ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে তখন যোগ করা সময়ের ১২ মিনিটের খেলা চলছে। টাচলাইন থেকে বদলির ডাক এসেছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের। তাঁর জায়গায় নামবেন লিও ওর্তিজ। কিন্তু ভিনিসয়ুস করলেন কী, কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার জন লুকুমির বিরুদ্ধে কোনো একটি অভিযোগ নিয়ে এগিয়ে যান রেফারির প্রতি। বিপদ টের পেয়ে দৌড়ে যান রাফিনিয়া। ভিনিসিয়ুসকে প্রায় ঠেলে সরিয়ে মাঠ ছাড়ার পথটা দেখিয়ে দেন। রাফিনিয়ার মনে ছিল, রেফারির সঙ্গে মাথা গরম করে কিংবা মাঠ ছাড়তে দেরি করে ভিনি হলুদ কার্ড দেখলে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পরের ম্যাচটি খেলতে পারবেন না।

আরও পড়ুনশেষ মুহূর্তে ভিনিসিয়ুস–জাদুতে ব্রাজিলের দারুণ জয়২ ঘণ্টা আগে

কিন্তু ভিনির তা মনে ছিল না। কয়েক মুহূর্ত আগেই গোল করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে ভেসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন। আর সে গোলে ব্রাজিলও শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে হারিয়েছে কলম্বিয়াকে, যেখানে ভিনির নামই উঠে আসবে সবার আগে। কারণ খুব দরকারের মুহূর্তে ব্রাজিলের হয়ে জ্বলে উঠেছেন রিয়াল মাদ্রিদ, যেটা ভিনির জাতীয় দল ক্যারিয়ারে একদমই বিরল।

৩৭ ম্যাচে ৫ গোল—মানে গারিঞ্চায় নামার আগে ব্রাজিল দলে ভিনি এই পারফরম্যান্স দেখে অনেকেরই বিশ্বাস হবে না এই একই খেলোয়াড় রিয়ালের জার্সিতে স্রেফ আগুন! ব্রাজিলের সমর্থকেরা অবশ্য শেষ পর্যন্ত সেই আগুনের দেখা পেলেন ভিনির কাছ থেকে। অবশ্য ব্রাজিলের প্রথম গোলেও তাঁর অবদান আছে। কলম্বিয়ার বক্সে ফাউলের শিকার হয়েছিলেন বলেই তো পেনাল্টি পেয়েছে ব্রাজিল, রাফিনিয়া গোলও করেন স্পটকিক থেকে। কিন্তু ম্যাচের সেরা গোলটি নিঃসন্দেহে ভিনির।

আরও পড়ুন‘ভক্তে’র কাছে হার রোনালদোর, হার এমবাপ্পেরও, জিতল জার্মানি১ ঘণ্টা আগে

যোগ করা সময়ে তখন ৯ম মিনিটের খেলা চলছে। সতীর্থের পাস পেয়ে বাঁ প্রান্ত থেকে একটু সরে ভেতরে ঢোকেন ভিনি। বক্সের বেশ বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরাল শট নেন। বল কলম্বিয়ান সেন্টার ব্যাক কার্লোস কুয়েস্তোর পা ছুঁয়ে বাতাসে ভাসতে ভাসতে আশ্রয় নেয় জালে। যে মুহূর্তে, যেখান থেকে কেউ ভাবেননি গোল হতে পারে—ভিনি ঠিক সেটাই সম্ভব করেছেন স্নাইপারের মতো নেওয়া শটটিতে। দেখে মনে হতে পারে, আরে, ভিনির ডান পা তো রাইফেল! ব্রাজিলের হয়ে ৩৮ ম্যাচে তাঁর ষষ্ঠ গোলটি ভক্তরাও নিঃসন্দেহে মনে রাখবেন অনেক দিন। জাতীয় দলের হয়ে ভিনি সর্বশেষ গোল করেছিলেন গত বছর ২৯ জুনে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে কোপা আমেরিকায়। পাঁচ ম্যাচ পর আবারও গোলের দেখা পেলেন।

ভিনির এই গোলটি ঢুকে পড়েছে দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ইতিহাসের পাতায়ও। দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেরিতে (৯৮ মিনিট ২১ সেকেন্ড) করা জয়সূচক গোল। এই কলম্বিয়ার বিপক্ষেই ১০০ মিনিট ৪ সেকেন্ডে গোল আছে উরুগুয়ের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল উগার্তের।

ম্যাচ শেষে ভিনি বলেছেন, তাঁর গোলটি দলকে স্বস্তি এনে দিয়েছে, ‘দলের পারফরম্যান্সে খুব খুশি। জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল। গোলটাও আমার প্রাপ্য ছিল। আজকের গোলটি আসলে স্বস্তির, সুখেরও। জাতীয় দলের হয়ে খেলার অনুভূতিটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যতবারই খেলি, মনে হয় প্রথমবার।’

রাফিনিয়ার সেই সময়ের গালমন্দ হজম করা নিয়েও কথা বলেছেন ভিনি, ‘হলুদ কার্ড দেখেছি আগে। বাছাইপর্বের খেলা সব সময়ই জটিল। দুটি কার্ড দেখলেই নিষিদ্ধ। পরের ম্যাচে বসে থাকা যাবে না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কলম ব য় ল র হয়

এছাড়াও পড়ুন:

বার্সেলোনা নয়, মেসি মায়ামিতেই থাকছেন

লিওনেল মেসির এখন খেলছেন ইন্টার মায়ামিতে। মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তি চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর কোথায় যাবেন বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার? গুঞ্জন ছিল বার্সেলোনা বা নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে যোগ দিতে পারেন এই ফরোয়ার্ড। তবে সেই জল্পনা-কল্পনাতে পানি ঢেলে দিয়ে ‘দ্য অ্যাথলেটিক’-এর দাবি, মেসির সাথে মায়ামির চুক্তি নবায়ন প্রক্রিয়া মোটামুটি চূড়ান্ত।

মেসি দারুণ খেলছে মায়ামিতে। ৩৭ বছর বয়সেও এই আর্জেন্টাইন তারকার বয়স যত বাড়ছে, ততই উজ্জ্বল হচ্ছে পারফরম্যান্স। বার্সেলোনার কিংবদন্তি এই বাঁ-পায়ের জাদুকর মায়ামির হয়ে ২০২৪-২৫ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচে ৮ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এমন ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’কে ছেড়ে দিবে না ক্লাবটি।

মেসির দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং মার্কেট ভেল্যুই ইন্টার মায়ামির ক্রীড়া বিভাগকে চুক্তি নবায়নের দিকে বাধ্য করেছে। ‘দ্য অ্যাথলেটিক’-এর সাংবাদিক ডেভিড অর্নস্টাইনের মতে, মেসির চুক্তি নবায়নের দ্বারপ্রান্তে ইন্টার মায়ামি। এই চুক্তি নবায়ন মায়ামির নতুন স্টেডিয়াম ‘মায়ামি ফ্রিডম পার্ক’-এর উদ্বোধনের সঙ্গেও মিল রেখে হতে পারে। যেখানে পরবর্তী মৌসুম থেকে ক্লাবটির ঘরোয়া ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ‘লাস গারসাস’-এর প্রধান আকর্ষণ হিসেবে মেসির উপস্থিতি এই সময়ে অপরিহার্য বলে ধরা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

মেসি ম্যাজিকে সেমিফাইনালে মায়ামি

গোল করেও মায়ামিকে জেতাতে পারলেন না মেসি

এছাড়াও মায়ামিতে মেসির জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখানে তিনি তার সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ, সার্জিও বুসকেটস এবং ইয়র্দো আলবার সঙ্গে খেলছেন। আর দলের কোচ হিসেবে আছেন তারই সাবেক সতীর্থ ও স্বদেশি, হাভিয়ের মাসচেরানো। এই ক্রীড়া প্রকল্পে মেসিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা (৪২), সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট প্রদানকারী (২১)। তাছাড়া তিনি ক্লাবের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়া ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বও ৭ বারের ব্যালন ডি-ওর জয়ী।

মেসির এই ধারাবাহিকতা পেছনে কারণও আছে। মায়ামিতে খেলার সুবাদে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডায় অনিষ্ঠিতব্য ২০২৬ বিশ্বকাপ প্রস্তুতিটা দারুণভাবেই সারছেন ৩৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার। আর্জেন্টিনা ইতিমধ্যেই বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করে ফেলেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এটাই মেসির জাতীয় দলের হয়ে শেষ বড় টুর্নামেন্ট।

ইন্টার মায়ামির সভাপতি জর্জ মাসও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “তার (মেসির) ইচ্ছে হলো যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা এবং শিরোপা রক্ষা করা, যা আমাদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” ২০২৪ সালের জুনে ‘ইএসপিএন আর্জেন্টিনা’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি নিজেও বলেছিলেন, “আমার মনে হয় ইন্টার মায়ামিই হবে আমার শেষ ক্লাব।”

ঢাকা/নাভিদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রিশাদ লাহোরের ‘গেম চেঞ্জার’, প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন সতীর্থরা
  • সুপার লিগে উঠল যারা
  • ম্যানসিটির ফুটবলারদের ‘সংকল্প ও ইচ্ছাশক্তি’ অভাব
  • বার্সেলোনা নয়, মেসি মায়ামিতেই থাকছেন