রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার বাউসা ইউনিয়নে শাখা জামায়াতের ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। ওই কর্মসূচির প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মীরা এবং শেষে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন।

হামলায় জামায়াতের চারজন নেতা-কর্মী আহত হন। তাঁরা হলেন আবদুর রহমান (২২), সৌরভ আলী (২০), আবু তাহের (৩৩) ও হোসেন (৩৪)। তাঁরা বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা মজিবর রহমান বাদী হয়ে গতকাল রাতে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা ১১টায় বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে টিসিবি, ভিজিডি কার্ড–বাণিজ্য, তথ্যসেবাকেন্দ্রের চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইউনিয়ন জামায়াতের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মজিবর রহমান, সেক্রেটারি সামশুল ইসলামের নেতৃত্বে মানববন্ধনে উপজেলার সেক্রেটারি ইউনুস আলী, ইউনিয়নের যুব সভাপতি মহিদুল ইসলাম, ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান, ছাত্রশিবিরের উত্তর শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলামসহ জামায়াতের সমর্থকেরা ফেস্টুন-ব্যানার নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন।

মানববন্ধনের শুরুতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম তাঁদের মানববন্ধন না করার অনুরোধ করেন। কোনো সমস্যা থাকলে বসে সমঝোতা করার কথা বলেন। কিন্তু জামায়াতের নেতারা তাঁর আহ্বান উপেক্ষা করে কর্মসূচি শুরু করেন। মানববন্ধনে জামায়াতের নেতারা বলেন, ‘এ দেশে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না, দুর্নীতি চলবে না। চাঁদাবাজমুক্ত দেশ চাই, দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই। এ দেশের মানুষ ন্যায্য অধিকার ফিরে পাক।’

এদিকে মানববন্ধন চলাকালে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন দলীয় সমর্থকদের নিয়ে পরিষদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে জামায়াতের মানববন্ধনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে মানববন্ধনকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করা হয়। তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর্মসূচি মানি না, মানব না’, ‘জামায়াতের ষড়যন্ত্র মানি না, মানব না’, ‘নির্বাচনের ষড়যন্ত্র মানি না, মানব না।’ একপর্যায়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে চলে যেতে থাকেন। স্লোগান দিতে দিতে তাঁদের পেছনে পেছনে যান বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বাউসা বাজারের পূর্ব প্রান্তে পৌঁছালে বিএনপির নেতারা জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হাতে থাকা ফেস্টুনের বাঁশের বাতা কেড়ে নেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।

ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা মজিবর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর ইউনিয়নে টিসিবি, ভিজিডি কার্ডসহ সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে তথ্যসেবাকেন্দ্রে সুবিধার নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। তখন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন দলীয় লোকজন নিয়ে উসকানিমূলক স্লোগান দেন। গোলোযোগ এড়াতে মানববন্ধন সংক্ষেপ করে তিনি নেতা-কর্মীদের চলে যেতে বলেন। তাঁরা বাউসা বাজার পার হয়ে পূর্ব দিকে চলে যাওয়ার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা পেছন থেকে স্লোগান দিতে দিতে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হাতে থাকা ফেস্টুন-ব্যানার কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় রাতেই তাঁরা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, সরকারি সুবিধা নিয়ে জামায়াতের লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কাজ করা হচ্ছে। এরপরেও তাঁরা মানববন্ধনের আয়োজন করেন। তাঁদের মানববন্ধন করতে নিষেধ করলেও শোনেননি। এ নিয়ে জনগণ মানববন্ধনের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিবাদ করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁরাও আজ শুক্রবার থানায় একটা অভিযোগ করবেন।

বাউসা ইউপির চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রহমান বলেন, ‘সবেমাত্র দায়িত্ব পেয়েছি। এর মধ্যে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য নয়। সবাইকে মাথায় রাখতে হবে, আমি চাইলেই একা সবকিছু বণ্টন করতে পারব না। সবাইকে নিয়েই বণ্টন করতে হয়।’

জানতে চাইলে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, জামায়াতের নেতারা একটি পরামর্শ করতে এসেছিলেন, তবে কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত কর ম দ র র রহম ন কর ম র ইসল ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েটের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ অন্যান্য ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় তাঁরা প্রতিবাদী মানববন্ধন করেছেন। লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন। কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আল ফারাবি ও আরমান হাসান লিখিত বিবৃতি পড়েন।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বিএনপিপন্থী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবির বিপরীতে শিক্ষাঙ্গনের অভ্যন্তরে এমন বর্বরোচিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে না জানাতেই তাঁরা দেখতে পান, ঘটনার প্রায় দুই মাস পর কুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতায় ২২ জন নিরপরাধ, আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত ও মিথ্যা।

কুয়েট প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, এই হামলার প্রকৃত তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া, অপরাধীদের যথাযথভাবে চিহ্নিত না করে কীভাবে আন্দোলনরত নিরীহ শিক্ষার্থীদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো, তা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কুয়েট প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁরা স্পষ্ট করে বলতে চান, এই প্রক্রিয়া কুয়েট প্রশাসন ও তদন্ত কমিটির নিষ্ক্রিয়তা, ব্যর্থতা ও পক্ষপাতিত্বের প্রতিফলন।

আরও পড়ুনকুয়েটের ভিসির পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা, হলগুলোর তালা ভাঙছেন আন্দোলনকারীরা১ ঘণ্টা আগে

বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁরা (বুয়েট শিক্ষার্থীরা) জানতে পেরেছেন, আন্দোলন দমন করার লক্ষ্যে কুয়েট প্রশাসন একের পর এক দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যেমন হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগে অসম্মতি জানালে পানি, বিদ্যুৎ, ওয়াইফাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় হল ত্যাগে বাধ্য করা হয়। ঈদের সময় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অথচ বহিরাগতদের অনায়াসে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ন্যায়সংগত দাবি নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করে অপপ্রচার চালানো হয়। হলে প্রবেশ করতে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের রাতে খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় থাকতে বাধ্য করে নিকৃষ্টতম নজির স্থাপন করেছে কুয়েট প্রশাসন। এটি নিঃসন্দেহে একটি নিন্দনীয় আচরণ।

বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁরা (বুয়েট শিক্ষার্থীরা) মনে করেন, এই মামলা শুধু কুয়েটের ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক অধিকার হরণের প্রচেষ্টা। আজ যদি তাঁরা চুপ থাকেন, কাল হয়তো এই ধরনের প্রহসনের শিকার হতে হবে আরও অনেক শিক্ষার্থীকে। রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দমন করার মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনের ‘স্পিরিট’ নষ্ট করা সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য কল্যাণকর কিছু বয়ে আনবে না।

আরও পড়ুনকুয়েটে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে চলছে সিন্ডিকেট সভা, বাইরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ–মিছিল১৮ ঘণ্টা আগে

কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পাশে থাকার কথা জানানো হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, তাঁরা (বুয়েট শিক্ষার্থীরা) জানতে পেরেছেন, গতকাল সোমবার রাতে কুয়েটের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিরাপদ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে বহিষ্কার করা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। বুয়েট শিক্ষার্থীরা কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পাশে আছেন। এই মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার, প্রকৃত দোষীদের বিচার, কুয়েট ভিসি ও কুয়েট প্রশাসনের বিতর্কিত-নেতিবাচক ভূমিকার জবাবদিহি নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। বুয়েট শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করে জানাতে চান, তাঁরা এই প্রহসনের বিরুদ্ধে। তাঁরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাঁরা কুয়েটের শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের পাশে আছেন। অনতিবিলম্বে কুয়েট প্রশাসন যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ দেশের ছাত্রসমাজ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছেন তাঁরা।

আরও পড়ুনপয়লা বৈশাখেও হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা১৪ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাসপাতাল চালুর দাবিতে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জন
  • কুয়েট শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে বুয়েটে মানববন্ধন
  • কুয়েটের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • বিরল জাতের বিড়ালজাতীয় প্রাণী অনলাইনে বিক্রির সন্দেহে স্পেনে দম্পতি গ্রেপ্তার
  • বিগত ১৫ বছরে নববর্ষ পালন নিয়েও ষড়যন্ত্র হয়েছে: রিজভী
  • ট্রাম্পকে হত্যা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাবা–মাকে হত্যাক করেছে মার্কিন কিশোর: এফবিআই
  • পয়লা বৈশাখে তৌহিদবাদী গণসংস্কৃতির দিকে ফিরে আসার আহ্বান হেফাজতে ইসলামের
  • আবারও বানানো হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি`
  • মডেল মেঘনাকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা এমএসএফের