পবিত্র রমজানে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তি লাভ করেন। আল্লাহর একত্ববাদের পরই মাতা–পিতার খেদমত অন্যতম ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন, ‘তোমার রব এই ফয়সালা দিয়েছেন যে আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না এবং মাতা–পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তাঁদের কোনো একজন বা উভয়জন যদি বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে (বিরক্তিতে) তাঁদের “উফ” শব্দটিও বলবে না এবং তাঁদের ধমক দেবে না; বরং তাঁদের সঙ্গে স্নেহসিক্ত কথা বলো। তাঁদের জন্য দয়ার্দ্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে হাত সম্প্রসারিত করো, আর বলো—“হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাঁদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।”’ (সুরা ইসরা, আয়াত ২৩-২৪)

মাতা–পিতার খেদমতের মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করেন। যাঁরা মাতা–পিতার খেদমত থেকে বঞ্চিত হলেন, তাঁরা আল্লাহ তাআলার রহমত থেকেও বঞ্চিত হলেন। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘একদা জুমার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.

) মিম্বরের প্রথম ধাপে পা রেখে বললেন, আমিন! অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রেখে বললেন, আমিন! তারপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! এরপর খুতবা দিলেন ও নামাজ আদায় করলেন।

মাতা–পিতার অধিকারের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং মাতা–পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’

নামাজ শেষে সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আজ যা দেখলাম, তা আগে কখনো দেখিনি; এটি কি কোনো নতুন নিয়ম? রাসুল (সা.) বললেন, না, এটি নতুন কোনো নিয়ম নয়; বরং আমি যখন মিম্বরের প্রথম ধাপে পা রাখলাম, তখন জিবরাইল (আ.) এলেন এবং বললেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা মাতা–পিতা উভয়কে বা একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েও তাঁদের খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম, আমিন! যখন দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, যারা রমজান মাস পেল, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তাদের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম, আমিন! আমি যখন তৃতীয় ধাপে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, যারা আপনার (রাসুলের) নাম মোবারক শুনল, কিন্তু দরুদ শরিফ পাঠ করল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম, আমিন!’ (মুসলিম শরিফ)

সারা দুনিয়ায় তিনটি বস্তু রয়েছে, যেগুলো দেখলেই সওয়াব হয়—কাবা শরিফ, কোরআন শরিফ এবং মাতা–পিতার চেহারা মোবারক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো সন্তান স্বীয় মাতা–পিতার প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায়, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, যদি দৈনিক ১০০ বার তাকায়? নবীজি (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহ মহান ও পবিত্র।’ (বায়হাকি শরিফ)

মাতা–পিতার অধিকারের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং মাতা–পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত ৩৬) ‘আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে, তার মাতা–পিতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত ১৫) ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যে তুমি আমার এবং তোমার মাতা–পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা লোকমান, আয়াত ১৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (তিরমিজি ও মুসতাদরাকে হাকিম, সহিহ আলবানি)। ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।’ (সুনানে নাসায়ি ও ইবনে মাজাহ)

এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আমার মাতা–পিতা ইন্তেকালের পরও কি তাঁদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের কোনো দায়িত্ব অবশিষ্ট থাকে?’ তখন নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ, থাকে। তা হলো তাঁদের জন্য দোয়া করা, তাঁদের গুনাহের জন্য তওবা ও ইস্তিগফার করা, তাঁদের শরিয়তসম্মত অসিয়তগুলো পূর্ণ করা, তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাঁদের বন্ধুবান্ধবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এগুলো মাতা–পিতার মৃত্যুর পরও তাঁদের সঙ্গে উত্তম আচরণের শামিল।’ (আবু দাউদ)

 মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ত র খ দমত আল ল হ ত আল ব যবহ র কর করল ন বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঈশ্বরদীতে অটোরিকশাকে ধাক্কা দেওয়া বাসটির নিবন্ধন স্থগিত

পাবনার ঈশ্বরদীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে দুর্ঘটনায় যুক্ত ভলকা পরিবহনের সংশ্লিষ্ট বাসের নিবন্ধন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বৃহস্পতিবার রাতে বিআরটিএর পাবনা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) আলতাব হোসেনের সই করা চিঠিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

পাবনা-ব-১১-০১৫৯ নম্বর বাসটি নিবন্ধিত হয়েছে নিটল মোটরসের নামে। বিআরটিএ বলেছে, বাসটির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর। ওই বাসের মালিককে রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ আগামী তিন দিনের মধ্যে বিআরটিএ পাবনা কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে নিবন্ধন বাতিলসহ মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।

বিআরটিএর চিঠিতে বলা হয়েছে, ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের বহরপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে দুর্ঘটনায় পড়ে বাসটি। এতে ওই অটোরিকশার পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনার পর সন্ধ্যা সাতটায় পাবনা সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক এস এম ফরিদুল রহিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ অবস্থায় ২০২২ সালের সড়ক পরিবহন বিধিমালা অনুযায়ী পাবনা-ব-১১-০১৫৯ নম্বর বাসের নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।

আরও পড়ুনঈশ্বরদীতে অটোরিকশাকে বাসের ধাক্কা, একই পরিবারের তিনজনসহ নিহত ৪২০ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ