে হাসমত তালুকদারের কাছে টাকা চাওয়ার অপরাধে ইচ্ছা করেই তাকে চোরের অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। পিটানোর ভিডিওটি দেখলেই যে কারও চোখের পানি চলে আসবে। এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যেক ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’
রাজমিস্ত্রি মো. মামুন পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে চোর অপবাদ দিয়ে তাঁকে কয়েকজন পেটান। জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর পূর্ব পাড়া এলাকার হাসমত তালুকদারের বাড়িতেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র অপব দ দ য় এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
নোবিপ্রবি ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শাখা ছাত্রদল নেতা বিরুদ্ধে ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী শিশির পন্ডিত হরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। অপরদিকে, অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতার নাম জাহিদ হাসান।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর দেওয়া ভুক্তভোগীর অভিযোগপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
নোবিপ্রবিতে ২০ মার্চ থেকে ছুটি শুরু, বন্ধ থাকবে হল
নোবিপ্রবিতে ২ ছাত্রদল নেতার জন্য মাস্টার্স চালু
অভিযোগে জানা যায়, ভুক্তভোগীর হলে থাকার বৈধ সিট থাকলেও জাহিদ হাসান নামে ওই ছাত্রদল নেতা নিজেকে ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে নিজের পছন্দের লোক উঠানোর চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে অন্য ছাত্রদল নেতাকর্মীদের দিয়ে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে জেরা করেন তিনি।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, “আমি ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে ৪২৪ নাম্বার রুমের বৈধ শিক্ষার্থী। হলের অ্যালটমেন্ট ফি সময় মতো দেওয়াসহ সবকিছু সময়মত করেছি। আমার উঠতে কিছুদিন দেরি হলে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী আমাকে জানায়, আমার সিট নাকি বাতিল হয়ে গেছে। তাই তারা ওই রুমে নিজেদের জুনিয়রকে তুলবে। পরবর্তীতে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি হল প্রশাসন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওই রুমে হল প্রশাসন পাঁচজন শিক্ষার্থীকে অ্যালটমেন্ট দিলেও সেখানে ছয়টা সিট প্রবেশ করিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি এবং আমার বন্ধু একাডেমিক কাজে কিছুদিন ঢাকা থাকায় আমাদের সিট নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমার অনুপস্থিতিতে এক জুনিয়র রুমে থাকতে গেলে তাকেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যদিও রুমে অ্যালটমেন্ট না হওয়া অন্য দুজন শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের বিষয়ে চেপে গিয়ে আমাদের রুমে থাকতে না দেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়া হয়।”
তিনি আরো বলেন, “গত ৯ মার্চ দুপুর ১২.৩৭ মিনিটে আমার মোবাইলে একটি কল আসে এবং জাহিদ হাসান নামের একজন নিজেকে ছাত্রদল সভাপতি পরিচয় দিয়ে আমাদের রুমের বিষয়ে আমাকে জেরা করে। যেখানে তিনি হল প্রশাসনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও আমার এবং আমার বন্ধুর সিট নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে থাকে। পরে ৩০৫ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে একই বিষয় নিয়ে আমাকে ৬-৭ জন ছাত্রদল পরিচয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জেরা করে। বর্তমানে আমি এবং আমার বন্ধু এ বিষয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন।”
নিরাপত্তাহীনতায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অভিযোগপত্রে হল প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা জাহিদ হাসান বলেন, “অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমার কাছে তথ্য এসেছে যে, শিশির পন্ডিত এবং তার বন্ধু চাকরিজীবী হয়েও তারা হলে সিট নিয়েছে এবং সিটে উঠেনি। হল প্রশাসন একটা নোটিশ দিয়েছে, যারা নির্দিষ্ট সময়ে হলে উঠবে না, তাদের সীট বাতিল বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে প্রভোস্ট মহোদয়ের মৌখিক অনুমতি নিয়ে দুইটা ছেলে ওই রুমে থাকে।”
তিনি বলেন, “শিশির পন্ডিতের পরিচয় দিয়ে তার জুনিয়র সেখানে থাকতে আসে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমি শিশির পন্ডিতকে কল দিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।”
ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয়ের বিষয়ে জাহিদ হাসান বলেন, “আমি এমন কোনো পরিচয় দেইনি। আমি শুধু বলেছি আমি নোবিপ্রবি ছাত্রদল নেতা জাহিদ হাসান।”
নোবিপ্রবি ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক নূর হোসেন বাবু বলেন, “জাহিদ হাসান নামে আমাদের কমিটিতে কোনো নেতা নেই। কেউ যদি ছাত্রদল সভাপতি পরিচয় দিয়ে কোনো অন্যায় কাজ করে, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি হল প্রশাসনকে এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
নোবিপ্রবি ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রাধ্যক্ষ বডি অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী প্রাধ্যক্ষ বলেন, “ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয়ে শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা হল প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী