গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের চালানো হামলায় ৪০০ জনের বেশি গাজাবাসী নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা শতাধিক। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এটা ছিল ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়ানক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সামরিক পদক্ষেপ।

হামলার পাশাপাশি গাজাবাসীর ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশও নতুন করে জারি করেছে ইসরায়েল। ফলে গাজাজুড়ে হাজার হাজার মানুষ নতুন করে জোরপূর্বক স্থানচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।

এমনকি ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ‘হারেৎজ’-এর মধ্যপন্থী সামরিক ভাষ্যকার আমোস হারেলও গত মঙ্গলবার থেকে গাজাবাসীর ওপর শুরু করা হামলাকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকারের স্বার্থে শুরু করা যুদ্ধ বলে মনে করেন।

এ হামলা ও হামলার ধরনের সঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হামলার সঙ্গে তিনটি বিষয়ের সম্পর্কে আছে বলে মনে হচ্ছে। এক.

রাজনৈতিকভাবে নেতানিয়াহুর টিকে থাকা। দুই. সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর তাঁর আধিপত্য বিস্তার। তিন. জনগণকে উত্তেজিত না করে মিত্রদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা।

সরকার টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধ

চলতি মাসের শেষের দিকে নেতানিয়াহুকে বাজেট পাস করতে হবে। এটা করতে না পারলে তাঁর সরকারের পতন হবে এবং নতুন নির্বাচন দিতে হবে।

বাজেট যদি পাস করা যায়, তাহলে ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নেতানিয়াহুর সরকার টিকে যাবে। তাই বাজেট পাস করতে পারাটা তাঁর সরকারের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

আগামী মাসে পার্লামেন্টে বাজেট পাস করতে পারবে না, এখন পর্যন্ত এমন স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে নিজের জোট সরকারের শরিক ইউনাইটেড তোরাহ জুদায়িজম পার্টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন নেতানিয়াহু। আশকেনাজি ইহুদিদের নিয়ে গঠিত এ দলের অতিগোঁড়া সদস্যরা বাজেট পাসে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।

নেতানিয়াহুর জোট সরকার টিকে থাকার জন্য ইউনাইটেড তোরাহ জুদায়িজম পার্টির আটটি আসন বেশ দরকারি। দলটি এরই মধ্যে একটি বিল উত্থাপন করেছে, যেখানে অতিগোঁড়া তরুণদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে চাকরি করা থেকে অব্যাহতি দিতে বলা হয়েছে। নেতানিয়াহু সরকার বিলটি সমর্থন না করলে দলটি বাজেট পাসে বাগড়া দিতে পারে।

এ কারণে নেতানিয়াহুর সরকারকে শক্তিশালী করার দরকার পড়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে শোনা যাচ্ছে, ইসরায়েলের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির আবার নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় ফিরছেন। রাজনৈতিক দল জ্যুইশ পাওয়ারের এই নেতা গত জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি অনুমোদনের পর পদত্যাগ করেছিলেন।

গত মঙ্গলবার গাজায় হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর বেন-গভির ঘোষণা দেন, তাঁর দল আসলেই সরকারে ফিরতে যাচ্ছে। কারণ, যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার তাঁদের যে দাবি ছিল, তা পূর্ণ হয়েছে।

এর অর্থ হলো এখন জুদায়িজম পার্টি বিপক্ষে ভোট দিলেও বাজেট পাস হবে। এটা নেতানিয়াহুর জন্য নগদ লাভ।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তেল আবিব, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র জন ত ক র সরক র সরক র র মন ত র প স কর

এছাড়াও পড়ুন:

'দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গ্যালো। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ