যশোরের অভয়নগরে ট্রাকে করে ফরিদপুরে যাওয়ার পথে লোপাট হওয়া প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ৭ হাজারের বেশি বস্তা সারের মধ্যে কোটি টাকা মূল্যের তিন হাজার বস্তা সার উদ্ধার হয়েছে।

এই ঘটনায় আটক হয়েছেন তিন ‘সার চোর’, যাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে সার চুরির বিশাল সিন্ডিকেটের তথ্য।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) যশোর ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, লোপাটের বাকি চার হাজারের বেশি বস্তা সার উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে।

আরো পড়ুন:

যশোরে ৩ হাজার বস্তা সার উদ্ধার, জড়িত সন্দেহে আটক তিন

‘ডাকাতি’ করতে এসে আটক ২

যশোর ডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আটক করা ব্যক্তিরা হলেন: যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চাউলিয়া গ্রামের নুর ইসলাম মোল্লার ছেলে মিলন হোসেন, অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া দক্ষিণপাড়ার কেরামত আলীর ছেলে আবু বক্কর ও বাঘারপাড়া উপজেলার নারকেলবাড়িয়া গ্রামের অনাত সাহার ছেলে উজ্জ্বল কুমার সাহা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বলেছেন, ফরিদপুরে ৩১ হাজার ৩৬০ বস্তা সরকারি সার পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি ছিল। অভয়নগর থেকে ট্রাকে করে তা নিয়ে গেলেও ৭ হাজার ১৪০ বস্তা আর গন্তব্যে পৌঁছায়নি। পথিপথে পরস্পর যোগসাজশে কয়েকজন তা লোপট করে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে ফেলে। তার মধ্যে কয়েকটি জায়গায় লুকিয়ে রাখা ৩ হাজার ১৫ বস্তা সার উদ্ধার করেছে যশোর ডিবি পুলিশ।

ডিবির ওসি মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, অভয়নগরের নভো ট্রেড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট থেকে সরকারি (বিসিআইসি) ইউরিয়া সার ফরিদপুরের টেপাখোলা বাফার গোডাউনে পাঠানোর জন্য কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করেন ওই ট্রান্সপোর্টের প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান মিল্টন। 

গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৮টি ট্রাকের মাধ্যমে মোট ৩১ হাজার ৩৬০ বস্তা সার পাঠানো হয়, যার বাজার মূল্য ৪ কোটি ৩৯ লাখ চার হাজার টাকা। কিন্তু ৩৩টি ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছালেও ১৫টি ট্রাকের সাত হাজার ১৪০ বস্তা সার গৌন্তব্যে না পৌছে আত্মসাৎ করেন তারা। এই পরিমাণ সারের বাজার মূল্য ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

নভো ট্রেড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট জানিয়েছে, ফরিদপুরের টেপাখোলায় সার না পৌঁছানোয় মাথায় হাত পড়ে তাদের। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার বর্ণনা জানিয়ে যশোর ডিবির কাছে অভিযোগ দেন। পরে যশোর জেলার পুলিশ সুপার রওনক জাহানের নির্দেশে তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ।

যশোর ডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের এসআই আবু হাসানের সমন্বয়ে একটি টিম গত ১৩ মার্চ রাতে অভয়নগরের ভাঙ্গাগেট এলাকা থেকে মো.

মিলন হোসেন ও আবু বক্কারকে আটক করেন। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৪ মার্চ বাঘারপাড়ার চতুরবাড়িয়া বাজার থেকে ৪৩৫ বস্তা ইউরিয়া সার উদ্ধার করা হয়।

আটক করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো তথ্য বেরিয়ে আসে। ১৬ মার্চ যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া বাজার থেকে আরো ৮০০ বস্তা, ১৭ মার্চ উপজেলার পুলেরহাট বাজার থেকে ৪৬০ বস্তা এবং ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার থেকে ৯২০ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়। 

সর্বশেষ বুধবার (১৯ মার্চ) যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জয়পুর গোপের বাজার থেকে ৪০০ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় আরো একজনকে। 

মনজুরুল হক ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১৫ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়েছে, যার দাম ৪২ লাখ ২১ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

অভয়নগর থানার কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, “আমি বিষয়টি শুনেছি কিন্তু এই চক্র এত বড় যে, তাদের কথা কোথা থেকে শুরু করব, বুঝতে পারছি না। সার চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। সার নিয়ে কোনো কেলেংকারী সরকার সহ্য করব না।

অভয়নগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, সার কেলেংকারির মাধ্যমে এই মোকাম (নওয়াপাড়া মোকাম) এবং সরকারের ক্ষতি করছে একটি চক্র। তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে, দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

অভয়নগর উপজেলার কেন্দ্র নওয়াপাড়া পৌরসভা এলাকাই মূলত দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সারের মোকাম। সরকারের আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের সারের একটি বড় অংশ নওয়াপাড়া বন্দর শহরে আনার পর সেখান থেকে সারা দেশে পৌঁছানো হয়।

নওয়াপাড়ায় সারের ব্যবসার প্রসার হয় নব্বই দশকের শেষ দিকে। সার চুরির খবর এখানে নতুন নয়। ২০০৪ থেকে শুরু এই পর্যন্ত নওয়াপাড়ায় সার চুরি বা সরকারি সার লোপাট করার খবর রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে সার চুরির কয়েকটি বড় ঘটনা রয়েছে। সরকারি সার গুদাম থেকে লোপাটের সঙ্গে সাবেক জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার চাঞ্চল্যকর তথ্যও রয়েছে।

ঢাকা/প্রিয়ব্রত/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ন র উপজ ল র জ র ল হক নওয় প ড় বল ছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যশোররে ৩ হাজার বস্তা সার উদ্ধার, জড়িত সন্দেহে আটক তিন

যশোরের অভয়নগরে ট্রাকে করে ফরিদপুরে যাওয়ার পথে লোপাট হওয়া প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ৭ হাজারের বেশি বস্তা সারের মধ্যে কোটি টাকা মূল্যের তিন হাজার বস্তা সার উদ্ধার হয়েছে।

এই ঘটনায় আটক হয়েছেন তিন ‘সার চোর’, যাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে সার চুরির বিশাল সিন্ডিকেটের তথ্য।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) যশোর ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, লোপাটের বাকি চার হাজারের বেশি বস্তা সার উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে।

আরো পড়ুন:

যশোরে ৩ হাজার বস্তা সার উদ্ধার, জড়িত সন্দেহে আটক তিন

‘ডাকাতি’ করতে এসে আটক ২

যশোর ডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আটক করা ব্যক্তিরা হলেন: যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চাউলিয়া গ্রামের নুর ইসলাম মোল্লার ছেলে মিলন হোসেন, অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া দক্ষিণপাড়ার কেরামত আলীর ছেলে আবু বক্কর ও বাঘারপাড়া উপজেলার নারকেলবাড়িয়া গ্রামের অনাত সাহার ছেলে উজ্জ্বল কুমার সাহা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বলেছেন, ফরিদপুরে ৩১ হাজার ৩৬০ বস্তা সরকারি সার পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি ছিল। অভয়নগর থেকে ট্রাকে করে তা নিয়ে গেলেও ৭ হাজার ১৪০ বস্তা আর গন্তব্যে পৌঁছায়নি। পথিপথে পরস্পর যোগসাজশে কয়েকজন তা লোপট করে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে ফেলে। তার মধ্যে কয়েকটি জায়গায় লুকিয়ে রাখা ৩ হাজার ১৫ বস্তা সার উদ্ধার করেছে যশোর ডিবি পুলিশ।

ডিবির ওসি মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, অভয়নগরের নভো ট্রেড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট থেকে সরকারি (বিসিআইসি) ইউরিয়া সার ফরিদপুরের টেপাখোলা বাফার গোডাউনে পাঠানোর জন্য কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করেন ওই ট্রান্সপোর্টের প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান মিল্টন। 

গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৮টি ট্রাকের মাধ্যমে মোট ৩১ হাজার ৩৬০ বস্তা সার পাঠানো হয়, যার বাজার মূল্য ৪ কোটি ৩৯ লাখ চার হাজার টাকা। কিন্তু ৩৩টি ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছালেও ১৫টি ট্রাকের সাত হাজার ১৪০ বস্তা সার গৌন্তব্যে না পৌছে আত্মসাৎ করেন তারা। এই পরিমাণ সারের বাজার মূল্য ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

নভো ট্রেড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট জানিয়েছে, ফরিদপুরের টেপাখোলায় সার না পৌঁছানোয় মাথায় হাত পড়ে তাদের। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার বর্ণনা জানিয়ে যশোর ডিবির কাছে অভিযোগ দেন। পরে যশোর জেলার পুলিশ সুপার রওনক জাহানের নির্দেশে তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ।

যশোর ডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের এসআই আবু হাসানের সমন্বয়ে একটি টিম গত ১৩ মার্চ রাতে অভয়নগরের ভাঙ্গাগেট এলাকা থেকে মো. মিলন হোসেন ও আবু বক্কারকে আটক করেন। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৪ মার্চ বাঘারপাড়ার চতুরবাড়িয়া বাজার থেকে ৪৩৫ বস্তা ইউরিয়া সার উদ্ধার করা হয়।

আটক করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো তথ্য বেরিয়ে আসে। ১৬ মার্চ যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া বাজার থেকে আরো ৮০০ বস্তা, ১৭ মার্চ উপজেলার পুলেরহাট বাজার থেকে ৪৬০ বস্তা এবং ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার থেকে ৯২০ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়। 

সর্বশেষ বুধবার (১৯ মার্চ) যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জয়পুর গোপের বাজার থেকে ৪০০ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় আরো একজনকে। 

মনজুরুল হক ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১৫ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়েছে, যার দাম ৪২ লাখ ২১ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

অভয়নগর থানার কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, “আমি বিষয়টি শুনেছি কিন্তু এই চক্র এত বড় যে, তাদের কথা কোথা থেকে শুরু করব, বুঝতে পারছি না। সার চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। সার নিয়ে কোনো কেলেংকারী সরকার সহ্য করব না।

অভয়নগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, সার কেলেংকারির মাধ্যমে এই মোকাম (নওয়াপাড়া মোকাম) এবং সরকারের ক্ষতি করছে একটি চক্র। তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে, দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

অভয়নগর উপজেলার কেন্দ্র নওয়াপাড়া পৌরসভা এলাকাই মূলত দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সারের মোকাম। সরকারের আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের সারের একটি বড় অংশ নওয়াপাড়া বন্দর শহরে আনার পর সেখান থেকে সারা দেশে পৌঁছানো হয়।

নওয়াপাড়ায় সারের ব্যবসার প্রসার হয় নব্বই দশকের শেষ দিকে। সার চুরির খবর এখানে নতুন নয়। ২০০৪ থেকে শুরু এই পর্যন্ত নওয়াপাড়ায় সার চুরি বা সরকারি সার লোপাট করার খবর রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে সার চুরির কয়েকটি বড় ঘটনা রয়েছে। সরকারি সার গুদাম থেকে লোপাটের সঙ্গে সাবেক জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার চাঞ্চল্যকর তথ্যও রয়েছে।

ঢাকা/প্রিয়ব্রত/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে ৩ হাজার বস্তা সার উদ্ধার, জড়িত সন্দেহে আটক তিন