নাটোরের বড়াইগ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে নাজিম উদ্দিন (৫১) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), আরিফুল ইসলাম (৩৮) ও বাবু মিয়া (৪৫) নামে আরও তিনজন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলার আহমেদপুর নওপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটেছে।

নিহত নাজিম উদ্দিন নওপাড়া গ্রামের প্রয়াত আলাউদ্দিনের ছেলে। আহতদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় কবরস্থানে জমি দান করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি নেতা গনি মিয়া ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের দ্বন্দ্ব চলছিল। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। আজ গনি মিয়ার ছেলে ফারুখ হোসেন ও জামাতা গুরুদাসপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারুখ হোসেনের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের কথাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে গনি মিয়ার ছেলে ফারুখ হোসেন নজিম উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে। তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে জাহাঙ্গীর আলম, আরিফুল ইসলাম ও বাবু মিয়াকে আঘাত করলে তারাও আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নজীম উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নজিম উদ্দিনের ভাই দুলাল উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে গনি মিয়ার বাবা গোরস্থানে জমি দান করেন। গনি মিয়া সেই জমি অন্য লোকের কাছে বিক্রি করেন। একটি ধর্মীও প্রতিষ্ঠানে জমি দানের কারনে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

এ ব্যাপারে গনী মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার তারা আমার ছেলের ওমর ফারুখকে মারপিট করে। নিজেরা মারামারি করে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নাজিমুদ্দিন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টিতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা- তা খতিয়ে দেখাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম স ঘর ষ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ঘর বেচে কেনা হয়েছিল কম্পিউটার, এখন কোটি টাকার মালিক ফ্রিল্যান্সার রায়হান

অভাব এতই প্রকট ছিল যে রাবার দিয়ে মুছে খাতার একটি পৃষ্ঠায় তিনবার লিখতে হয়েছে। অনেক বেলায় পেটে ভাত জোটেনি। পড়াশোনা চালিয়েছেন টিউশনি করে। তবু দারিদ্র্যের কাছে হার মানেননি। একটি কম্পিউটার কিনতে চাওয়ায় বাবাকে বেচতে হয়েছে তিন বসতঘরের একটি। মা বিক্রি করেছেন ছাগল। সেই কম্পিউটারের বদৌলতে এখন বহুতল বাড়ি, চার চাকার গাড়ি, গরুর খামার আর কোটি টাকার মালিক হয়েছেন রায়হান মিয়া।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পারেরহাট গ্রামে নিভৃত পল্লিতে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের (তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মুক্ত পেশাজীবী) কাজ করেন রায়হান মিয়া (৩২)। পাশাপাশি নিজের আইটি প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখিয়ে পথ দেখাচ্ছেন এলাকার বেকার তরুণদের। যাঁদের কাছে তিনি এখন অনুপ্রেরণা। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা স্বীকৃতিও পেয়েছেন।

রায়হানের কর্মকাণ্ড একজন ‘জনসেবকের’ মতো বলে মনে করেন পারেরহাট গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, বেকার শিক্ষিত যুবকদের স্বাবলম্বী করতে রায়হান গ্রামে গড়ে তুলেছেন সাদিয়া আইটি ফার্ম। সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ শিখিয়ে যুবকদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন। তিনি এখন শত যুবকের স্বপ্ন দেখার চোখ।

২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একজন তাঁকে প্রথম ৪৮০ ডলারের একটি কাজ দেন। সময়মতো কাজটি শেষ করায় ১০০ ডলার বকশিশও পান। এরপর শুধুই সফলতার গল্প।

দারিদ্র্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠা

রংপুর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে বিনোদনকেন্দ্র ‘ভিন্নজগৎ’ পার হতেই পারেরহাট গ্রাম। পাকা সড়ক ধরে গ্রামে প্রবেশের মুখেই রায়হান মিয়ার বাড়ি। তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকেন রায়হান। নিচতলায় করেছেন মাদ্রাসা। তৃতীয় তলায় সাজানো-গোছানো আইটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে কাজ করেন রায়হানের বেতনভুক কর্মীরা। কেউ কেউ সেখানে আসেন শেখার জন্য। বাড়ির ১০০ গজ দক্ষিণে গড়ে তুলেছেন গাভির খামার।

নিজের প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখানোর ফাঁকে ফাঁকে সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন রায়হান। ১৯৯২ সালে অভাবী পরিবারে জন্ম রায়হানের। ছয় ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ভালো পোশাক তো দূরের কথা, সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে হিমশিম খেতেন বাবা অলিয়ার রহমান। প্রায়ই তাঁকে না খেয়ে স্কুলে যেতে হতো। এভাবে কিশোরগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের কারিগরি শাখা থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করেন। ওই বছর ভর্তি হন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগে। থাকতেন একটি ছাত্রাবাসে।

রায়হান জানান, ঢাকায় গিয়ে টিউশনি শুরু করেন। তা দিয়ে অতি কষ্টে লেখাপড়া চলত। বাড়ি থেকে টাকা দিতে না পারায় কোনো কোনো দিন দুপুরের খাবার খাওয়া হতো না। হেঁটেই যাতায়াত করতেন।

ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে এখন আয় তাঁর পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া ফাইবারে লেভেল ওয়ান সেলার হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি ইউটিউব ও ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ছাড়াও সরাসরি বেশ কিছু আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানে তাঁর অধীনে কাজ করেন ১৫ জন বেতনভুক্ত কর্মী।

মা বেচেন ছাগল, বাবা ঘর

অভাবের মধ্যে বেড়ে উঠতে উঠতে রায়হান কিছু একটা করার চেষ্টা করতে থাকেন। তখন সাতক্ষীরার এক বন্ধু তাঁকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা বলেন। একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের গল্প রায়হানের ভাবনার জগতে নাড়া দেয়। রাজধানীর ভাষানটেকের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে তাঁর ফ্রিল্যান্সিংয়ের হাতেখড়ি। ২০১০ সালে তিনি গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর ছয় মাসের কোর্স করেন।

রায়হান মিয়া বলেন, কাজ শেখার পরও কম্পিউটারের অভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। ২০১১ সালে ডিপ্লোমা শেষ করে গ্রামে চলে আসেন। কম্পিউটার কেনার কথা জানানোর পর মা ময়না বেগম নিজের দুটি ছাগল বেচে ছেলেকে ছয় হাজার টাকা দেন। বাবা বাড়ির তিনটি টিনের ঘরের মধ্যে একটি বসতঘর বিক্রি করে দেন আরও ২০ হাজার টাকা। সেই টাকায় একটি পুরোনো কম্পিউটার কেনেন। আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেওয়া-নেওয়ার কয়েকটি ওয়েবসাইটে (অনলাইন মার্কেট প্লেস) যুক্ত হন।

২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একজন তাঁকে প্রথম ৪৮০ ডলারের একটি কাজ দেন। সময়মতো কাজটি শেষ করায় ১০০ ডলার বকশিশও পান। এরপর শুধুই সফলতার গল্প। রায়হান জানান, তিনি এখন অনলাইন মার্কেট প্লেস আপওয়ার্কে টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার। শুধু আপওয়ার্ক থেকে তাঁর কয়েক কোটি পেরিয়েছে। তাঁর গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের কোম্পানি। ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে এখন আয় তাঁর পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া ফাইবারে লেভেল ওয়ান সেলার হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি ইউটিউব ও ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ছাড়াও সরাসরি বেশ কিছু আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানে তাঁর অধীনে কাজ করেন ১৫ জন বেতনভুক্ত কর্মী।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি দুটি পুকুরে ছয় বছর ধরে বিভিন্ন মাছ চাষ করছেন। খামারে বিদেশি জাতের গাভি আছে ৩৫টি। জমি কিনে তিনতলা পাকা বাড়ি করেছেন, কিনেছেন দুই একর আবাদি জমি। রংপুর শহরেও বাড়ি করেছেন, আছে প্রাইভেট কার।

রায়হানের পথ ধরে অন্যরাও সফল

রায়হান শুধু নিজেই সফল হয়ে বসে থাকেননি; ২০১৮ সালে গ্রামের তরুণ-যুবকদের ফ্রিল্যান্সিং শেখানো শুরু করেন। প্রথমে কেউ সাড়া দেননি; কিন্তু রায়হানের সাফল্য দেখে ধীরে ধীরে অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠেন। রায়হান তাঁদের বিনা পারিশ্রমিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখানো শুরু করেন।

রায়হানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পারেরহাট গ্রামের অনেক তরুণ-যুবকই সচ্ছল হয়েছেন। আহসান হাবীব, মারজান হোসেন, রাতুল ইসলাম, হাসান রাজা, সাকিব হোসেনদের মাসিক আয় এখন এক থেকে দেড় লাখ টাকা।

গ্রামের তরুণ রিপন হোসেন ২০১৭ সালে এইচএসসি পাসের পর চাকরির পেছনে ছুটে বেড়িয়েছেন চার বছর। মাঝখানে ছোটখাটো ব্যবসা করেও সুবিধা হয়নি। ২০২১ সালে রায়হানের কাছে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। এখন তাঁর মাসিক আয় দেড় লাখ টাকা। রিপন মিয়া বলেন, ‘রায়হান স্যারের প্রশিক্ষণ ও প্রেরণা আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।’

আরও বড় স্বপ্ন রায়হানের

সেরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে রায়হান ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ‘বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড’ পান। এ ছাড়া জেলাভিত্তিক সেরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ২০২৩ সালে জুলাইয়ে ‘রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। ২০১২ সালে রুমানা আক্তারকে বিয়ে করেন রায়হান। এই দম্পতির তিন সন্তান।

কিশোরগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, রায়হান ফ্রিল্যান্সিং করে সহায়সম্পত্তি, জমি, গাড়ি করেছেন; কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে সেই আগের মানুষটিই আছেন। রংপুর শহরে বাসা থাকার পরও তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন গ্রামে। শিক্ষিত যুবকদের দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ।

 রায়হানের বাবা অলিয়ার রহমান বলেন, ‘একদিন সমাজে কোনো পরিচয় ছিল না। মাথা নিচু করে চলতে হতো। আজ সফল ছেলের বাবা হিসেবে গর্ববোধ করি।’

নিজের পরিশ্রম আর চেষ্টায় এত দূর এসেছেন উল্লেখ করে রায়হান বলেন, ‘আমি চাই আরও তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সফল হতে সাহায্য করতে। আমার স্বপ্ন, বাংলাদেশে আরও বেশি মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ে এগিয়ে আসুক এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে নিজেরা সচ্ছল হোক।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যানার টাঙানো নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, দুজন গুলিবিদ্ধ
  • সাঁতারু থেকে মন্ত্রী, এখন তিনি বৈশ্বিক ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে ক্ষমতাধর
  • জামালপুরে ‘পাওনা টাকা চাইতে গেলে’ চোর অপবাদ দিয়ে রাজমিস্ত্রিকে নির্যাতন
  • কুষ্টিয়ায় বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ আহত ১৫
  • নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ নিহত ২
  • কুষ্টিয়ায় বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ আহত ১৫ জন
  • ঘর বেচে কেনা হয়েছিল কম্পিউটার, এখন কোটি টাকার মালিক ফ্রিল্যান্সার রায়হান
  • চট্টগ্রামে এম্পাওয়ারিং আওয়ার ফাইটারস প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ইফতার
  • গোপালগঞ্জে ধানের জমিতে পানি দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষে নারী নিহত