ট্রেনের বিভিন্ন রুটের ১৩০টি টিকিটসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন থেকে তাঁকে আটক করেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পরে সন্ধ্যায় তাঁকে দিনাজপুর জিআরপি থানায় নেওয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁর নাম সাজেদুর রহমান (২৮), বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রাধানাথপুর গ্রামে। তিনি ৯ বছর ধরে নৌবাহিনীতে কর্মরত। বর্তমানে খুলনার বিএনএস পদ্মা ইউনিটে ল্যান্স করপোরাল পদে আছেন। ট্রেনের টিকিট ছাড়াও তাঁর কাছ থেকে তিনটি মুঠোফোন সেট ও বিভিন্ন কোম্পানির ১৪টি সিম কার্ড পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পার্বতীপুর রেলওয়ে নিরাপত্তা পরিদর্শক হাসান শিহাবুল ইসলাম।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ছিলেন সাজেদুর রহমান। গতকাল সকাল ১০টায় ট্রেনটি ঠাকুরগাঁও স্টেশনে পৌঁছায়। পরে প্ল্যাটফর্মে টিকিট চেকিং করার সময় সাজেদুরের কাছে টিকিট দেখতে চান ট্রেনের টিটি। সাজেদুরের প্রদর্শন করা টিকিটে ২২ জনের আসন নম্বর এবং সরকারি বাহিনীর টিকিট, বিক্রয় নিষেধ লেখা দেখতে পেয়ে টিটি তাঁর পরিচয় জানতে চান। সাজেদুর নিজেকে নৌবাহিনীর সদস্য পরিচয় দেন। এক টিকিটে ২২ জনের আসনের বিষয়ে সন্দেহ হলে তাঁকে ঠাকুরগাঁও জিআরপি থানায় নেওয়া হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাজেদুর টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ সময় তল্লাশি করে তাঁর কাছ ২১ থেকে ২৫ মার্চের বিভিন্ন ট্রেনের ১০৫টি আসনের টিকিট জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ২১ ও ২২ মার্চের দুটি টিকিট (হার্ড কপি) এবং ২৫ মার্চের ২৫টি টিকিটের অনলাইন কপি। আর এসব টিকিটের যাত্রাস্থান ঢাকা থেকে পার্বতীপুর ও পঞ্চগড়।
জিজ্ঞাসাবাদে সাজেদুর জানান, নৌবাহিনীর সদস্যদের জন্য টিকিটগুলো কেনা হয়েছে। এগুলোকে তাঁদের ভাষায় বলা হয় ওয়ারেন্টের টিকিট। অবৈধভাবে তিনি এসব টিকিট কেটেছেন। সম্প্রতি নয়ন নামের এক টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় হয়। ঠাকুরগাঁওয়ে নেমে টিকিটগুলো মূলত নয়নের হাতে পৌঁছানোর কথা ছিল সাজেদুরের।
এ বিষয়ে পার্বতীপুর রেলওয়ে নিরাপত্তা পরিদর্শক হাসান শিহাবুল ইসলাম বলেন, ‘নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাজেদুর রহমানের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। পরে তাঁকে রেলওয়ে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখের ১০৫টি আসনের তিনটি টিকিট এবং ফোনে ২৫টি টিকিটের অনলাইন কপি উদ্ধার করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের ও ট্রেনের টিকিট বিক্রয়–সংক্রান্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের রেকর্ড পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে তিনি অপরাধ স্বীকার করেছেন। রেলওয়ে পুলিশ ও নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঠ ক রগ
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজির প্রতিবাদকারীর নামে মামলা দিলেন জবি ছাত্রদল নেতা
ফেসবুক পোস্টে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইতিহাস বিভাগের শাহিন মিয়ার নামে মানহানির অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ওমর ফারুক।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) মামলার দায়িত্বে থাকা কোতোয়ালী থানার তদন্ত অফিসার এসআই মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “কোতয়ালী থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। এখন তদন্ত করে সঠিক বিষয়টি জানা যাবে।”
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী মিলে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে ‘খাওন দাওন’ নামে একটি খাবারের দোকান চালু করেন। প্রাথমিকভাবে ব্যবসা ভালো চললেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার কারণে সাময়িকভাবে দোকান বন্ধ রাখা হয়। এ সুযোগে জবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ বিন হাসিম ও ওমর ফারুক দোকানের জায়গা দখলের চেষ্টা করেন এবং প্রতিদিন ৫০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ জানান নৃবিজ্ঞান বিভাগের দোকানী ভুক্তভোগীরা।
শাহীন মিয়া ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “প্রতিদিন নাকি খাওন-দাওন নামে দোকানের শিহাবসহ পাঁচ বন্ধুর কাছে ৫০০ টাকা করে চেয়েছেন। শিহাব নিজেও একজন ছাত্রদলের কর্মী। এই ছেলেটা জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির একজন যোদ্ধা। অথচ তার কাছেই আজ ছাত্রদলের অন্য গ্রুপের লোকেরা চাঁদা দাবি করে। কতটা ছোটলোক হলে একজন সিনিয়র তার ছোট ভাইয়ের কাছে চাঁদা দাবি করে!! একজন রানিং ব্যাচের শিক্ষার্থীর কাছে চাঁদা দাবি করে এমন একজন, যার এখন ছাত্রত্ব নেই।”
তিনি আরো লিখেছেন, “ছাত্রদল ক্ষমতায় আসার আগেই এরা নিজের দলের লোকজনের কাছেই চাঁদাবাজি শুরু করছে। তাহলে যারা সাধারণ, তারা কতটা নিরাপদ এদের কাছে!!?”
পোস্টের বিষয়ে শাহীন মিয়া বলেন, “পোস্ট করার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ওমর ফারুক ভাই (আমি তাকে চিনিও না ভালো করে) আমার নামে পুলিশে মানহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন । অথচ অভিযোগ দেওয়ার কথা ছিল শিহাবের। কারণ ওর দোকান উঠিয়ে দিয়েছিল।”
তিনি বলেন, “১০০ বার চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলবো। তাতে যদি আমার ফাঁসি হয় হবে; মাথা পেতে মেনে নেব।”
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিহাব বলেন, “জুলাইয়ে পরে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ছোটখাটো ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা নিজের জমানো প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে শুরু করি। আমরা নভেম্বর থেকে শুরু করেছি। মাঝখানে আমাদের পরীক্ষা ও ফিল্ডওয়ার্ক ছিল। এরপর আবার রোজা চলে আসে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের একজনকে কল দিয়ে প্রতিদিনের ৫০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ওমর ফারুক বলেন, “আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেন তারা। আমি এজন্যই মানহানির অভিযোগ করেছি। সুষ্ঠু তদন্ত করবে পুলিশ। আমি বিষয়টা দেখতে চাই এবং মামলার বিষয়ে তারপরে সিদ্ধান্ত নেব।”
গত ২৭ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খাবারের দোকান দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগে ওমর ফারুককে শোকজ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী