কিশোরগঞ্জে ইউপি সদস্যের বাড়ি থেকে ১২৮ বস্তা ভিজিএফের চাল জব্দ
Published: 21st, March 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ইটনায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের বাড়ি থেকে ভিজিএফের ১২৮ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বাদলা ইউনিয়নের থানেশ্বর থেকে এসব চাল জব্দ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গরিব ও দুস্থ মানুষের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে সরকারিভাবে ১০ কেজি চাল বিতরণ করার জন্য দেওয়া হয়। তবে এই চাল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রোকন উদ্দিনের বাড়িতে অবৈধভাবে মজুত করে রাখা হয়েছিল। খবর পেয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাঁর বাড়ির টিনের ঘর থেকে ৩০ কেজি ওজনের ১২৮ বস্তা চাল উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। ইউপি সদস্য পলাতক রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আদিলুজ্জামান ভূঁইয়া ও ইউপি সদস্য রোকন উদ্দিন নিজের লোকজন দিয়ে একাধিকবার চাল উত্তোলন করে অবৈধভাবে মজুত করে রাখেন।
এ বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য রোকন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এই অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আদিলুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, জনগণ নিজের ইচ্ছায় চাল বিক্রি করেছেন, যা একজন ব্যবসায়ী কিনেছেন। হয়তো ইউপি সদস্য সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে চাল কিনে নিয়েছেন।
ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন জানান, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘বিষয়টা সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস য র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যতিক্রমী একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সেশনজট মুক্ত খুবি
ভর্তি পরীক্ষা তুমুল প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শুরু হয় স্বপ্নের পথচলা। কিন্তু সেই স্বপ্ন সেশনজটের কবলে পড়ে অনেক সময়ই রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। সেশনজট শুধু একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনেই বিঘ্ন ঘটায় না, বরং এর প্রভাব পড়ে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও আর্থ-সামাজিক জীবনেও।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষা জীবন শেষ না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী কর্মজীবনে প্রবেশ করতে দেরি করে ফেলেন। ফলে বাড়ে মানসিক চাপ, আর্থিক অসন্তোষ, এমনকি আত্মহননের মতো চূড়ান্ত পরিণতির দিকেও ঠেলে দেয় অনেককে।
তবে এ বাস্তবতায় এক ভিন্নচিত্র খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি)। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সেশনজটে নাকাল, সেখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সময়মতো শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের কাছে এক স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যেখানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক করতে পারেনি, সেখানে খুবি নির্ধারিত সময়ে মধ্যেই তার একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সব কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এর পেছনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুপরিকল্পিত ও বাস্তবভিত্তিক কেন্দ্রীয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার।
আরো পড়ুন:
খুবিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু বৃহস্পতিবার
হল না খোলায় ক্যাম্পাসে অবস্থানের ঘোষণা কুয়েট শিক্ষার্থীদের
প্রতিটি ডিসিপ্লিন সে ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে নির্ধারিত সময়েই ক্লাস, পরীক্ষা সম্পন্ন করছে। এই পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল একাডেমিক ক্যালেন্ডার শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্যও একটি রোল মডেল হয়ে উঠেছে।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ছাত্র রাজনীতির কারণে একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। সেখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। এই নীতিমালাও একাডেমিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রিন্ট মেকিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী খাইরুন নাহার বলেন, “বাংলাদেশে সময় নষ্ট করাটা যেন শিক্ষা জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বুঝেছি, সময়ের মধ্যে থেকে স্নাতক শেষ করাও সম্ভব। এটা আমার জীবনের গতি বদলে দিয়েছে।”
বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমার পরিবার সবসময় ভেবেছে আমি কত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটাব। কিন্তু এখানে এসে দেখেছি সময়মতোই সব শেষ হয়। পরিবারের দুশ্চিন্তাও কমেছে।”
সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মালাচেং রাখাইন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার আগে সেশনজট নিয়ে অনেক ভয় ছিল। কিন্তু এখানে এসে বুঝেছি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার বাস্তবেই কার্যকর।”
বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী তান্না তাবরিজ জিমহা বলেন, “আমরা নির্দিষ্ট সময়েই সব কোর্স শেষ করতে পারি। এতে করে স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্যও বাড়তি সময় পাওয়া যায়, যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কম হয়।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এসএম মাহবুবুর রহমান বলেন, “খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে একাডেমিক ক্যালেন্ডার পরিচালনা করে। কোনো ডিসিপ্লিন আলাদা করে নিজের মতো করে সময় নির্ধারণ করতে পারে না। ফলে সার্বিক একাডেমিক কার্যক্রমে সুশৃঙ্খলতা বজায় থাকে।”
তিনি বলেন, “আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য সেশনজটমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চেয়েছি। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পারে এবং কর্মজীবনে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে। এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে সমাজ ও পরিবারেও।”
ঢাকা/হাসিব/মেহেদী