ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়ার চোখে হামজা চৌধুরী হলেন বাংলাদেশের ‘মেসি’। ক্লাব কিংবা জাতীয় দলে অনেক সময় একাই খেলার মোমেন্টাম চেঞ্জ করে দিতেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনা দলে মেসি থাকা মানে প্রতিপক্ষের তিন থেকে চার ফুটবলার তাঁকে পাহারা দেওয়া। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামালের কথাতে স্পষ্ট, হামজাকে থামাতে হলে ভারতের কয়েকজন ফুটবলারকে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রতিযোগিতার সবচেয়ে জনপ্রিয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হামজা চৌধুরীর সামর্থ্য নিয়ে কারও কোনো সংশয় নেই।
তবে শেফিল্ড ইউনাইটেডের এ ফুটবলার একাই সব করে দেবেন না বলে মনে করেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ আলফাজ আহমেদ, ‘এক হামজাকে দিয়ে তো বাংলাদেশের ফুটবল হবে না। হামজা আসাতে বাংলাদেশের ফুটবলের সুনাম হয়েছে। বলতে পারেন হামজার কারণে ফুটবলের জোয়ার উঠেছে। ফুটবলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তবে আমি এটাও বলতে চাই, হামজা কিন্তু একাই ফুটবল খেলে না। দলের ১১ জনকেই খেলতে হবে।’
২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলতে গতকাল বিকেলে শিলংয়ে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। ঢাকা থেকে শিলং পর্যন্ত সবার মধ্যমণি ছিলেন হামজা। লেস্টার সিটিতে সাফল্যের গল্পগুলো ভ্রমণের সময় সতীর্থদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তিনি। আর তাঁকে পেয়ে পুরো দল উজ্জীবিত। হামজা পরিচিত মূলত ডিফেন্ডার হিসেবে। লেস্টার সিটি ও শেফিল্ডে এই পজিশনে খেলতে দেখা গেছে তাঁকে। ভারতের বিপক্ষে তাঁকে মধ্যমাঠে দেখার সম্ভাবনা বেশি। যদিও কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা হামজার পজিশন নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। তবে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয়ের পরিকল্পনায় নামবে বলে হামজার কাঁধে মাঝমাঠের দায়িত্ব পড়তে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে অবসর ভেঙে ফেরা সুনীল ছেত্রিকে আটকানোর চ্যালেঞ্জ কোচ তাঁকে দিতে পারেন।
হামজা যে পজিশনে খেলেন না কেন, তাঁর ওপর যেন দল নির্ভরশীল না হয়, সেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন আলফাজ আহমেদ। আর হামজা যে ভালো ফুটবলার, সেটা মাঠেই তাঁকে প্রমাণ করতে হবে বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক এ ফুটবলার, ‘এখনও তো সে খেলে নাই। খেলার পর পরিপূর্ণতা পাবে যে সে ভালো খেলোয়াড়। তার যে অবস্থান, তাতে প্রমাণ করার কিছু নাই। তার পরও তাকে প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশ জিততে পারে, ভালো খেলতে পারে।’
হামজার পজিশন নিয়ে কিছু না বললেও তাঁর উপস্থিতিতে দলের মধ্যে পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস বাফুফে এলিট একাডেমির কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের, ‘বিশ্বমানের প্লেয়ার যখন আসে, তখন টিমের সবকিছুতেই পরিবর্তন আসবে, এটা স্বাভাবিক। মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে। উঁচু মানের প্লেয়ারের চলাফেরা সবকিছুই এখানকার খেলোয়াড়রা অনুসরণ করবে। তাকে দেখে শিখবে। তার আসাতে প্লেয়াররা উজ্জীবিত হবে এবং দলের শক্তিও বাড়বে।’
লেস্টার সিটির জার্সিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছিলেন; ২৭ বছর বয়সী হামজার মতো এত হাইপ্রোফাইল প্রবাসী ফুটবলার অতীতে আসেনি বাংলাদেশে। শুধু প্রবাসীই নন, তাঁর মতো তারকার আবির্ভাব দেশের ফুটবলে এটাই প্রথম। তাই তো হামজাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই উচ্ছ্বাস দেখা যায়। ভারতের বিপক্ষে জিতলে সেই উচ্ছ্বাসের পরিপূর্ণতা পাবে বলে বিশ্বাস ফুটবল-সংশ্লিষ্টদের।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আজ সকাল ৯টায় শুরু ঢাবির বর্ষবরণ ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ কর্মসূচি। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হবে ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে। সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে।
এতে বলা হয়, শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪-এর চেতনাকে ধারণ করে আরও বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এ বছর থাকবে সাতটি বড় মোটিফ, সাতটি মাঝারি মোটিফ এবং সাতটি ছোট মোটিফ।
ঢাবির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনের রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট, চারুকলা অনুষদের সামনে ছবির হাটের গেট এবং বাংলা একাডেমির সামনের রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেট বন্ধ থাকবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষের সব ধরনের অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।
নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।
নববর্ষ উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।