কর্মক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ‘সাময়িক অবসর’
Published: 21st, March 2025 GMT
বর্তমান প্রজন্মকে বলা হয় ‘জেন জি’। এই প্রজন্ম বিশ্বে কাজের ক্ষেত্রগুলোতে প্রচলিত সংস্কৃতি ভেঙে নতুন নিয়ম চালু করেছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি সমীক্ষা বলছে, ‘‘৬৩ শতাংশ জেন-জি কর্মী বিশ্বাস করেন, কয়েক দশক ধরে একই চাকরিতে থাকার চেয়ে কাজ থেকে বিরতি নেওয়া বেশি উপকারী।’’
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। কারণ জাতীয় পর্যায়ে দেশগুলোতে আর্থিক অস্থিরতা বিরাজ করে। সাধারণত যেসব দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল সেসব দেশে এই সংস্কৃতি দ্রুত প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। পর্তুগাল ও ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ‘ফায়ার’ নামে একটা কনসেপ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘ফিন্যান্সিয়াল ইনডিপেনডেন্স, রিটায়ার আর্লি’র সংক্ষিপ্ত রূপ। অর্থাৎ ‘আর্থিক স্বাধীনতা, আগেভাগে অবসর’।
এদিকে ইউরোপের দেশগুলোতে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি অনেক শক্তিশালী। জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো দেশে চাকরি থেকে বিরতি নিলেও বেতন ঠিকই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
মহাকাশ থেকে ফেরার পর যেসব কারণে হাঁটতে পারেননি সুনিতা ও বুচ
ঈদের আগে ত্বকের যত্নে এই তিন ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন
ইউরোস্ট্যাট অনুসারে, ‘‘৪১ শতাংশ ফরাসি কর্মী ৪০ বছর বয়স হওয়ার আগে কমপক্ষে একবারের জন্য হলেও চাকরি থেকে বিরতি নেন।’’
২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ‘‘৩৯ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান কর্মী চাকরিজীবনের মাঝামাঝিতে এসে একবার হলেও সাময়িক অবসর নিয়েছেন।’’
উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশেও এই সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করছে। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট চাকরি করেন তারা সাময়িক অবসরে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সূত্র: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, দ্য গার্ডিয়ান ও ফার্স্টআপ অবলম্বনে
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।