বারবার শ্রমিক অসন্তোষ: পক্ষ-বিপক্ষ ও পুলিশের ভাষ্য
Published: 21st, March 2025 GMT
দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। নানা দাবি ও উস্কানিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ যেন থামছেই না। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি, জনভোগান্তির পাশাপাশি সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এই শিল্পের।
শিল্প অধ্যুষিত জেলা গাজীপুরে নিবন্ধিত কারখানা রয়েছে ২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে, ১১৫৪টি তৈরি পোশাক কারখানা। এর বাহিরে ছোট ও মাঝারি বহু কারখানা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় পোশাক শিল্পে যতগুলো আন্দোলন হয়েছে, তার প্রায় অধিকাংশ বকেয়া বেতন, বোনাস না পাওয়া, বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি ও চাকরীচ্যুত কেন্দ্রিক।
শিল্প পুলিশ ও কলকারখানা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত গাজীপুরে অর্ধশত শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া, চলতি বছর বন্ধ হয়েছে আরো ২০টি কারখানা।
বন্ধ হওয়া এসব কারখানার শ্রমিকদের অনেকে কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে মাঝেমধ্যে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ওই মহাসড়ক ব্যবহারকারী চালক ও যাত্রীরা।
কারখানার মালিক ও কর্মকর্তারা জানান, শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে কিছু ন্যায্য ও অন্যায্য দাবি থাকে। ন্যায্য দাবিগুলো হলো- ছুটির টাকা, হাজিরা বোনাস, বকেয়া বেতন ও পদোন্নতি। অযৌক্তিক দাবিগুলো হলো- হুট-হাট বেতন বাড়ানো, দ্রুত স্থায়ীকরণ, অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ শ্রমিকদের সম অধিকার দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি, উৎপাদন বন্ধ রাখা ইত্যাদি। এছাড়া, শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন, শ্রমিক নেতাদের সঠিক দায়িত্ব পালন না করা, গুজবে কান দেওয়া মতো ঘটনাও কাজ করে।
তারা জানান, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে যদি মাঝারি আকারের একটি কারখানা এক দিন বন্ধ থাকে, তাহলে ৭০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়। বড় কারখানা ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি। শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, এটি পণ্য অর্ডারের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। শ্রমিক অসন্তোষের নতুন একটি রূপ নিয়েছে, যেটি আগে ছিল না বলে জানান তারা।
বলেন, বর্তমানে শ্রমিক অসন্তোষ হলেই কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর, ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের জড়িয়ে পড়েন শ্রমিকরা। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপরও আক্রমণ চালান তারা।
কারখানার মালিক ও কর্মকর্তারা দাবি করেন, শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতার যে দাবি করেন, এটি অনেক সময় গ্যাসের সমস্যার কারণে ব্যাঘাত ঘটে। গাজীপুরে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় গ্যাসের সমস্যা রয়েছে। গ্যাসের সমস্যা থাকলে উৎপাদন কমে যায়। আর উৎপাদন কম হলে বেতন-ভাতা পরিশোধে মালিকদের হিমশিম খেতে হয়।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ২ হাজার ১০৭টি পোশাক শিল্প কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে, ১ হাজার ৯৪০টি কারখানা এখন পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছে। তবে, ১৬৭টি কারখানা এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে, ৪০টি কারখানা বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শিল্প পুলিশের সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ
বিজিএমইএ থেকে নির্দেশনা ছিল, ২০ মার্চের মধ্যে সকল পোশাক শিল্প কারখানায় ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন, বোনাস ও মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধের। কিন্তু, অনেক কারখানায় এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও বোনাস দেওয়া হয়নি। আর কোনা কারখানায় এখনো মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি বলে জানা গেছে।
ঈদের আগে বেতন-বোনাস না পেলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। এজন্য গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ থেকে শ্রমিকদের সচেতনতা ও সতর্কতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৫৫০ জন শিল্প পুলিশের সদস্য কাজ করছেন। তারা শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছেন।
শ্রমিক অসন্তোষ মনিটরিং হেল্পলাইন চালু
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন ও শ্রম পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে মনিটরিং করতে শ্রমিক হেল্পলাইন নম্বর ১৬৩৫৭ চালু করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এ হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে।
অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনের সংগঠক আরমান হোসাইন বলেন, ‘‘২৪ এর অভ্যুত্থানের পর শ্রমিক অঞ্চলগুলোতে শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে, গাজীপুর অন্যতম। জেলায় লাগাতার আন্দোলন চলে আসছে। পোশাক খাতে অসন্তোষের প্রধান কারণ বকেয়া বেতন ও শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি। কিন্তু, বারবার এই বিষয়গুলো এড়িয়ে শ্রমিকদের ওপরে দায় দেওয়া হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকদের কেন অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সুযোগ নেই? যার মাধ্যমে শ্রমিক কারখানার অভ্যন্তরেই সমাধানের সিদ্ধান্ত নিতে পারত। অনেক যায়গায় মালিক পক্ষ আন্দোলনে থাকা শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমিক ছাঁটাই করে কালো তালিকাভুক্ত রাখায় শ্রমিকদের ভেতর অসন্তোষ চলমান রয়েছে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও জীবন-জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করলেই শ্রমিক অঞ্চলগুলোতে অসন্তোষ থামা সম্ভব।’’
মাহমুদ জেনিমস কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো.
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজীপুরে অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। আর ঈদ এলে বোনাস, ছুটিসহ অন্যান্য কারণে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। আশা করছি, মালিক পক্ষ আগামী সপ্তাহের মধ্যে ঈদ বোনাস দিয়ে দিবেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতামূলক লিফটের বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শিল্প পুলিশের সাড়ে ৫ শতাধিক সদস্য ও বিভিন্ন জোনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’’
ঢাকা/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত পর শ ধ ক জ কর ন বন ধ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
চিত্রনায়িকা বর্ষা যে কারণে অভিনয় ছাড়ার কথা বললেন
ব্যবসায়ী ও চিত্রনায়ক স্বামী অনন্ত জলিলের প্রযোজিত ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবিতে অভিনয়ে দেখা যায়নি চিত্রনায়িকা বর্ষাকে। হাতে রয়েছে তাঁর কয়েকটি ছবি। এই চিত্রনায়িকা দুই সন্তানের মা। এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বর্ষা জানিয়েছেন, তিনি নায়িকাজীবন থেকে সরে যাবেন, পরিবারকে সময় দেবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বামী অনন্ত জলিলের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে গণমাধ্যমের সামনে অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন বর্ষা। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘হাতে কয়েকটি ছবি আছে, এগুলো শেষ করতে করতেই বেশ সময় চলে যাবে। এরপর আমি আর নতুন কোনো ছবি করব না।’
অনন্ত জলিল ও বর্ষা